ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খাগড়াগড়-চক্রী আমজাদের সঙ্গে যোগ ছিল মুসার

প্রকাশিত: ২২:০১, ৭ জুলাই ২০১৬

খাগড়াগড়-চক্রী আমজাদের সঙ্গে যোগ ছিল মুসার

অনলাইন ডেস্ক ॥ জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জে‌এমবি) এবং ইসলামিক স্টেট বা আইএসের মধ্যে যোগাযোগ থাকার বিষয়টি ও পার বাংলায় এখনও স্বীকৃত নয় সরকারি ভাবে। তবে এ পার বাংলায় জঙ্গি সংগঠন দু’টির মধ্যে যোগসূত্রের হদিস পেলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বীরভূমের মহম্মদ মুসাউদ্দিন ওরফে মুসা গ্রেফতার হওয়ার পর। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বর্ধমান স্টেশনে ধরা পড়া লাভপুরের ওই যুবক আইএসের ভারতীয় মডিউলের। তার সঙ্গে খাগড়াগড় মামলায় অভিযুক্ত, জেএমবি সদস্য আমজাদ আলি শেখ ওরফে কাজলের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আমজাদের কাজ ছিল মূলত খাগড়াগড়ে বোমা তৈরির জন্য বিস্ফোরক-রাসায়নিক সরবরাহ করা। এমনটাই জানা ছিল গোয়েন্দাদের। আমজাদের মাথার দাম ছিল ১০ লক্ষ টাকা। ২০১৪-র ১০ নভেম্বর আমজাদকে গ্রেফতার করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তার পর থেকে জেলেই রয়েছে সে। এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, ‘‘আমজাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার প্রমাণ পেয়ে আমরা মুসাকে জিজ্ঞেস করি। ও সেটা স্বীকার করেছে।’’ মঙ্গলবার মুসা গ্রেফতারের পর উদ্ধার হওয়া মোবাইল, সরঞ্জাম ও নথিপত্র পরীক্ষা করে জানা যায়, খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত আমজাদের সঙ্গে মুসার যোগাযোগ ছিল। দু’জনেরই বাড়ি বীরভূমে। আমজাদ কীর্ণাহারের বাসিন্দা, মুসা লাভপুরের। দু’টি জায়গার মধ্যে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ঢাকার রোস্তোরাঁয় সাম্প্রতিক জঙ্গি-তাণ্ডবের পরে এই সন্দেহটি অনেক জোরদার হয়ে উঠেছে যে, ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন এবং আইএসআইয়ের মতো তাদের পৃষ্ঠপোষকরা নিজের নিজের স্বার্থ ও সুবিধা মতো পরস্পরের হাত ধরে চলছে। কার্যত যেন সিন্ডিকেট চলছে সন্ত্রাসবাদীদের। এই পরিস্থিতিতে মুসা ও আমজাদের মধ্যে যোগাযোগ থাকার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। যদিও এখনই তাঁরা নিশ্চিত করে এটা বলছেন না যে, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে আইএস এবং জেএমবি হাত ধরাধরি করে কাজ করছে। তবে মুসা-আমজাদের সম্পর্কের সূত্র ধরে দু’টি সংগঠনের সম্পর্কের দিকটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমজাদের থেকে বিস্ফোরক নিয়ে মুসা আইএসের ভারতীয় শাখার চাঁইদের জোগান দিয়েছে কি না, তদন্তকারীরা সে বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছেন। কারণ, আমজাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় চিকিৎসার সরঞ্জামের কারখানায় কাজ করার সুবাদে সে সহজে রাসায়নিক সংগ্রহ করত এবং খাগড়াগড়ের বোমা কারখানায় সে সব দিয়ে বিস্ফোরক তৈরি হত। মুসাকে এ দিন বেলা ২‌টোর পর হাওড়া আদালতে হাজির করানো হয়। নিরাপত্তার ব্যবস্থা এতটাই কড়া ছিল যে, কোর্টের লকআপ থেকে এজলাস পর্যন্ত ৩০ গজ পথও তাকে গাড়িতে আনা হয়। বিচারক মুসাকে ১৪ দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সেটা অস্ত্র আইনে অভিযুক্ত হিসেবে। মুসার বিরুদ্ধে আজ, বৃহস্পতিবার দেশদ্রোহ ও অন্যান্য কঠোর ধারায় আদালতে অভিযোগ আনতে পারে সিআইডি। মুসার আইএস-যোগ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনই সন্ত্রাস সংক্রান্ত ধারায় অভিযোগ আনা হচ্ছে না। তবে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা জানান, পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসার হাতে টাকা আসার কথা জেনে তাঁরা উদ্বিগ্ন। মুসার কাছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের একগোছা ডেবিট কার্ড মিলেছে। তার প্রতিটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুরে মুসার একটি লোক-দেখানো মুদি দোকান ছিল। আসল উদ্দেশ্য ছিল, ওই বিদেশ থেকে টাকা পাওয়ার রাস্তা খুলে রাখা। সিআইডি-র একটি দল এ দিন তিরুপ্পুরে পৌঁছয়। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×