ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ জাতিসংঘের

সর্বাত্মক উদ্যোগ চাই ॥ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৪ জুলাই ২০১৬

সর্বাত্মক উদ্যোগ চাই ॥ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ শুক্রবার বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপদ ও সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করা এ প্রস্তাবের লক্ষ্য। ১৫ পৃষ্ঠার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এতে যে কোন উদ্দেশ্যে যে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খবর ইউএন নিউজ সেন্টার ও ইয়াহু নিউজের। প্রস্তাবটিতে জাতিসংঘ বৈশ্বিক সন্ত্রাস প্রতিরোধ কৌশল নামে সাধারণ পরিষদে ২০০৬ সালে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সকল সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় সংস্থার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবে যে কোন উদ্দেশ্যে যে কারও দ্বারা যে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সর্বসম্মতভাবে নিন্দা জানানো হয়েছে। দুই বছর আগে সাধারণ পরিষদ ২০০৬ সালে গৃহীত সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনা করে নতুন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। ২০০৬ সালের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘ কার্যালয়ে পঞ্চম পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনব্যাপী বৈঠকের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। সন্ত্রাসবাদ দমনে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। এক বিবৃতিতে বান কি মুনের প্রতিনিধি বলেন, ‘প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণিত হয় যে, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র-সহিংসতা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কালক্ষেপণ না করে একযোগে কাজ করে যেতে তৈরি আছে। সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র-সহিংসতা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে যেকোন মানবিক উদ্যোগের প্রতিও এটি বড় হুমকি ছুড়ে দিয়েছে। সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি সদস্য দেশ মুনের নিজ উদ্যোগে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র-সহিংসতা প্রতিরোধে কর্ম পরিকল্পনাকে সমর্থন জানানোয় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই কর্মপরিকল্পনার আলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তার মুখপাত্র সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, উগ্র-সহিংসতা দমনে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যালোচনায় বিভিন্ন দেশের সরকারের উদ্যোগ গ্রহণকে জাতিসংঘ স্বাগত জানায়। সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ক জাতিসংঘের গৃহীত সর্বশেষ এ প্রস্তাবে শিক্ষা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তরুণ সমাজকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বৈঠকে বক্তৃতাকালে মুন বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে থাকলে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রতার মতো সমস্যাগুলো তৈরি হতে শুরু করে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সফল হতে হলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে বিশেষ করে তরুণ সমাজকে আগে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন শিক্ষা, গণমাধ্যম ও উপযুক্ত নেতৃত্ব। তিনি বলেন, কেন আজকের তরুণ সহিংসতা ও উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকছে সেদিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামিক স্টেট, আল কায়েদা ও বোকো হারামের মতো জঙ্গী গ্রুপগুলো সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে দলে লোক ভেড়াচ্ছে। মুন মনে করেন, সন্ত্রাসবাদ রুখতে হলে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া প্রয়োজন আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা। জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রেক্রফট ও ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাস বিষয়ক কর্মকর্তা ক্যাথেরিন ক্যালোথিও তাই মনে করেন। ক্যাথেরিন বলেন, আইএস সামরিকভাবে পরাজিত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাদের চরমপন্থায় দীক্ষিতকরণ প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।
×