ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক জীবন বদলে দিয়েছে

দিল্লীতে দিনে ২৭ লাখ মানুষ মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৭ অক্টোবর ২০১৬

দিল্লীতে দিনে ২৭ লাখ মানুষ মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন

তৌহিদুর রহমান, নয়াদিল্লী থেকে ॥ দিল্লীর নাগরিকদের জীবন বদলে দিয়েছে মেট্রো রেল। প্রতিদিন ২৭ লাখ মানুষ এখানকার মেট্রো রেলে যাতায়াত করছেন। কোন প্রকার যানজট ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যাচ্ছেন তাদের গন্তব্যে। ঢাকায় মেট্রো রেল চালু হলে দিল্লীর মতোই নাগরিকদের জীবনধারা বদলে যাবে। তবে মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়নে দিল্লীর মতো ঢাকাকেও নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে দিল্লীতে সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধি দল মেট্রো রেল নির্মাণ, চলাচল ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে দিল্লী মেট্রো রেল করপোরেশনের (ডিএমআরসি) অফিস ও মেট্রোরেল জাদুঘরও ঘুরে দেখেন সাংবাদিকরা। এ সময় ডিএমআরসির সহকারী ব্যবস্থাপক নিখিল আনন্দ গিরি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় নিখিল আনন্দ গিরি বলেন, দিল্লীতে মেট্রো রেল চালু হয়েছে ২০০২ সালে। এরপর আরও দুইটি ধাপে মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন তৃতীয় ধাপের প্রকল্প সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন দিল্লীতে ২৭ লাখ মানুষ মেট্রো রেলে যাতায়াত করে থাকেন। তবে তৃতীয় ধাপের প্রকল্প শেষ হলে দিল্লীতে প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ মেট্রো রেলে যাতায়াত করতে পারবেন বলেন তিনি জানান। দিল্লী মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়নে কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে জানতে চাইলে নিখিল আনন্দ গিরি জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় আনাটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা ওই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। এত বড় একটি নির্মাণকাজ সবসময়ই কঠিন। তার ওপর দিল্লী জনবহুল ও কর্মচঞ্চল একটি শহর। নির্মাণের সময় বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন বিভাগের অনুমতি লাগত। এছাড়া জমি অধিগ্রহণ করতেও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নেও এসব সমস্যা হতে পারে বলেও তিনি জানান। নিখিল বলেন, বিশ্বের জনবহুল শহরের জন্যই মেট্রো রেল। তবে এসব শহরে মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়নেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। তবে যে কোন সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করলে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। দিল্লীতে এখন জাপানের আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার (জাইকা) সহায়তায় মেট্রো রেল সম্প্রসারণ কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে দিল্লী মেট্রোর আওতায় চলে আসবে ৩৫০ কিলোমিটার এলাকা। বর্তমানে রয়েছে ২১৩ কিলোমিটার। মেট্রোর কারণে দিনে অন্তত চার লাখ গাড়ি রাস্তায় নামছে না। বছরে জ্বালানির ব্যবহার কমেছে অন্তত ৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৮ টন। যে কারণে একসময় দূষণের শহর হিসেবে খ্যাত দিল্লীতে বায়ুদূষণের হারও কমে এসেছে। শহরে যানবাহনের সংখ্যা কমায় দুর্ঘটনার হারও নেমে এসেছে। দিল্লীর মেট্রো রেলে প্রায় ২০০টি ট্রেন রয়েছে। প্রতিদিন এসব ট্রেন ২ হাজার ৯০০টি ট্রিপ দিয়ে থাকে। প্রতি তিন মিনিট অন্তর অন্তর ট্রেন যাতায়াত করছে। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এসব ট্রেন চলে। স্থান ভেদে ৮ থেকে ৩০ রুপী পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়। তবে যাত্রীদের সুবিধার জন্য মাসিক টিকেটেরও ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখ্য, ঢাকায় চলতি বছর দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। জাইকার সহায়তায় নির্মিত এ মেট্রো রেল ২০১৯ সালে চালুর আশা করা হচ্ছে। তবে ১৯৯৮ সালে দিল্লীতে মেট্রো রেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চার বছর পর ২০০২ সালের ২৫ ডিসেম্বর এটি জনগণের জন্য খুলে দেয়া হয়। দিল্লীর মেট্রো সার্ভিসকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল মেট্রো নেটওয়ার্ক হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে।
×