ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফরাসী সৌরভ ছড়িয়ে সেমিতে স্বাগতিকরা

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৫ জুলাই ২০১৬

ফরাসী সৌরভ ছড়িয়ে সেমিতে স্বাগতিকরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সৌরভ ছড়িয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে নাম লিখিয়েছে স্বাগতিক ফ্রান্স। রবিবার রাতে সেইন্ট-ডেনিসে আসরের শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে ফরাসীরা ৫-২ গোলে পরাজিত করে চমক দেখানো আইসল্যান্ডকে। দুর্দান্ত খেলে ম্যাচে বিজয়ী দলের হয়ে জোড়া গোল করেন অলিভিয়ের জিরাউড। একটি করে গোল করেন পল পোগবা, ডিমিট্টি পায়েট ও এ্যান্টোনিও গ্রিজম্যান। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে শেষ চারে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে বেশ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল স্টেডিয়ামপাড়ায়। প্যারিসের স্ত্যাঁতে দ্য ফ্রান্সের বাইরে বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়। এতে অনেকেই ভীত হয়ে পড়েছিল যে, সন্ত্রাসী হামলা হলো কিনা। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। তবে তাতে হয়ত ভয় পেয়েছিল আইসল্যান্ড! তা না হলে ম্যাচের শুরুতেই তারা খেই হারিয়ে ফেলবে কেন! দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ভালই প্রতিরোধ গড়ে তোলে চমক দেখানো দলটি। স্টাডে দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়ামের সঙ্গে ফরাসিদের অনেক সুখস্মৃতি জড়িয়ে আছে। সবচেয়ে সেরা স্মৃতি অবশ্যই ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল। জিনেদিন জিদানের অবিস্মরণীয় নৈপুণ্যে ভর করে ওই ম্যাচে লা ব্লুজরা ৩-০ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে। পরশু রাতে একই মাঠে ফ্রান্স বিধ্বস্ত করেছে প্রতিপক্ষকে। শেষ ষোলোতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়া আইসল্যান্ডের অসহায় আত্মসমর্পণের চিত্র স্কোরলাইনেই পরিষ্কার। ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলছে ফ্রান্স। ১২ মিনিটে স্বাগতিকদের গোলোৎসবের সূচনা। ব্লেজ মাটুইডির পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে জোরালো শটে দলকে এগিয়ে নেন জিরাউড। সাত মিনিট পর আবার গোল। এবার গ্রিজম্যানের কর্নার থেকে দারুণ হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেছেন পোগবা। ২০ মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে গেলেও ফ্রান্সের গোলের ক্ষুধা মেটেনি। বিরতির আগে আরও দুই গোলের দেখা পায় লা ব্লুজরা। ৪২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে গড়ানো শটে দলের তৃতীয় গোলটি পায়েট। আর বিরতির বাঁশির ঠিক আগে পাল্টা আক্রমণ থেকে দারুণ এক ভলিতে স্বাগতিকদের পক্ষে চার নম্বর গোল করেন তুখোড় ফর্মে থাকা গ্রিজম্যান। চার গোলে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু করে ফ্রান্স। এই অর্ধে ভালই প্রতিরোধ গড়ে তোলে আইসল্যান্ড। ৫৬ মিনিটে গিলফি সিউর্ডসনের পাস থেকে আইসল্যান্ডের প্রথম গোল করেন কোলবেইন সিগর্ডসন। কিন্তু তিন মিনিট পরই পায়েটের ফ্রিকিক থেকে জিরাউউ দৃষ্টিনন্দন হেডে দলের পক্ষে পাঁচ নম্বর গোল করেন। ৮৪ মিনিটে বির্কির বিয়ারনাসনের দুরন্ত হেডে ব্যবধান কিছুটা কমায় আইসল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ৫-২ গোলের জয় নিয়ে নিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফরাসীরা। ইংল্যান্ডকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলে হারিয়ে হৈচৈ ফেলে দেয়া আইসল্যান্ড পাঁচ গোল হজম করলেও দুই গোল ফিরিয়ে দেয়। তাদের লড়াকু পারফরমেন্স সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে। ফ্রান্সের জোড়া গোলদাতা জিরাউডও তাদের প্রশংসা করেন। জিরাউড ম্যাচ শেষে বলেন, আমরা পাঁচ গোল করেছি। এ নিয়ে আমরা দারুণ সন্তুষ্ট। কিন্তু আইসল্যান্ড কখনই ম্যাচ ছেড়ে দেয়নি। দারুণ প্রতিশ্রুতি নিয়ে তারা শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছে। আমি তাদের ত্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। ইউরোতে তারা দারুণ খেলেছে। আইসল্যান্ডের সোয়াসনি সিটি স্ট্রাইকার গিলফি সিগার্ডসন বলেন, আমি দারুণ গর্বিত। টুর্নামেন্টটা আমাদের জন্য অসাধারণ গৌরবের। আমাদের মতো ছোট দলের জন্য যা সত্যিই বিশেষ কিছু। সম্ভবত আমরা একটু বেশিই পেয়ে গেছি। আমাদের কাছ কারোরই এতটা প্রত্যাশা ছিল না। এটা আমাদের জন্য ভাল হয়েছে। কারণ দেশে ফিরে ভবিষ্যতের জন্য আমরা প্রস্তুত হতে পারব। আমাদের দলে ১০-১৫ জন খেলোয়াড় আছে যাদের বয়স অনেক কম। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার জনসংখ্যার দেশ হলেও আইসল্যান্ডের ইউরো সাফল্য বিশ্ব মানচিত্রে তাদের নতুনভাবে উপস্থাপন করবে বলেই আইসল্যান্ডের খেলোয়াড়দের বিশ্বাস। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম দলের পারফরমেন্সে সন্তোষ প্রকাশ করলেও দুটি গোল হজম করায় নিজেদের দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রক্ষণভাগে কিছু পরিবর্তন করা সত্ত্বেও গোলগুলো হজম করা মেনে যায় না। কিন্তু ম্যাচে অনেক কিছুই ইতিবাচক হয়েছে। সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ফরাসী কোচ বলেন, নিঃসন্দেহে জার্মানী বিশ্বের সেরা দল। কিন্তু আমরাও সেরা চালে খেলছি এবং নিজেদের সেরাটা দিতেই মাঠে নামব। ফ্রান্সের এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পায়েটের মতে, আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটিই এখন পর্যন্ত তাদের সেরা পারফরমেন্স। তিনি বলেন, এই টুর্নামেন্টে এটি ছিল আমাদের সেরা পারফর্মেন্স। ম্যাচে আমরা বেশক’টি গোল আদায় করতে সক্ষম হয়েছি। যেটি ছিল দারুণ ব্যাপার। ম্যাচে আগে গোল করতে পারাটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আক্রমণ ভাগে আমরা যথেষ্ট মেধার পরিচয় দিয়েছি। মানসম্পন্ন আক্রমণ দিয়ে আমরা অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছি। যা দিয়ে আমরা গোল আদায়ও করতে পেরেছি। আইসল্যান্ডের শক্তিমত্তা নিয়ে শুরুতে আমরা বেশ শংকিত ছিলাম। কিন্তু ম্যাচে আমরাই শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছি।
×