ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাদিক ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ ও তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধ ও তরুণ প্রজন্ম

প্রজন্ম প্রজন্মান্তরে একটা ঘটনা আর ঘটনা থাকে না; তা ধারণা হয়ে যায় ধীরে ধীরে তা এক ধরনের তথ্য হয়ে যায়। এর বিভিন্ন ধরনের বাচন সৃষ্টি হয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ একটা ঘটনা মাত্র নয় এর রয়েছে মহাকব্যিক ব্যঞ্জনা। মুক্তিযুদ্ধ এক ভয়াবহ ইতিহাস পাকিস্তানী জান্তা আর এদেশে তাদের মিত্রদের জঘন্যতম বর্বর কাহিনীর আর এরপরে নিরস্ত্র মানুষের সাহসিক প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে বিজয় লাভের অনন্য নজির। মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্ব দিয়েছে, অখ- ভৈাগোলিক অবস্থান দিয়েছে, আত্মপ্রত্যয়ে সুদৃঢ় হওয়ার বোধ দিয়েছে। মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে, পাঠ্যপুস্তক, বিভিন্ন বই, পত্রিকা, সাহিত্যে ইতিহাসের নির্মাণ ঘটে। বর্তমান যুগে মিডিয়াও ইতিহাস তুলে ধরতে অনেক শক্ত ভূমিকা পালন করে। এই সমস্ত মাধ্যমগুলোর একটা ভালো দিক থাকতে পারে সত্য ঘটনা তুলে আনতে। নিউ হিস্টরিসিজমের সাহায্য নিয়েও আমরা প্রকৃত ইতিহাস জানতে চেষ্টা করতে পারি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের একটি খ-িত ইতিহাস পেয়েছি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস; বিভিন্ন জেলা, থানা, গ্রাম, গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা করুণ, মর্মন্তুদ কহিনীগুলো সমষ্টিগতভাবে কোনো বইতে লিপিবদ্ধ হয়নি যাকে মূল ধরে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্যটি নতুন প্রজন্মদের জানাতে পারি। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের আগের ঐ সময়ের ও যুদ্ধকালীন ঘটনাপ্রবাহ সঠিকভাবে, সত্যরূপে, স্বচ্ছরূপে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করা জাতির জন্য একটি খুব জরুরী দায়িত্ব। যুদ্ধ হয় শত্রুর বিরুদ্ধে, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে, কুচক্রী মহলের চক্রান্তের বিষবাষ্পের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় হাজার বছরের বঞ্চনা, নিপীড়ন, অত্যাচার, নিষ্পেষণ আর একটি মুক্তিপাগল জাতিকে মুক্ত করার বীরত্ব গাথায় বিরচিত। বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু এক্ষেত্রে সমার্থক দুটি নাম। বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর মর্যাদা দান খুব স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মহানায়কের আগমন না ঘটলে সহস্র বছরের মতো আমরা হয়ত এখনও স্বাধীনতা বঞ্চিত, অধীন, পরাজিত কোন জাতি হিসেবেই থেকে যেতাম। আমাদের, মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার প্রবল আকাক্সক্ষাকে, হাজার বছরের গ্লানি দূর করে বঙ্গবন্ধু যে অমিয় বাণী আর ক্ষুরধার রাজনৈতিক মেধা, প্রজ্ঞা, নির্দেশনা, সঠিক পরিচালনা দান করে আমাদের দমিত স্পৃহাকে জাগ্রত করে তৎকালীন পাকিস্তানের অশুভ শাসন, শোষণের ও নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে পুরো জনমতকে একাত্ম করে একটি জাতিকে কণ্টকময় শেকল থেকে মুক্তির অক্ষয় স্বাদ দান করেছেন তা ইতিহাসের পাতায় চির জাগ্রত হয়ে থাকবে। নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দেবার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে আছে; তা আরও বেগবান করতে হবে। যোগ্য নেতৃত্বে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ আর চেতনাকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বর্তমান সরকারের যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প তা করতে পারে এই নতুন প্রজন্ম; তাদের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা আর সেই সঙ্গে থাকতে হবে পরিপূর্ণ দেশপ্রেম- অনলাইন যেমন মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে পারে আমরা দেখেছি এর বিপরীত চিত্রও। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাসকে বিকৃত করে নতুন প্রজন্মকে ভুল পথে নেয়ার জন্যে এক ধরনের অসুস্থ ও কায়েমি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাই অনলাইনে তরুণদের সঙ্গে একযোগে মুক্তিযুদ্ধের আসল চিত্রটি অঙ্কনে অগ্রজ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টজনদের ও প্রত্যক্ষদর্শীদেরও কাজ করে যেতে হবে। সমীক্ষা মতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেশিরভাগই ১৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাই হাজারো অনলাইন ও সাইবার তথ্যের ভা-ার থেকে তারা যেন প্রকৃত সত্যটি জানতে পারে সে জন্য সতর্ক থাকা জরুরী। নতুন প্রজন্মের মেধা, মননে ও চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার উন্মেষ যথাযতভাবে ঘটাতে হবে কারণ এরাই ভবিষ্যতের এ দেশের কান্ডারি হবে। তবে বাংলাদেশের মূলত রাজনৈতিক অতীত নিয়ে যে ধোঁয়াশা ছিল প্রযুক্তি আমাদের ইতিবাচকভাবে তা জানিয়ে দিচ্ছে আবার এর বিরুদ্ধে এক দূরভিসন্ধি যুব সমাজকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাবার জন্য মরিয়া; যা বেশ কিছুদিনের মধ্যে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু প্রতিহিংসা পরায়ণ, বিপথগামী কর্মকা- বিচলিতভাবে, আতঙ্ক জাগিয়ে আমাদের জাতীয়তার অস্তিত্বের গোঁড়ায় অল্প হলেও মোটা দাগে নাড়া দিয়েছে। সত্যকে মিথ্যারূপে মন্ত্রযপে কিছু নিরীহ মানুষজনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কালো পথের কুচক্রীরা আমাদের যথেষ্ট অমানিশার দিকে ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। তাই এখন এটা স্পষ্ট যে, প্রযুক্তি যেমন নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য, দেশপ্রেমী, বাঙালী জাতীয়তায় বিশ্বাসী নতুন ও সত্য চিন্তার সমাজ গড়তে সাহায্য করতে পারে তেমনি এটির বিপরীতে দেশ বিরুদ্ধ অপঘাত সৃষ্টি মানসিকতারও জন্ম দিতে পারে এ ব্যাপারে সরকার, দেশপ্রেমী, নিরাপত্তাকামী সুধীজনদের সম্যক ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের এখনই চূড়ান্ত সময়। যে রক্ত, ত্যাগ, বীরত্ব, অসীম মর্মযাতনার ফলশ্রুতি এই স্বাধীন বাংলা তা ভুলে যাওয়া নয় আরও ব্যাপকভাবে আমাদের তরুণদের মাঝে প্রবেশ করাতে হবে; কারণ আমরা যদি নিজেদের মাঝে দ্বন্দ্ব, হিংসা, অবিশ্বাস নিয়ে থাকি তবে ওঁৎ পেতে থাকা আমাদের নিয়ত শত্রুরা আমাদের খুব সহজেই আরও দুর্বল করে দিবে। অনৈক্যের, ভেদাভেদের ও বিভাজনের যে অপচেষ্টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বিশ্বাস করা যায় তা গুটিকয়েক পথভ্রষ্টের দেশ বিরোধিতার কুমতলব। কিন্তু সর্বোপরি আমাদের অমিত সম্ভাবনার তরুণরা যদি আমাদের গৌরবময়, আত্মত্যাগে মহীয়ান, সর্বস্বত্যাগী ইতিহাসের সত্যকে হৃদয়ে পরিপালন করে তবে তারা নিজেদের কুমন্ত্রণা, মিথ্যা, অপপ্রচার, অন্যায় থেকে বিরত রেখে দেশপ্রেমী হয়ে তাদের জীবনীশক্তির বিভায় নতুন শিখা প্রজ্বলিত করে আলোকিত করবে এই দেশকে যার আলোতে পৃথিবীর নানা বঞ্চিত, ভঙ্গুর, নিপীড়িত, অসহায় মানুষ ও দেশ আমাদের কাছ থেকে নতুন করে দীক্ষা লাভ করে সত্য, সুন্দর, ন্যায়ের আলোকে উজ্জ্বল হবে যেমনটা আমরা ১৯৭১ সালে একবার বিস্ময়ে সারা বিশ্বকে দেখিয়েছিলাম। যুগের পর যুগ বাংলাদেশে মিথ্যা ইতিহাস বাস্তবায়নের অনেক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলেছে। মুক্তিযুদ্ধকে গ-গোল বলেও প্রচার করা হয়েছে। আমরা যে একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি তা যেমন তরুণরা এখন বুঝতে শিখছে তেমনি স্বাধীনতা না পেলে কি হতো আরও ভালোভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। অনেক প্রজন্মই মুক্তি যুদ্ধের প্রকৃত সত্যটি জানতে পারেনি। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার তাই তাদের প্রধানতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা, বোধ ও সত্যরূপটি শুধু নিষ্ঠা আর যতেœর সঙ্গে নয় পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাংগঠনিকভাবে তরুণদের মাঝে সঞ্চার করা। আমরা কনসার্টে উপচে পড়া ভিড় দেখি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরমুখী মানুষের সংখ্যা নগণ্য; দায়সাড়া গোছের, আখের গোছানোর জন্য, প্রতিষ্ঠা পাবার খায়েশে কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মাতামাতি করতে দেখা যায়; আবার মুক্তিযুদ্ধমনা নয় কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার নকল বেশ ধরে অনেক স্বার্থান্বেষী লাভবান হওয়ায় সচেষ্ট। এটিকেও তরুণ সমাজ ভালো দৃষ্টিতে দেখে না। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের যে মর্যাদা, আত্মবিশ্বাস, অহংকার, সততার শিক্ষা, মাথা উঁচু করে চলার উজ্জীবনী শক্তি, ন্যায় বলার, প্রতিবাদী হওয়ার ও দেশের জন্যে কিছু করে যাবার অধিকার দিয়েছে তা রোধ হয়ে গেলে তরুণ সমাজ দারুণভাবে নিরাশ হবে। নতুন প্রজন্ম যারা দেশ গড়ার কারিগর তারাও কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলবে। এক্ষেত্রে অগ্রজদেরও ভূমিকা আছে, সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদেরও আরেকবার যুদ্ধের প্রত্যয়ে নতুন সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা আর সত্যিকারের চিত্রটি পরিষ্কার করে তুলে ধরে নবীন চেতনাকে স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতাকে তুলে ধরে স্বাধীনতাকে তাদের হৃদয়ে ধারণ করার মন্ত্র শিখানোর সময় শেষ হয়ে যায়নি। বাংলার মানুষ যে মুক্তিপাগল তা গণজাগরণ মঞ্চে এত মানুষের ভিড় প্রমাণ করেছিল। আমাদের নিজস্ব জাতিসত্তার ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অটল। আমাদের স্বাধীনতা লাভের পিছনে আমরা কিছু আদর্শ নিয়ে এগিয়েছিলাম বর্তমান প্রজন্ম সেই আদর্শগুলো ভালোভাবেই উপলদ্ধি করতে পারে। যদি সেই আদর্শ, স্বাধীনতার সুফল, বিবেকবান, সত্যিকারের দেশপ্রেমী, ত্যাগীরা না ভোগ করতে পারে আর যে সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, নিরাপদ ও সোনার বাংলার স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন তা থেকে যদি আমরা কক্ষচ্যুত হই তবে নবীন প্রজন্ম হতাশ হয়ে পড়বে। যোগ্য লোক যদি যোগ্য স্থানে না যায়; তোষামোদকারী, সুবিধাভোগীরা যদি প্রকৃত দেশপ্রেমীদের স্থান দখল করে নেয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা যদি খর্ব হয়ে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেমন ভীষণভাবে ক্ষতবিক্ষত হবে তেমনি তরুণদের মাঝে একধরনের অনীহা কাজ করবে যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একথা ঠিক আমরা বেশ কয়েক বছরে অর্থনৈতিক, সামাজিক, অবকাঠামোগত উন্নয়নের সূচকে অনেক দূর এগিয়ে গেছি; কোটি কোটি বেকারের দেশে এ এক বিরাট সফলতা কিন্তু অর্থনৈতিক ইতিবাচকতার সঙ্গে কিছু অনিষ্টকারী মহলের যোগসাজশে দুর্নীতি বেড়েছে, প্রশাসন যন্ত্রের যেমন অনেক ভালো ভূমিকা আছে তেমনি তাদের অদক্ষতাও আমাদের ভুগিয়েছে। মনে রাখতে হবে এখনকার তরুণ সমাজ একটি আধুনিক ও গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করছে তাই তারা অনেক বেশি তুলনামূলক উন্নয়নের ব্যাপারগুলো ও সেই সঙ্গে দেশপ্রেমের ব্যাপারেও সজাগ। তাই তাদের তুষ্ট রাখা, অগ্রগামী রাখা এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে দেশপ্রেমের ব্যাপারে আরও একনিষ্ঠ রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে আছে একটি অশুভ মহল যারা তরুণদের বিভক্ত, দ্বিধান্বিত ও বিপথে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যস্ত; তাদের প্রতিরোধ করা আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। এতোগুলো জটিল বিষয় সামলে একটা সরকারের পথ চলা সত্যিই কঠিন; কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব গুণে আমরা অনেক ভয়াবহ সঙ্কট কাটিয়ে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলছি। দেশ এগিয়ে যাবে; অনেক দেশ যুদ্ধাবস্থা কাটিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদা ও সার্বিক সফলতা পেয়েছে; আমরাও সেই কক্ষপথে রয়েছি। কিন্তু আমাদের সব অর্জনই বিফল হবে যদি আমরা যে লাখ লাখ শহীদরা একাত্তরের যুদ্ধে নির্মমভাবে জীবন দিয়েছিলো; যে লাখ লাখ মা বোনরা লাঞ্ছিত হয়েছিল তাদের আগামীর বাংলাদেশের ইতিহাসে সঠিকভাবে মূূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হই। মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শগুলো যতদিন আমরা ধরে রাখতে পারব আমরা জাতি হিসেবে ততই টেকসই ও অন্য দেশের জন্য অনুপ্রেরণা হব। বাঙালী জাতি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের সমস্ত অপশাসন, শোষণ, বৈষম্য ও ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে তাই কোন বাধাই আমাদের কাছে বাধা হতে পারে না। যে মহান আত্মত্যাগ, বিসর্জন, বীরত্ব দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছি তা আমাদের বর্তমান সময়ের সঙ্কটগুলো মোকাবেলায় যাতে প্রেরণা হয়ে আসে তা গভীরভাবে চর্চা করতে হবে; তাহলে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের অমলিন স্মৃতি কোনদিন বিস্মৃত হবে না। বর্তমান প্রজন্ম মাথা উঁচু করে চলতে চায়, তারা কারো মুখাপেক্ষী হতে চায় না, তাদের মেধা, জ্ঞান, পারদর্শিতা অন্য যে কোন জাতির সঙ্গে তুলনীয়। বর্তমান সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মোকাবেলা করে জয়লাভ করেছে- এই অদমনীয় নির্ভীকতা আমাদের তরুণ প্রজন্মের মাঝেও আছে তার সঙ্গে আছে মুক্তিযুদ্ধের হার না মানা চেতনা তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাঋদ্ধ আমাদের নানান শ্রেণীর অবিচল ও সুদক্ষ তরুণরা একদিন বাংলাদেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত করবে তা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
×