ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হামলাকারীদের পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত

প্রকাশিত: ০০:১৫, ৫ জুলাই ২০১৬

হামলাকারীদের পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত

অনলাইন রিপোর্টার॥ রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এরা হলেন, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপে হামলাকারীদের ছবি প্রকাশের পর ফেসবুকে তাদের পরিচয় বেরিয়ে আসছে। তারা যেসব স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করেছে সেসব স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের পরিচিতরা আইএসের প্রকাশিত ছবির পাশাপাশি তাদের আগের ছবি প্রকাশ করেছেন। রোহান ইবনে ইমতিয়াজ : রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এবং বাংলাদেশ সাইক্লিস্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি। মানব পাচারের অভিযোগে তদন্ত হচ্ছে তার। ২০ বছর বয়সী রোহান স্কলাসটিকা শেষ করে পড়ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। তার মাও নামি ওই স্কুলের শিক্ষক। পরিবারের অভিযোগ, জানুয়ারি থেকে রোহান নিখোঁজ, থানায় জিডিও হয়েছে। মীর সামেহ মোবাশ্বের : স্কলাসটিকা থেকে ও লেভেল পাস করেছে মীর সামেহ মোবাশ্বের। মুবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াত কবির অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তা। মা খালেদা পারভীন সরকারি কলেজের শিক্ষক। বড় ভাই পড়ছেন কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে। মুবাশ্বের ‘এ লেভেল’ পরীক্ষার আগে গত মার্চে নিখোঁজ হন বলে থানায় জিডি করা হয়। সে সময় সংবাদপত্রেও সেই খবর আসে। নিবরাস ইসলাম : নিব্রাস ইসলাম নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। তিনি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সার্ভিসেসের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ধনী পরিবারের সন্তান নিব্রাস ইসলাম পড়েছেন ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে। খরচের কারণে যেখানে পড়ার সুযোগ সব শ্রেণির হয় না। মোনাশে ভালো না লাগায় দেশে ফিরে নিব্রাস ভর্তি হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওয়ারি আর উত্তরায় বাড়ি আছে তার ব্যবসায়ী বাবার। নিব্রাসের তিন চাচার মধ্যে একজন সরকারের উপ সচিব, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আরেকজন বিজ্ঞানী। খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল : খায়রুলের বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ব্রিকুষ্টিয়া গ্রামে। তিনি ডিহিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৫ সালে আলিম (এইচএসসি সমমান) পাস করে ফাজিল শ্রেণিতে ভর্তি হন। তাঁর মা পেয়ারা বেগম কাছে দাবি করেন, এক বছর ধরে খায়রুল নিখোঁজ ছিলেন। তার বোনের দাবি, তারা জানতেন, তার ভাই ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এরপর আর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল (২৫) : শফিকুলের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডার বাড়ি ইউনিয়নের কৈয়াগাড়ি গ্রামে। পরিবারের দাবি, শফিকুল ছয় মাস আগে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিলেন। দীর্ঘদিনের জন্য ‘তাবলিগের চিল্লায় যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বিদায় দেন। শফিকুলের বাবা বদিউজ্জামান (৫৫) ও বড় ভাই আসাদুল ইসলাম (৩২) দুজনই কৃষিশ্রমিক। বদিউজ্জামান বলেন, গ্রামের লোকজন বলাবলি করছিল যে টেলিভিশনে শফিকুলের ছবি দেখাচ্ছে, তিনি ঢাকায় জঙ্গি হামলা করতে গিয়ে মারা গেছেন। কিন্তু তিনি তা বিশ্বাস করেননি। পুলিশ তাঁদের বাড়িতে যাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হন। ভাই আসাদুল ইসলাম বলেন, তাঁর ভাই শফিকুল ধুনটের গোঁসাইবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও গোসাইবাড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হন। পরে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বছর দুয়েক আগে তিনি ঢাকার আশুলিয়া থানার শাজাহান মার্কেট এলাকায় মাদারী মাতব্বর কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন। সর্বশেষ ডিসেম্বর শফিকুল বাড়িতে আসেন। বেশ কিছুদিনের জন্য তাবলিগ জামাতের চিল্লায় যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বিদায় নেন। এরপর শফিকুল আর বাড়ির কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। গত শনিবার এই পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট) দাবি করেছে, এরা আইএসের সদস্য। এরাই শুক্রবার রাতে গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। আইএসের এই দাবি প্রচার করে তাদের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক নিউজ। সেটা পরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ প্রচার করে। আইএসের ওই বার্তায় এই পাঁচজনের বলা হয়েছিল আবু উমায়ের, আবু সালমা, আবু রাহিক, আবু মুসলিম ও আবু মুহারিব। একই দিন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নিহত পাঁচজনের লাশের ছবি গণমাধ্যমে পাঠিয়ে বলেছিল তাঁদের নাম বলা হয়েছিল আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। কিন্তু বাস্তবে এঁদের কারও নাম মেলেনি। আর হামলাকারী জঙ্গি হিসেবে যে পাঁচটি লাশের ছবি পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ওই রেস্তোরাঁর কর্মী সাইফুলের ছবিও ছিল। রোহানের লাশের ছবি পাঠানো হয়নি ওই দিন। নামের এই অমিলের বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিরা সব সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকে।
×