ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা বাড়ছে ॥ বছরে ২০ লাখ নতুন কর্মী শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৭ অক্টোবর ২০১৬

দেশে কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা বাড়ছে ॥ বছরে ২০ লাখ নতুন কর্মী শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে

এম শাহজাহান ॥ প্রতিবছর দেশে ২০ লাখ নতুন কর্মী দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। বিপুলসংখ্যক এই কর্মী বাহিনীর প্রায় ৪৪ শতাংশের কর্মসংস্থান হচ্ছে কৃষিতে। আর শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের হার মাত্র ২০ ভাগ। তবে কর্মংসংস্থান সৃষ্টিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সেবা খাত। এ খাতে প্রায় ৩৭ ভাগ কর্মী নিয়োজিত আছেন। তবে সবচেয়ে ভাল খবর হলো, বর্তমান দেশে ১৫ বছরের অধিক বয়সী শ্রমশক্তি রয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ। দেশে মোট জনসংখ্যায় কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে যা ২০৪৩ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। অর্থনীতি সম্প্রসারণের জন্য এ সুযোগ একবারই আসে। মানব মূলধন হিসেবে অর্থনীতিতে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। জনমিতির এ সুবিধা পেতে শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সরকারী-বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হওয়ার কারণে কর্মসংস্থানের হারও ধীরে ধীরে বাড়ছে। কমে আসছে অতি দারিদ্র্যের হার। যদিও প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক নতুন কর্মী শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ পেলেও বেকার মানুষের সংখ্যা কম নয়। দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে এই বেকার জনশক্তি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থ বিশেষজ্ঞরা। আর এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এখনও কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এরপর সেবা খাত এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশের শিল্প খাত। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে শ্রমশক্তির অধিকতর অংশগ্রহণ ও মূলধন মজুদ বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি চাহিদা বৃদ্ধি উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে। অন্যদিকে উচ্চতর আয়ের সুফল সর্বজনীন করতে লক্ষ্যভিত্তিক পুনর্বণ্টনমূলক কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, এছাড়া ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য আবাসভূমি তৈরির লক্ষ্যে সকল কর্মকা- হতে হবে পরিবেশবান্ধব। সর্বোপরি, ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ও কর্মোদ্যম সৃষ্টির লক্ষ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকসমূহের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরী হয়ে পড়ছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা শিল্প কারখানার চাহিদা উপযোগী নয় এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার দক্ষতাও এদেশের শ্রমশক্তির নেই। এই সঙ্কট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। জানা গেছে, ভিশন-২১’র পর রূপকল্প-৪১ সামনে রেখে এখন কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে হলে মানবসম্পদ অবস্থানের সূচকটি জাতিসংঘ সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে থাকে। আর তাই এ মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও ক্ষেত্র তৈরিতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনে আবার বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছেÑ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাত উৎসাহিত, প্রশিক্ষিত যুবক, যুব মহিলাদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রচলিত ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীকে সকল জেলায় সম্প্রসারণ, বিদেশে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি এবং কৃষি ও সেবা খাতে কর্মসংস্থানের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা আরও সম্প্রসারিত করা। ইতোমধ্যে কর্মসংস্থানে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরই নির্দেশে পরিকল্পিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে অতিরিক্ত আরও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ভিশন-২১’র পর উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে এবার প্রধানমন্ত্রী রূপকল্প-৪১ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। এই স্বপ্ন পূরণে সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিতে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিদ্যুত ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জমির স্বল্পতা দূরীকরণে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া ফাস্ট ট্র্যাক খাত ১০ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। জানা গেছে, কর্মসংস্থাস সৃষ্টিতে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সাত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে-মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। এদিকে এতসব উদ্যোগের পরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ এখনও কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর করতে হচ্ছে। সরকারের করা স্টেট অব ইকোনমিক করা এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বেকার মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। তবে নারীদের জন্য এ চিত্র কিছুটা বিপরীত। সর্বত্র জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপের কারণে জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধার সৃষ্টি করছে। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে বেসরকারী বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। সরকারী বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে সরকারী বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলাসহ বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা প্রয়োজন।
×