ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নূরজাহান বেগম অসংখ্য সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়েছে যার হাতে

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১ জানুয়ারি ২০১৭

নূরজাহান বেগম অসংখ্য সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়েছে যার হাতে

২০১৬ সালে অনেক বরণ্য মানুষকে আমরা হারিয়েছি। এই হারানোর তালিকায় নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমও আছেন। ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুরের চালিতাতলীতে জন্ম নেয়া এই মহীয়সী নারী ‘বেগম সম্পাদক’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। এর বাইরে তিনি প্রখ্যাত সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের মেয়ে এবং প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের সহধর্মিণী ছিলেন। নারী সাংবাদিকতা, নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্যে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিলো। বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামালকে যদি আমরা একটি মাইলফলক হিসেবে ধরি, তাহলে বলতে হবে নূরজাহান বেগম তাঁদেরই উত্তরাধিকার বহন করেছিলেন। ‘বেগম’ পত্রিকা ছিলো সত্যিকার অর্থেই নারী জাগরণের মুখপাত্র। এ পত্রিকার মাধ্যমে নূরজাহান বেগম নারীদের লেখালেখির ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। নারীদের সংকীর্ণ জগৎ থেকে প্রসারিত জীবনে তুলে আনার প্রয়াস তাঁর আজীবন ছিলো। নূরজাহান বেগম তাঁর পিতা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছাড়াও অসংখ্য গুণী মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলাম, সুফিয়া কামাল, ইব্রাহিম খাঁ, কাজী মোতাহের হোসেন, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন প্রমুখের সান্নিধ্য তাঁকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্যে তিনি ছিলেন কালের সাক্ষী। বেগম পত্রিকা ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রতিনিয়তই সময়ের সাথে এ পত্রিকাটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন নূরজাহান বেগম। যার ফলে যে সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে তাঁর কলম সরব ছিলো, যে দেয়াল ভাঙার জন্যে তিনি কাজ করেছেন, সেই পরিবর্তন তিনি স্পষ্ট দেখে যেতে পেরেছেন। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘একটা সময় ছিল যখন নারীরা পর্দা ছাড়া বের হতে পারতেন না। তাঁর নিজস্বতা বলতে কিছু ছিলো না। বিয়ের আগেও স্বাধীনতা ছিলো না। বিয়ের পর তো স্বামী, শ্বশুরবাড়ির কথামতো তাঁকে চলতে হতো। সেই অবস্থা থেকে নারীরা কিছুটা হলেও বের হয়ে আসতে পেরেছেন। নারী তাঁর নিজের যোগ্যতা দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। সব পেশায় নারীর অংশগ্রহণ সমাজে বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আকাশপথ, নৌপথ ছাড়াও সব পেশাতেই তো তাঁরা রয়েছেন। তার পরও আমার মনে হয় নারীকে আরও সুযোগ-সুবিধা দেয়া উচিত। তাহলে সামাজিক উন্নয়ন দ্রুত ঘটবে। যোগ্যতার সুবিচার করতে হবে তাঁদের।’ বর্তমানে যারা নারীর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন, তাদের জন্যে নিঃসন্দেহে নূরজাহান বেগম আদর্শ। নয় দশকের ইতিহাস বুকে নিয়ে দেশভাগের আগে থেকে পথচলা নূরজাহান বেগম তাঁর কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ১৯৯৯ সালে বেগম রোকেয়া পদক, ২০০২ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুনন্নেসা মাহাবুবুল্লাহ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, রোটারি ক্লাব থেকে পেয়েছেন স্বর্ণপদক। কীর্তিমান এ নারী এ বছরের ২৩ মে পরলোক গমন করেন।
×