ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পেনাল্টি শূটআউটে জয়সূচক গোল করতে পেরে উচ্ছ্বসিত হেক্টর

এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনই ছিল না ॥ নিউয়ের

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৪ জুলাই ২০১৬

এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনই ছিল না ॥ নিউয়ের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী দুই দল ইতালি-জার্মানি। দুই দলই সমান চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তবে বিশ্বকাপ কিংবা ইউরো, ইতালি মানেই এক দুঃস্বপ্নের নাম। শনিবারের কোয়ার্টার ফাইনালের আগে আজ্জুরিদের বিপক্ষে যে কখনই প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে জিততে পারেনি জার্মানরা। অবশেষে অতীত ইতিহাস বদলে ফেলল জোয়াকিম লোর দল। যে জয়ের নায়ক হলেন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নিউয়ের। তবে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র হয় দুই দলের মহারণ। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও আর কোন গোল না হলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারে ইতালির দুটি শট দুর্দান্তভাবে রুখে দেন নিউয়ের। আর বাকি দুটি শট জার্মানির জালে জড়াতে ব্যর্থ হন ইতালিয়ানরা। এর ফলে পেনাল্টি শূটআউটে ৬-৫ ব্যবধানে ইতালিকে হারিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ চারে জায়গা করে নেয় গোমেজ-মুলাররা। দলের এমন জয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নিউয়ের। তবে ১৮ শটের এমন দীর্ঘ সময়ের টাইব্রেকারের অভিজ্ঞতা এর আগে কখনই হয়নি তার। এ প্রসঙ্গে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে বেয়ার্ন মিউনিখের এই জার্মান গোলরক্ষক বলেন, ‘এমন পেনাল্টি শূটআউটের অভিজ্ঞতা আগে কখনই ছিল না আমার। এটা আসলেই দীর্ঘসময়ের। আমি যে দুটি শট রুখে দিয়েছি সেগুলো এখনও আমার মাথায় ভাসছে।’ ইতালির বিপক্ষে ম্যাচে অবশ্য প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল জার্মানিই। বিশ্বফুটবলের সেরা মিডফিল্ডার মেসুত ওজিলে অসাধারণ গোলে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসে জার্মান সমর্থকরা। তবে দুর্ভাগ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। এগিয়ে থাকার উচ্ছ্বাস খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তারা। পেনাল্টিতে গোল করে ইতালিকে সমতায় ফেরান লিওনার্দো বোনুচ্চি। আর এতেই বোনুচ্চির প্রতি ক্ষোভটা বেড়ে যায় ম্যানুয়েল নিউয়েরের। যে কারণেই টাইব্রেকারে তার গোল রুখে দেয়ার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করেন জার্মান গোলরক্ষক। ম্যাচ শেষে তা নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন নিউয়ের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বোনুচ্চি দুটি গোল করুক তা আমি কোনভাবেই চাইনি, তাই তার শট থামিয়ে দেই আমি।’ দুই যুগ পর ব্রাজিল বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল জার্মানি। সেই বিশ্বকাপেও নিউয়েরের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। অসাধারণ পারফর্ম করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ জয়ের পর জার্মান গোলরক্ষকের সামনে এবার ইউরোর মুকুট পরারও হাতছানি। সেক্ষেত্রে শেষ চারে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে স্বাগতিক ফ্রান্স এবং রূপকথার জন্ম দিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয়া আইসল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচের বিজয়ী দল। আগামী বৃহস্পতিবার মার্শেইতে অনুষ্ঠিত হবে সেই সেমিফাইনাল। সেই ম্যাচ জিততে পারলেই জার্মানদের সামনে থাকবে কেবল ফাইনাল। কিন্তু জার্মানি ফাইনালের টিকেট পাবে কিনা তার উত্তর জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু সময়। তবে দলকে সেমিফাইনালে তুলেই দারুণ সন্তুষ্ট জোনাস হেক্টর। কেননা তার পেনাল্টি শটেই যে জার্মানির জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচ শেষে ২৬ বছর বয়সী এই কোলন ডিফেন্ডার বলেন, ‘এটা আসলেই ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন তবে কোয়ার্টার ফাইনালের বাঁধা পেরুতে পারার আনন্দটাই আমার অনেক। দেখলাম যে আর খুব খেলোয়াড় শট নিতে বাকি নেই। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল যে আমাকেও শট নিতে হবে তখন আমার আত্মটা যেন মুখের খুব কাছাকাছি চলে আসতে শুরু করে। সর্বোপরি পরের রাউন্ডে জায়গা করে নিতে পেরে আমরা খুবই খুশি। তবে পরিস্থিতিটা যে খুব চাপজনক ছিল তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এখানে ভাগ্যও ভূমিকা রাখে।’ এদিকে বেলজিয়াম এবং বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল ইতালি। কিন্তু শেষ আটেই থেমে গেল আজ্জুরিদের জয়রথ। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও এবারের ইউরো থেকে যা অর্জন করেছে তাতেই গর্বিত ইতালিয়ানরা। এ প্রসঙ্গে দেশটির অভিজ্ঞ কোচ এ্যান্তনিও কন্টে বলেন, ‘এখান থেকে আমার দল যা অর্জন করেছে আমি তাতেই খুব গর্বিত। তবে আমাদের অনুশোচনা কেবল পেনাল্টি কিকে।’ বিশ্বকাপ কিংবা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে জার্মানির বিপক্ষে কখনই হারেনি ইতালি। অবশেষে কন্টের অধীনে জয় খরা ঘুচাল বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। জার্মানদের সামনে এবার ইউরো জয়ের হাতছানি। তবে লোর জন্য দুঃসংবাদ হলো, সেমিফাইনালে ম্যাটস হামেলসকে পাচ্ছেন না তিনি। ইতালির বিপক্ষে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার তাকে ছাড়াই মাঠে নামতে হবে জার্মানিকে। তবে হামেলস অবশ্য ফাইনাল খেলতে দারুণ আশাবাদী।
×