ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিবরাসকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি বিস্ময়

প্রকাশিত: ১৯:২০, ৪ জুলাই ২০১৬

নিবরাসকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি বিস্ময়

অনলাইন রিপোর্টার॥ গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলাম। এই নিবরাসকে নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে দেশে। ইসলামকি স্টেট (আইএস) নিবরাসের ছবি প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হইচই পড়তে শুরু করে। পরিচিত মহলগুলোও ফেইসবুকে বিস্ময় প্রকাশ করতে থাকে। কিন্তু যারা নিবরাসকে আগে চিনতেন না, গুলশান হত্যাযজ্ঞের পরে যারা চিনলেন, তারাও কম হতবাক নন। এমন সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলে এই রকম ঘটনা কিভাবে ঘটাতে পারলো এমন প্রশ্ন ঘুরছে নানা জনের ফেইসবুক ওয়ালে। নিবরাসের পরিচিত এবং বন্ধুদের মধ্যে যারা ফেসবুকে তার ছবি শেয়ার করে মন্তব্য করেছেন, তাদের মধ্যেও সীমাহীন বিস্ময়। যে ছেলেটা এত হাসিখুশি, এত মিশুক ছিল, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যে জনপ্রিয় ছিল অত্যন্ত ভাল ব্যবহারের জন্য, সে গুলশানে এমন গণহত্যা চালাল! ফেইসবুকে নিবরাসের প্রোফাইলটি এখন অনেকটাই ভাইরাল। সেই প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, মালয়েশিয়ান মোনাশ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন নিবরাস। কুয়ালালামপুরেই থাকতেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। টার্কিশ হোপ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া মোনাশ ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সার্ভিস এর কোষাধক্ষ ছিলেন তিনি। এদিকে নিবরাস, রোহান ও মোবাশ্বিরের ছবি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই ঝড় উঠে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। কানাডার মন্ট্রিয়ল থেকে ফারহানুল ইসলাম নামে একজন ফেসবুকে নিবরাসের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এই ছেলেটা হলো অন্যতম জঙ্গি নিবরাস ইসলাম। এই যুবক শিক্ষিত, ধনী এবং একটা পরিবারও আছে। কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। এই পৃথিবীতে নিশ্চয়ই কোনো গলদ রয়েছে, না হলে এই ছেলেগুলোর মগজধোলাই করা যায় না। সব চেয়ে বিস্ময়কর হল, এই ছেলেটার ফ্রেন্ড লিস্টে এমন অনেকে রয়েছেন, যারা আমার ফ্রেন্ড লিস্টেও রয়েছেন (মিউচুয়াল ফ্রেন্ড)। ভাবতে পারছি না, কাকে বিশ্বাস করব।’ চৌধুরী জারিয়া ইসলাম নামে এক তরুণী লিখেছেন, ‘আমি এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। নিবরাস ইসলাম ১ জুলাই, ২০১৬-র হামলাকারীদের একজন। খুব হ্যান্ডসাম, সুদর্শন, শিক্ষিত যুবক সে। এনএসইউ-এর ছাত্র। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। সে একজন শয়তানে পরিণত হতে পারে কী করে এবং কেন?’ অন্য এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘এই ছেলেটা টার্কিশ হোপ স্কুলে পড়ত। তার পর নর্থ সাউথ উইনিভার্সিটিতে পড়ত। সব শেষে মালয়েশিয়ান মোনাশ ইউনিভার্সিটি। আমরা ভীষণ অবাক হয়েছি। প্লিজ কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আগে এবার জেনে নাও, সে কেমন। নিজের বন্ধুদের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলেই বাবা-মাকে বল, বড়দের বল।’ নিবরাসের এক পরিচিত লিখেছেন, ‘আমার পারিবারিক ঐতিহ্য যেমন, নিবরাসেরও তেমন। ওকে অনেক দিন ধরে চিনি। ও আমার ভাইয়ের বন্ধু ছিল। আমাদের আশপাশের লোকজনই এই রকম হয়ে উঠছে! বিশ্বাস করতে পারছি না।’ নিবরাস ইসলামের ফেসবুক প্রোফাইল দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করা যায় না, সে জঙ্গি হয়ে উঠতে পারে। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রেস্তোরাঁয়-মলে-অ্যামিউজমেন্ট সেন্টারে ঘুরতে যাওয়া, পরিজনদের সঙ্গে উৎসব-অনুষ্ঠানে মেতে ওঠার যে সব ছবি নিবরাসের ফেসবুক প্রোফাইলে রয়েছে, তাতে তার জঙ্গি হয়ে ওঠার আশঙ্কার কথা দুঃস্বপ্নেও মাথায় আসে না। বলিউড স্টার শ্রদ্ধা কাপুরেরও ভক্ত ছিল নিবরাস। কোনো এক অনুষ্ঠানে বা পার্টিতে শ্রদ্ধা কাপুরের সঙ্গে দেখাও হয়েছিল তার। শ্রদ্ধার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার ভিডিও নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্টও করেছিল এই তরুণ। শ্রদ্ধার সঙ্গে হ্যান্ডশেকের মুহূর্ত কতটা অসাধারণ ছিল, ভিডিওর ট্যাগলাইনে সে কথা লিখেছিল নিবরাস। পরিবারের সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। হঠাৎ ২০১৬-র জানুয়ারি মাস থেকে তার পরিবার আর তার কোনো খোঁজ পায়নি বলে জানা যায়। তবে খোঁজ মিলেছে নিবরাসের। প্রায় ৬ মাস পর। গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের একজন হিসাবে মৃত জঙ্গিদের তালিকায় খোঁজ পাওয়া গেল তার।
×