ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সফল ব্যবসায়ীর সুন্দরী কন্যা থেকে জঙ্গি ম্যাচ ম্যাকার

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ৪ জুলাই ২০১৬

সফল ব্যবসায়ীর সুন্দরী কন্যা থেকে জঙ্গি ম্যাচ ম্যাকার

অনলাইন ডেস্ক॥ জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের বিয়ে করতে অনুপ্রাণিত করা নারীর পরিচয় উন্মোচন করেছে যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল পত্রিকা। উম্ম মুথান্না আল ব্রিটানিয়াহ ছদ্মনামে পরিচিত এই ব্রিটিশ নারীর আসল নাম তুবা গন্ডাল, ২২ বছর বয়সী এই তুবার বাবা লন্ডনে সফল ব্যবসায়ী। একজন হাসিখুশি স্কুল শিক্ষার্থী থেকে একে ৪৭ ধারী জঙ্গিতে পরিণত হওয়াটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। এখন পড়ালেখা ছেড়ে তার লক্ষ্য আত্মঘাতী বোমা হামলা করে শহীদ হওয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাবশালী এই নারী অনেককেই রক্তপিপাসু আইএস যোদ্ধাদের সিরিয়ায় এসে বিয়ে করতে অনুপ্রাণিত করেছে। অনলাইনে তার বিদ্বেষপ্রসূত বার্তায় যুক্তরাজ্যকে একটি নোংরা দেশ হিসেবে অভিহিত করেন। গত নভেম্বরে প্যারিস হামলার পরে তিনি একটি পোস্টে বলেন, বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলি- ৮০ জন নিহত। জিম্মিদের জবাই করার দৃশ্য যদি নিজের চোখে দেখতে পারতাম! খুব সুন্দর একটি দৃশ্য হতো নিশ্চয়! গত বছরের মে মাসে ফাতিমা নামের এক ব্রিটিশ কিশোরী সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে। আর সেই ফাতিমার মাধ্যমে তুবা তার ১৬ বছর বয়সী এক আত্মীয়কে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু আসলে সেই ফাতিমা ছিলেন একজন সাংবাদিক এবং পুলিশের কাছে সব কিছু বলে দেয় এবং তুবার সেই আত্মীয়কে পুলিশ আটক করে। তবে পূর্ব লন্ডনের সচ্ছল পরিবারের সন্তান তুবা গন্ডাল কিভাবে সিরিয়ায় আইএসের অন্যতম পোস্টার গার্ল হয়ে উঠলেন সেটা পরিষ্কার নয়। এটা অবশ্যই কোনো অধিকারবঞ্চিত, হতাশ তারুণ্যের বিরূপ পরিস্থিতিতে এই রক্তপিপাসু জঙ্গিগোষ্ঠীর অংশ হননি। সফল ব্যবসায়ী বাবার বড় সন্তান এবং স্থানীয় কেল্মস্কট স্কুলের সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মার্কস পাওয়া শিক্ষার্থী। ২০১০ সালের স্কুলের ইয়ারবুকের ছবিতে তাকে হিজাব পরিহিত দেখা যায়। কিন্তু তার স্কুলের বন্ধুরা জানিয়েছে, বাড়ি থেকে বের হয়ে সে হিজাব খুলে তার বাদামি সুন্দর চুল উন্মুক্ত করে দিত এবং ঘরে ফেরার পথে আবারও সেটা পড়ে নিত। তার সাবেক এক সহপাঠী বলেন, সে ছিল একজন বিদ্রোহী। সে হিজাব পড়েই স্কুলে আসতো কিন্তু স্কুলে এসে সেটি খুলে ফেলতো। বাড়ি থেকে সে প্রায়ই লুকিয়ে বের হতো। ওই বন্ধু আরো জানিয়েছে, তুবা গন্ডাল লুকিয়ে ধূমপানও করতো এবং তার গোপন ছেলেবন্ধুও ছিল। সে ছেলেদের অনেক ব্যান্ড ও মিউজিক পছন্দ করতো। স্কুলের পরেও ওই বন্ধুর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল কিন্তু হঠাৎ দুই বছর আগে তার মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। সে অনলাইনে কোরানের আয়াত ও ধর্ম নিয়ে কথা বলা শুরু করে। আমি জানি না কিভাবে তার মধ্যে এটি হল। আমি এবং আমার বন্ধুদের কারো কোনো ধারণাই নেই সে কেন সিরিয়ায় গেল। ডেইলি মেইলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে তুবা গন্ডাল লেবানন বংশোদ্ভুত আবু আব্বাস আল লুবনানি নামের এক কুখ্যাত জঙ্গিকে বিয়ে করেছে যে ব্রিটেন থেকে জিহাদি নারী সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছে। গন্ডাল পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই দুই ব্রিটিশ তরুণীকে সিরিয়ায় যেতে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টার অভিযোগে তার পরিচয় ফাঁস করে একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্র। তুবা একটি পোস্টে বলেন, ইসলামিক স্টেটের সিংহ যারা কিছুদিন পর ইসলাম ছড়াবে তাদের বড় করার চেয়ে বেশি আর কি চাওয়ার থাকতে পারে। আল লুবনানি গত আগস্টে সিরিয়া-ইরাকি সীমান্তে নিহত হয়েছেন। টুইটারে সে বিষয়েও পোস্ট করেছেন তুবা। গত সপ্তাহে তুবার বাবা মোহাম্মেদ বশির গন্ডাল কন্যার সিরিয়ায় যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। ধর্মপ্রাণ এই মুসলিম বলেন, আমি জানতাম না এই বিষয়ে, যদি জানতাম তাকে যেতে দিতাম না। সিরিয়ায় সে এখনো নিরাপদে আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু তুবা নিজে মৃত্যুর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নতুন একটি পোস্টে বলেন, আমার গুনাহ আমাকে ভীত করে। আমার আশেপাশের সবাই শাহাদত বরণ করেছে। ইয়া রব, কখন আমার পালা আসবে? কখন আমি আমার স্বামীর সঙ্গে একত্রিত হবো? সিরিয়ায় আইএসের কথিত রাজধানী রাকায় যুদ্ধের যে তীব্রতা বাড়ছে তাতে হয়তো তুবা গন্ডালকে বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।
×