ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোদাগাড়ীতে বন উজাড় করে চাষাবাদ

সামাজিক বনায়নে লোভের থাবা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

সামাজিক বনায়নে লোভের থাবা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ গোদাগাড়ী উপজেলার ফরাদপুরে সরকারের সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে এবার লোভের থাবা পড়েছে প্রভাবশালীদের। বন উজাড় করে সেখানে ফসল চাষাবাদের চেষ্টা চালাচ্ছে প্রভাবশালী এ চক্রটি। সম্প্রতি বনের উপকারভোগীরা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সরেজমিনে উপেজেলার ফরাদপুর এলাকায় পদ্মার চরের বনটিতে গিয়ে উপকারভোগীদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। উপকারভোগীরা জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বনের গাছ কেটে ও বনে অগ্নিসংযোগ করে ফাঁকা জমি দখল শুরু করেছে। তারা সেখানে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ শুরুও করছেন। এদের সঙ্গে উপকারভোগীদেরও একটি অংশ জড়িত। জানা গেছে, ‘সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন’ প্রকল্পের আওতায় বিভাগীয় সামাজিক বনবিভাগ ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪০ হেক্টর জমিতে এক কোটি পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে বনটি গড়ে তোলে। এলাকার ২৪৯ ব্যক্তিকে উপকারভোগী করে সেখানে রোপণ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির এক লাখ ৩২ হাজার গাছ। গাছগুলো এখন বেশ বড় হয়েছে। এ অবস্থায় সেখানে নজর পড়েছে প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের। উপকারভোগীদের অভিযোগ, গেল গ্রীষ্মে ফরাদপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন কেটু, আজাহার আলী ও আমিনুল ইসলামসহ স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী বনের পশ্চিম, পূর্ব-পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তর কোণে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ করেন। তাদের সঙ্গে আছেন উপকারভোগী আল্লাম হোসেন, জাহির হোসেন, সারোয়ার হোসেন নিপু। বর্ষা মৌসুমে বনে পানি প্রবেশ করলে উপকারভোগীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা নৌকায় করেও গাছ কেটে নিয়ে যান। কয়েক মাসের ব্যবধানে বনের ৩০০ বিঘা জমি ফাঁকা হয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তারা সেখানে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে কলাই, ৭৫ বিঘা জমিতে খেসারি ও ২৫ বিঘা জমিতে মসুর ডালের চাষাবাদ করেছেন। কিছু জমির ফসল এরই মধ্যে কাটতে শুরু করেছেন তারা। বনের নিযুক্ত পাহারাদার আবদুল হাকিম ও উপকারভোগী রমজান আলী, জবিয়ার রহমান এবং সাবিয়ার হোসেন জানান, ১০০ বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ফসল হবে। এই টাকার অংশের ভাগ পেতে স্থানীয় বন কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ করতে গেলে উল্টো তাদেরই হুমকি দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় বন সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, গোদাগাড়ী থানায় অভিযোগ করা হলে বিষয়টি দেখভালের জন্য প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পার্থ প্রতীমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি কোন ব্যবস্থা তো নিচ্ছেনই তা বরং বন উজাড়কারীদের সঙ্গেই তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যোগাযোগ করা হলে উপজেলা বন কর্মকর্তা ময়েন উদ্দিন দাবি করেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। উপকারভোগী নয়, এমন ব্যক্তিদের জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামীতে বন সম্প্রসারণ করা হবে। সেখানেও নতুন কিছু উপকারভোগীর সৃষ্টি হবে। ওই তালিকায় তাদের নাম আসতে পারে। এ জন্য তারা জমি দখল করে চাষাবাদ করছেন। তবে তারা বনে অগ্নিসংযোগ করেছেন বা গাছ কেটেছেন কী না এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
×