ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম খোকন

ঈদের আনন্দ উৎসবে...

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৪ জুলাই ২০১৬

ঈদের আনন্দ উৎসবে...

আমাদের সংস্কৃতির আবহমানকালীন ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে সবচেয়ে বড় পবিত্র উৎসব ঈদ। খুব বেশি দেরি নেই, আর মাত্র কয়েকদিন দিন বাকি। এর পরই বহুল প্রতীক্ষিত দিনটি এসে যাবে সবার কাছে। ধনী-গরিব ছোট-বড় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য অনেক আনন্দের সম্ভার হয়ে আসছে ঈদ উৎসব। এভাবেই বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ঈদ আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। সবাই এর মধ্যে ঈদ উৎসবের প্রস্তুতি নিয়েছেন, যার যার সাধ্য মতো ঈদের কেনাকাটাও সেরেছেন। দীর্ঘ সিয়াম সাধনা আর কৃচ্ছ্র সাধনের পরপরই পুরস্কার আর উৎসবের লগ্ন খুঁজে পেতে ঈদ সাহায্য করে সবাইকে। ধনী, গরিব নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ এক কাতারে সমবেত হয় এই বিশেষ ক্ষণটিকে উদযাপন করতে। ঈদ-উল-ফিতরের উৎসবকে ঘিরে পুরো একটি মাস সব ক্ষেত্রেই নজরে পড়েছে ব্যাপক প্রস্তুতির আয়োজন। আশার কথা হলো, বাংলাদেশে ঈদ এখন সাম্প্রদায়িকতাকে অতিক্রম করেছে। হয়েছে সার্বজনীন। জাতিগত বৈশিষ্ট্যে আমাদের অন্তরের ভেতরে লুকিয়ে আছে উৎসবের সুর। সেই সুরে সুরে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে আমাদের মন-প্রাণ। বাঙালী জাতির গৌরবময় ইতিহাসে মেলাকেন্দ্রিক উৎসব মুখরতা খুঁজে পাওয়া যায় ব্যাপকভাবে। অতীতের সেই ধারা থেকেই যখন ধর্মীয় প্রভাব আর অনুশাসন বিস্তার লাভ করে আমাদের অন্তকরণে তখন উৎসব হিসেবে সবচেয়ে বড় পার্বণ হয়ে ধরা দেয় ঈদ। ঈদ মানেই মিলন। ঈদ মানেই সবাইকে একই কাতারে নিয়ে আসা। ঈদ মানে অস্তিত্বের ভেতর আনন্দের নিজস্বতা তৈরি করা। ঈদের যে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা তা আমাদের জাতিসত্তা আর ধর্মীয় অনুভূতিতে যুগ যুগ ধরে স্বীকৃত। আমাদের দেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের পাশাপাশি উদযাপিত হয় সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব হিসেবে। জাতিসত্তার উদারতায় ঈদ শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব নয় বরং সকল ধর্মের জন্য এক কাতারে আত্ম উপলব্ধির সময়। এক মাসব্যাপী ধৈর্য পরীক্ষা আর ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা অপেক্ষা করি এই সর্ববৃহৎ উৎসবের। যেখানে এক কাতারে অনুভূত হয় ধনী-গরিব সবার অনুভূতি। ঈদের এই মাহাত্ম্যই আমাদের আন্দোলিত করে ব্যাপকভাবে। সময়ের ধারাবাহিকতায় ঈদ উদযাপনের ব্যাপ্তিতে ভিন্নতা এলেও তার অনুভূতিগত মৌলিকত্ব রয়ে গেছে আগের মতোই। ঈদ এলে প্রতিবছরই দেশজুড়ে ঘরে ঘরে আয়োজনের সমারোহ শুরু হয়ে যায়। নতুন জামা, জুতো, শাড়ি, সাজসজ্জা, গয়নাগাটি কেনার ধুম পড়ে যায়। শুধুই কি নতুন জামা-কাপড়, শাড়ি? এর সঙ্গে ম্যাচ করে জুতো, সাজসজ্জা, হেয়ারস্টাইল ইত্যাদির জন্য নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে ব্যস্ততা বেশ চোখে পড়ে। এখন ঈদ উপলক্ষে সর্বত্রই চলছে কেনাকাটার আমেজ। শুধু জামা-কাপড়, সাজসজ্জার সরঞ্জাম, সুগন্ধিই নয় ফ্যাশন হাউস, জুয়েলারি শপ, বিউটি পারলার, শপিংমল ইত্যাদির পাশাপাশি ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট শহরের মোবাইল ফোনের দোকানগুলোও। মোবাইলে টিভি দেখা, গান শোনা, ছবি তোলা ভিডিও দেখা, ইন্টারনেট, গেমসহ বিনোদনমূলক সবকিছু থাকায় এর চাহিদাও বেশি। অনেকেই ঈদ সামনে রেখে নতুন মোবাইল ফোন সেট কেনার জন্য দোকানে ভিড় করছেন। মোটকথা, ঈদ বাণিজ্যে মেতে উঠেছে সারা দেশ। আর মাত্র ক’টা দিন পরেই ঈদ। দৈনন্দিন কাজের চাপ, উৎসব অনুষ্ঠানের হইহুল্লোড়ে ত্বক হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ ও নির্জীব। ঈদের দিন নিজেকে কীভাবে সজীব, সতেজ ও সুন্দর রাখা যায় এখন থেকে সে ব্যাপারে যতœ নিতে হবে। তা না হলে ঈদের দিন মেকআপের পরও নিজেকে নিস্তেজ ম্লান মনে হবে। নিজের চেহারায় অরিজিনাল সৌন্দর্যের ঝিলিক আনতে ঘরোয়াভাবে ফেসিয়াল করতে পারেন। এতে নিজেকে উজ্জ্বল, ঝলমলে, প্রাণবন্ত ও ফর্সা দেখাবে। ঈদ উৎসবকে আরও আকর্ষণীয় করতে এখন মেয়েরা মেহেদির রঙে রাঙিয়ে তুলছে হাত, বাহু ও অঙ্গ। আজকাল মেহেদি কেবল হাতের তালুতেই ঠাঁই পায় না, অনেকে পা কিংবা বাজুতেও মেহেদি লাগাতে পারেন। তবে এগুলো উঠে যায় সহজে। তাই ঈদের দিনেই এ ধরনের মেহেদি লাগান। এমনিতে মেহেদি ঈদের আগের দিন লাগানোই ভাল। বেশি আগে লাগালে রঙ চলে যেতে পারে। আগের রাতে মেহেদি লাগালে পরের দিন রঙটা পুরোপুরি ফুটে ওঠে। মেহেদি লাগানোর আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। ময়েশ্চারাইজার বা লোশন জাতীয় কিছু লাগাবেন না। অতিরিক্ত সাবান শ্যাম্পু লাগালেও রঙের উজ্জ্বলতা কমে যেতে পারে। তাই কয়েকটি দিন হাত দুটিকে সাবধানে রাখুন। ঈদ আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে নিতে এর মধ্যেই নতুন জামা-জুতা কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। ছেলে বুড়ো সবাই সাধ্যমতো কিনে নিচ্ছেন নিজেদের পছন্দের পোশাক-আশাক। এক কথায় নিজিকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত একেবারে নতুন করে সাজাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই। খেয়াল করুন কিছু বাদ পড়ে গেল কি না? আর ঈদের আনন্দ যেহেতু শুরুই হয় ঈদের নামাজ জামাতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেহেতু তার প্রস্তুতির জন্য আপনার বাজার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নিন টুপি, আতর, তসবি ও জায়নামাজ। ঈদ উৎসবের আনন্দে নতুন মাত্রা যুক্ত করে নানা ধরনের উপহার। উপহারের আবেদন সব সময়েই ইতিবাচক। আদিকাল থেকেই পারস্পরিক হৃদ্য প্রকাশের প্রতীক ধরা হয় উপহারকে। আবার কাউকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য উপহার বেশ ভাল হাতিয়ার। সামনে ঈদ আসছে। নিজের কাছের আপনজনদের উপহার দেয়ার এ এক মোক্ষম সুযোগ। কারণ সব সময়ের চেয়ে উৎসবকেন্দ্রিক উপহার ভিন্নতা নিয়ে আসে। এবারের ঈদে যেকোনো বয়সী প্রিয়জনকে মানানসই উপহার দিয়ে বুঝিয়ে দিন আপনি তার কতটা কাছের। ঈদ উৎসবে কেবল পোশাক-আশাকে সাজসজ্জায় নিজেদের সাজানোর পাশাপাশি ঘরদোরও সাজাতে ব্যস্ত সবাই এই মুহূর্তে। ঘর-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে, ঝলমলে উজ্জ্বল সাজে সজ্জিত করতে যে যার মতো চেষ্টা করছেন। জানালার পর্দা, সোফার কভার কুশন ধুয়ে কিংবা প্রয়োজনবোধে পাল্টে নিতে পারেন। ঘর সজ্জায় বৈচিত্র্যের চমক আনতে কিছুটা সময় দিন। এক্ষেত্রে নিজের সৌন্দর্যবোধ রুচির প্রকাশ ঘটান। বাড়িতে আগত অতিথিদের আপ্যায়নে সুস্বাদ খাবার-দাবারের যতই আয়োজন থাকুক না কেন গৃহসজ্জায় যদি রুচির প্রকাশ না থাকে খাবারদাবারের মহা আয়োজন তেমন আবেদন সৃষ্টি করতে পারে নাÑএ কথা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। ছবি : সাফায়েত মডেল : জিনিয়াস ও নিপা কোরিওগ্রাফী : এডলফ খান পোশাক : অঞ্জন’স মেকআপ : পারসোনা
×