ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাসুদ মুস্তাফিজ

স্বাধীনতা আমাদের অংহকার, সংকট উত্তরণের প্রেরণা

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

স্বাধীনতা আমাদের অংহকার, সংকট উত্তরণের প্রেরণা

মানব অস্তিত্ব সূচনালগ্ন থেকেই সংগ্রাম-মুক্তি আর সঙ্কটে নিমজ্জিত। সঙ্কটের মধ্য থেকেই মানুষ উত্তরণের উপায় খোঁজে বাঁচার পথ খোঁজে- নতুন প্রত্যাশায়। বলা যায় সংগ্রামের ভেতর দিয়েই মানব জাতির উন্মেষ। যেমন প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা মানুষকে সংগ্রামী করে তুলেছে আবার বাঁচার কৌশলও শিখিয়েছে। সংশয়-নিঃসঙ্গতার বিপরীতে প্রত্যয়ীভাবনার ভেতর মানুষ তার নিজের বিশ্বাস জীবনাস্তিত্বে টিকিয়ে রাখে। এভাবেই আমাদের আর্থিক-সামাজিক-রাজনৈতিক মুক্তির প্রেরণা সূচিত হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের ভেতর প্রোথিত আছে আমাদের অহঙ্কার-আমাদের গর্ব। আমরা জানি নীলনদ-তাইগ্রিস, সিন্ধু ও হোয়াং হো’র মতো সভ্যতার নির্দশন হয়ত বাংলাদেশে নেই কিন্তু আমাদের আছে একাত্তর আর ভাষা আন্দোলনের মতো বিশাল প্রেক্ষাপট। যা আমাদের ভাষাকাঠামোর নির্মাণশৈলীতে দিয়েছে আলাদা মাত্রার কাব্যিক প্রবণতা। আমরা বলতেই পারি সাহিত্যে এই প্রেক্ষাপট বিশেষ অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধজয় বাংলাদেশের মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এই ইতিহাস বাংলাদেশের অতীত এবং ভবিষ্যতের ইতিহাস হিসেবে যুগ থেকে যুগান্তরে সারা বিশ্বের সকল প্রজন্মকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে সুন্দর প্রজন্মের দিকে নিয়ে যাবে। আর বিশ্ববিবেক বিশ্বচেতনা, আবেগ-অনুভূতির পরির্বতনে পাল্টে যাবে বিশ্বইতিহাস-ইতিহাসের অর্থ বিশ্লেষণ এবং অনুপ্রেরণা। ১৯৭১ সালে সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। সংগ্রামী জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাঙালী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মরিপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের অঙ্গীকার নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাঙালী সংস্কৃতির মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়ার আইয়ুবী ধারার কৌশল-চেতনা এদেশের সামরিক শক্তির মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়। জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদকে নির্বাসিত করেন। পরবর্তীতে জেনারেল এরশাদ অষ্টম সংশোধনী বিল (১৯৮৮) পাসের মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করে বাঙালীর ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার মূলে কুঠারাঘাত করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়টিতে বাংলাদেশের মানুষ প্রবল হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালীর যে অর্জন-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ক্রমে তা হারিয়ে যেতে থাকে। কেননা, এই কালপর্বে সামরিক-বেসামরিক পোশাকে সামরিক একনায়করাই রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। আর সামরিকতন্ত্রের নেপথ্য শক্তি হিসেবে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা স্বৈরাচারের ছত্রছায়ায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলোৎপাটনে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ধর্মের রাজনৈতিক অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পুনর্বাসিত প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার সকল পাঁয়তারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমেছে। জনতার আন্দোলনের চাপেই স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তির লালনকারী সামরিক স্বৈরতন্ত্রের প্রতিভূ জেনারেল এরশাদ ১৯৯০ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এবং তাদের শিখ-ী সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল জনতার আন্দোলনে শিল্পী-সাহিত্যিকরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ২ আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্ব ইতিহাসবিদরা ‘জনযুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন। যুদ্ধ সাধারণত দুই বা ততোধিক রাষ্ট্র তথা সে-সব রাষ্ট্রের সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু পৃথিবীতে বেশ কিছু যুদ্ধের নজির আছে যা প্রথাগতভাবে দুই বা ততোধিক সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে সীমিত না থেখে আপামরজনতার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনতা তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। একেই সাধারণত ‘জনযুদ্ধ’ বা ‘পিউপল ওয়ার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। জনযুদ্ধের এই কৌশল এক ধরনের সামরিক-রাজনৈতিক কৌশল, যা বিংশ শতাব্দীতে প্রথম ব্যবহার করেন চীনের মার্কস- লেলিনবাদী বিপ্লবী ও রাজনৈতিক নেতা মাও সেতুং। বিশ্বের আরও অনেক দেশেই নানা সময়ে জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। যেমন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রায় শতাব্দী-পুরোনো যে-লড়াই চলে আসছে তাকে জনযুদ্ধ হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়। ঠিক ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় দক্ষিণ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা রাজনৈতিক সংগঠন ও সেনাবাহিনী জনযুদ্ধের কৌশল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে। আবার কিউবা, নিকারাগুয়া, ফিলিপাইন, ভারত, নেপালেও এই ধরনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসে বিরল অধ্যায়। ১৯৭১ থেকে ১৯১৬ পর্যন্ত যে সব মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক এবং চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয়েছে তা সন্দেহাতীতভাবে আমাদের আগামী প্রজন্মকে জীবনযাত্রার নতুন মাত্রা যোগ করবে। বাংলাদেশের ৪৫ বছরের এই অর্জন যুদ্ধরোত্তর মানুষের পরম সম্পদ। বাংলার রক্ত-অনুভূতি-বিবেক আর স্বপ্নের ঋণ শোধ দেবার নয়। কোটি বছর ধারণ করবে বাঙালী। হুমায়ুন আজাদের ভাষায়- ‘বাংলার মাটির মতো ব্লাড ব্যাংক আর নেই। একবিন্দু লাল রক্ত দশবিন্দু হয়ে যায় সেই ব্যাংকে রাখার সাথেই’। ৩ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে একটা গণতান্ত্রিক চেতনার আর্দশগত ধারাবাহিকতা ছিল। সেই সুস্থ এবং শুদ্ধ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক চেতনা আরও শানিত হতে পারে এ প্রজন্ম তারুন্যের হাত ধরে। বাঙালী জাতি বীরের জাতি, সবকিছুই অর্জনের ভেতর দেখতে চায়- দেখতে ভালবাসে। সুকান্তের ভাষায়- অবাক পৃথিবী তাকিয়ে রয়/জ্বলে পোড়ে ছাড়খার/তবু মাথা নোয়াবার নয়। প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে বিশ্ব, বিশ্বের প্রেক্ষাপট-রাজনীতি আর বিশ্ব অর্থনীতি। এ যাত্রায় আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বপ্রেক্ষাপটে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের মতো শক্তি আর অনুপ্রেরণার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আর্থিক ঝুঁকি শেয়ার, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং বিশ্বব্যাপী বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারি। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সক্রিয় অবস্থান নিতে পারলে তবেই আমরা বিশ্ব মডেলে পরিণত হব। আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং গৌরবের অধ্যায় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। যে কারণে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এই যুদ্ধের আত্মত্যাগ ও দৃঢ়তা এক বিপুল শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই সংগ্রামের কাহিনী ইতিহাসের এক বিরল অধ্যায়ের সূচনা করেছ্।ে কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও এর সঠিক চিত্র তুলে ধরতে আমরা সক্ষম । একটি রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য যে জাতির জন্মলাভ তার হইনি সঠিক ইতিহাস-চিত্র-তথ্য প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছি তার চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে! হয়ত এ কারণেই আমাদের মনোবল, দৃঢ়তা ও সাহসিকতা উপলব্ধি করতে বিদেশীরা ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের এই মহামূল্য অর্জন আজও সঠিক মূল্যায়িত হয়নি- হচ্ছেও না। প্রতিফলিত হচ্ছে না আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত আশা-আকাক্সক্ষা। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে কার্যকর করতে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময়। ৪ আজ এই স্বাধীনতা আর মুক্তি সংগ্রাম চেতনা বাংলাদেশের ভূখ-ের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বচেতনার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আবার এমনি করে মহান ভাষা আন্দোলন আজ বিশ্বব্যাপী আর্দশিক রূপে গ্লোবালচেতনায় পৃথিবীতে আরেক প্রগতির নান্দনিক সৌষ্ঠবে ভাষার প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেখা যায় যে, স্বাধীনতা একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মানুষের কাছে স্বার্থ হাসিলের উপায় হয়ে দেখা দিল- মূলত এরাই মুক্তিযুদ্ধ বিপক্ষ শক্তি। তরুণদের অপশিক্ষায় রূপান্তরিত করে সৃষ্টি করছে বিভিন্ন সংগঠন- যেমন হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টায় এসব সংগঠন সক্রিয়। এরাই আমাদের সোনার দেশে বিদেশী হত্যা আর হায়ার্ড করা অপশক্তির প্রয়োগে চালাচ্ছে অপকর্ম আর হত্যাযজ্ঞ। এভাবেই দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান হচ্ছে। এই উত্থানের বিরুদ্ধে আজ সোচ্চার আমাদের নতুন প্রজন্ম। আমাদের ভয় তাড়ানোর অঙ্গীকারের প্রত্যয় এখন তরুণ প্রজন্মের কাছে নবউদ্দীপনায় জাগ্রত যার উদাহরণ আমরা দেখি শাহবাগের গণজাগরণ। নিশ্চয়ই এই গণজাগরণ মঞ্চ কোন রাজনৈতিক দলের অনুগত নয়- আমরা লক্ষ্য করেছি যে কোন জাতীয় ইস্যু তথা বাঙালী জাতির আত্মপরিচয়ে বলিয়ান হয়ে তারা দেশের জন্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করেছে। আমরা মনে করি আমাদের বিশাল অর্জনের স্বাধীনতা আর ভাষা আন্দোলনের অর্জনই এই শিক্ষা দিয়েছে। হলি আর্টিজান, গুলশান ট্র্যাজেডি আর নাসিরনগরের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়- বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করবার অপকৌশল মাত্র। অন্যদিকে ১৯৭১ এর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আমাদের জাতীয়চেনায় উজ্জীবিত করবে বারবার। দেশের চরম ক্রান্তিকালে এসব অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ভাবনার অনুষঙ্গ আমাদের বহুদূর নিয়ে যাবে এতে কোনই সন্দেহ নেই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অহংকারের রসায়নে চিরজাগরণ দেশের মানস গঠনের ক্ষেত্র তৈরি করেছে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে এক দুর্নিবার তাগিদ সৃষ্টি করেছে- এই ভাবনা সর্বৈব অহংকারের বিষয়। ৫ স্বাধীনতা আমার তিন বছরের ছোট। স্বাধীনতার সঙ্গে আমি অনেক কিছুর মিল খুঁজে বেড়াই- আকাশ, বাতাস, মাটি আবার আমার পাশে- দূরে সবাইকে লক্ষ্য করি। কোন কিছুর সঙ্গে মিল খুঁজে পাই না- নিজের সঙ্গে প্রচুর বোঝাপড়া। জানি অনেক অকুতোভয় বাঙালীর রক্তের বিনিময়ে আমরা এই কাক্সিক্ষত মানচিত্র পেয়েছি তাঁরা নিশ্চয়ই ঐতিহাসের মহানায়ক। আমরা মানচিত্র পেয়েছি কিন্তু প্রত্যাশিত বাকস্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। এখন আবার সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর। সেই শক্তি অর্জন করতে হলে এবং শক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমাদের টিকে থাকতে হলে শুধু রাজনীতির একক প্রয়োজনের কাছে আত্মসমর্পণ করলে চলবে না, তার জন্য চাই, রাজনীতি ও সংষ্কৃতির এমন এক মেলবন্ধন, যা আমাদের সামাজিক বিপ্লবের দিকে প্ররোচিত করবে এবং আমরা নতুন চরের মতো জাগরণের একটি আবাস তৈরিতে সক্ষম হব। স্বাধীনতাই সকল প্রাপ্তির উৎস এ কথা মনে করে আমাদের প্রত্যয়ী হব আর প্রত্যাশা, প্রাপ্তি, অনাগত দিনের স্বপ্নের অপেক্ষায় দিন গুনব। আমরা জানি বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যয়ী। আমাদের বিশ্বাসের শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। গ্রহণের কাল কাটবেই একদিন-আমাদের হাজার বছরের বাঙালীর সংগ্রামের ইতিহাস অবশ্যই মহাসত্যে পরিণত হবে। আমাদের সন্তানরা ‘দুধে-ভাতে’ থাকবে। শোষণ বঞ্চনাহীন সাম্যবাদের এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে সে স্বপ্ন আমরা লালন করতেই পারি। ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ভূখ-ে স্বাধীনতার মুক্ত বাতাস গ্রহণ করবার আকুল প্রতীক্ষায় আমরা। বাংলাদেশ একটা ক্রান্তিকাল পার করছে- বলতে গেলে পুরো বিশ্বব্যাপী সঙ্কটের মহূর্তে আজ আমরা নিমজ্জিত-এই সঙ্কট উত্তরণে। মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত শক্তি বাংলাদেশের দিন যাপনের যে অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তহীনতা সৃষ্টি করেছে তা কখনই এদেশের মাটিতে টিকবে না। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দেশের উচ্চতর আদালত যে সব রায় দিয়েছে অবশ্যই স্বাধীনতার ৪৫ বছরের ইতিহাসে তা নাক্ষত্রিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। স্বাধীনতার নবীন-প্রবীণ প্রজন্ম নিশ্চয়ই নতুন উদ্যোগে আর নতুন উদ্যমে এদেশকে পৌঁছে দেবে এক শক্তিশালী সমৃদ্ধির পথে- আমরা এই অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি।
×