ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

ধেয়ে আসছে নতুন দানব কোথায় প্রতিকার?

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৪ জুলাই ২০১৬

ধেয়ে আসছে নতুন দানব কোথায় প্রতিকার?

প্রতিবার ভাবি একটা পজিটিভ লেখা লিখব। চলমান লেখাগুলো যাকে আমরা কলাম বলি বেশিরভাগ জুড়েই থাকে নানা ধরনের নেগেটিভ ভাবনা। নয়ত সমালোচনা বা রাগের বহির্প্রকাশ। এটা লেখকদের দোষ না। প্রতিদিন সকালেই মন খারাপের খবরে ঘুম ভাঙ্গে আমাদের। পাঠক-পাঠিকাদের আনন্দ দেয়ার জন্য যে স্পেস বা তাদের ভালভাবে বোঝানোর যে জায়গাটা সেটা প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এই সরকারের আমলে আমরা নানাদিক থেকে প্রচুর উন্নয়ন আর অগ্রগতি দেখার পরও দেশের মানুষের মনে শান্তি নেই। অদৃশ্য বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াত এ কাজটা সম্পূর্ণ না হলেও মোটামুটি সার্থকভাবে করতে পেরেছে। তাতে জনমনে একটা প্রশ্ন ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে, উন্নয়ন ও শান্তি কি ভিন্ন কিছু? এভাবে চলতে থাকলে এই প্রশ্নটি দাঁড়িয়ে যাবে সমস্যা হয়ে। তখন তাদের মনে হবে উন্নয়নের ঠেলা সামলাতে যদি জীবন ও সম্পদ কোরবানি দিতে হয় তার চেয়ে ঢের ভাল আধো উন্নয়ন। এটাই কিন্তু বিএনপির চাওয়া। কারণ এখন তাদের যা অবস্থা তাতে তারা যদি কোন কারণে এ দেশের শাসনভার পায়ও কিন্তু উন্নয়নের চাকা এভাবে সচল রাখতে পারার মতো যোগ্য মানুষ তাদের নেই। নেতৃত্বের অভাবে দলটি কোন আন্দোলনেও যেতে পারছে না। বিএনপি একটা বিষয় বুঝেও বোঝে না আদর্শহীনতা আর সময়ের মারপ্যাঁচে গদি পাওয়ার দলটি আসলে ট্রেনের মতো। যার যেখানে প্রয়োজন তারা সেসব স্টেশনে নেমে গেছে। এখন খালেদা জিয়া ভাল করে তাকালে দেখবেন তার সাধের পুত্রটিও সঙ্গে নেই। যখন মানুষ নিঃসঙ্গ হয় তখন যেমন আক্রমাণত্মক হয়ে পড়ে দল হিসেবে জামায়াত-বিএনপির নীরব আক্রমণাত্মক হওয়াটাও তাই উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। কোন ধরনের রাজনৈতিক মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এভাবে মানুষ মারাটা অসম্ভব। এ লেখা যখন লিখছি আবারও একজন নিরীহ মঠ সেবককে কুপিয়ে মারা হয়েছে। বাবাজি তথা শ্যামানন্দ দাস নামের এই ভদ্রলোক রাজনীতি করতেন না। তিনি আওয়ামী লীগের পূজারী ছিলেন না। বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গেও তাঁর কোন সম্পর্ক ছিল না। তিনি রাধামদন মানে শ্রীকৃষ্ণের পূজারী। ধারণা করা যায় এ ধরনের মানুষ হবেন নিরীহ। ঈশ্বর সমর্পিত। কারও মৃত্যু বা ফাঁসি চাওয়ার মতো নন এরা। সকালবেলা পূজার ফুল কুড়িয়ে আনার মতো একটি পবিত্র কাজে বেরুনো মানুষকে ফিল্মি কায়দায় মোটরসাইকেলে এসে মারার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে? ঘটনাটা দেখুন অবিকল আগের মতো। তিনজন আরোহী। সবার মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা। অতঃপর কুপিয়ে হত্যা। এখন আর মন মনন বিবেক বা শুভাশুভের কথা বলা অবান্তর। ওগুলো মরে গেছে। আমাদের ভেতর যে পশুত্ব আর হিংস্রতা রাজনীতি বা যে কোন উস্কানি আজ তাকে পৌঁছে দিয়েছে চরম সীমায়। এটা মানতে হবে বিরোধী দল বা আওয়ামী দুশমনদের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করে এর থেকে ত্রাণ মিলবে না। তার চেয়ে অনেক কাজের হবে আত্মসমালোচনা ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। একটা বিষয় ভেবে দেখার মতো আজকাল রাজনীতি আর মাঠে নেই। যে কোন দুর্ঘটনা বা ভাল-মন্দে তার ঠাঁই এখন ডয়িংরুমে বা প্রেস কনফারেন্স নামের মাইক্রোফোনে। এভাবে কি আর কোন সমস্যার মোকাবেলা করা যায়! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ত্রস্ত হেঁটে যেতে যেতে বলবেন : আমরা এখনও আমেরিকার চেয়ে ভাল আছি। এবার হয়ত বলবেন : তুরস্কের তুলনায় এতো কিছুই নয়। ব্যস, শুরু হয়ে যাবে এ নিয়ে হল্লাচিল্লা। সামাজিক মিডিয়া নামের অসম্পাদিত আন এডিটেড আন কাটেড উক্তি লেখা আলোচনায় বেচারা সেবায়েত বাবাজি একবার ডুববেন আবার ভাসবেন। এভাবে তলিয়ে যাবেন বিস্মৃতির অতলে। এমন বাংলাদেশ দুশমনদের চাওয়া হতে পারে, সাধারণ মানুষের নয়। এমনিতেই নানা বিভ্রান্তির শিকার তারা। কোন রহস্য বা জটিলতার গ্রন্থিমোচন হয়নি আজ অবধি। ধর্ষণ গুম হত্যার মতো বিষয়েও কোন স্বচ্ছ বক্তব্য নেই। সকালের কথার সঙ্গে বিকেলের কথার যোজন যোজন তফাত। এক বেলায় যাকে মনে হচ্ছে নিরাপরাধ পরের বেলায় তাকেই খুনীর মতো করে উপস্থাপনার এমন সার্কাস আগে দেখা যায়নি। এটা মানি পানির স্রোতের মতো অবাধ মিডিয়া, মিডিয়া নামের অজস্র ওয়েব পোর্টাল এমনকি প্রিন্ট মিডিয়া ও বিষয়কে জটিলতর করে তুলছে। কিন্তু এদের রসদ যোগাচ্ছে কারা? কথার অমিল, আসামি চিহ্নিতকরণের ব্যর্থতা, আসামি আড়াল করার মানসিকতা আর নানামুখী চাপে আইন ও বিচার প্রায় খেলো অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কুফল মানুষের মনে সংশয় ও অনাস্থা তৈরি হওয়া। সেটা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। কোন সরকার বা দেশ শাসনের মানুষরা এভাবে চলতে দিতে পারে না। আশ্চর্যের বিষয় এ দেশের বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগ তা করছে। তারা কোনভাবেই এর সামাল দিতে পারছে না। রাজনৈতিক নেতারা যার যার ধান্দা আর তেলবাজিতে মত্ত। কারও কারও ধারণা সপ্তাহে দু’একবার খালেদা জিয়া আর বিএনপি-জামায়াতকে ধোলাই করলেই সব ঠিক থাকবে। অন্তত নিজের পজিশনটার নড়চড় হবে না। যে কারণে সব দায় সব দায়িত্ব গিয়ে পড়ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর। আগেই বলেছি বিএনপি এর সুযোগ নেবেই। তাছাড়া তাদের ইতিহাসই হচ্ছে ষড়যন্ত্র আর কূটকাচালির ইতিহাস। মিথ্যা হলে দু’দিন আগের খবরটা দেখুন। ইফতারের প্রাকপর্বে তার ভাষণে খালেদা জিয়া কেঁদে-কেটে বলেছেন এভাবে গুম খুন চলতে দেয়া যায় না। খবরে দেখলাম তার কান্নার সঙ্গে সঙ্গে অতিথিরাও নাকি কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন। যে সে অতিথি না। স্বয়ং মওদুদও ছিলেন কান্নায়। মায়াকান্নার মানুষরা একটা বাজে কাজ করতে পেরেছেন সেখানে। বাচ্চাদের দিয়ে বলিয়েছেন হাসিনা আন্টি আমরা বাবাকে ছাড়া ঈদ করতে চাই না। দেখুন, কি সাংঘাতিক কথা। বাচ্চাগুলোর জন্য বুকভরা দরদ তাদের জন্য আমাদেরও চোখে পানি। কিন্তু কে তাদের শিখিয়েছে তাদের বাবাদের শেখ হাসিনা গুম করিয়েছেন? এটাই হলো ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ভানুমতীর খেল। তারা আওয়ামী লীগের চেয়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বেশি ভয় পায়। তাই তাকে বেকায়দায় ফেলতে এতসব গভীর চক্রান্ত। বেলা অনেক গড়িয়েছে। সাধু, সন্ন্যাসী, বৌদ্ধ শ্রমণ, যাজক, মোল্লা সবার মাথা কাটার চক্রান্ত বন্ধ না হলে এ দেশের উন্নয়ন ঢেকে যাবে বদনামের ধূলিঝড়ে। সে ঝড় থেকে উঠে আসবে নতুন দানব। দোহাই আপনাদের সে দানবের হাত থেকে এদেশ ও মানুষকে বাঁচান।
×