ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ালে জঙ্গীবাদ স্থান পাবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩ জুলাই ২০১৬

ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ালে  জঙ্গীবাদ স্থান পাবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় কমান্ডো অভিযানে ১৩ জিম্মি উদ্ধারের পাশাপাশি ছয় জঙ্গী-সন্ত্রাসীকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে অপারেশন চালানোর ফলেই আমরা সন্ত্রাসীদের খতম করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নামাজ বাদ দিয়ে মানুষ হত্যা করতে গিয়ে হামলাকারীরা কী ধর্ম রক্ষা করল? কেমন মুসলমান তারা? জঙ্গী হয়ে ঢুকে মানুষ হত্যা করল, তারা নিজেরাও তো বাঁচতে পারল না। আসলে হামলাকারীদের কোন ধর্ম নেই, সন্ত্রাসই তাদের ধর্ম। দেশবাসীকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রূখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে আরও সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। দেশের মানুষ যদি সবাই সচেতন হয় এবং ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দাঁড়ায়, তাহলে ওই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের স্থান বাংলাদেশে কোনদিন হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা এব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। বাংলাদেশের মাটিতে আমরা এই জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে কখনও এখানে থাকতে দেব না- এটা পরিষ্কার কথা আমার, এটা আমি বলে দিচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশে যত বাধাবিপত্তিই আসুক না কেন, সব চড়াই-উৎরাই পার হয়ে বাংলাদেশের অথনৈতিক উ্ন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের সব সময় একটা সিদ্ধান্ত রয়েছে, আমরা জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস চাই না, হতে দেব না। শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বহুল আলোচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের জাতীয় মহাসড়কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ১১টায় বোতাম টিমে এ দুটি মহাসড়কের চার লেনের উদ্বোধন করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীর কূটনৈতিকপাড়ায় সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর সামনে শ্বাসরুদ্ধকর যৌথ কমান্ডো বাহিনীর অভিযানের ফলাফল তুলে ধরেন। হামলাকারীরা গুলশানের ক্যাফেতে মানুষকে জিম্মি করার পর থেকে সারারাত গণভবনে বসে সবকিছু মনিটরিং এবং অভিযানের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন সরকার প্রধান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন উন্নয়নের দিক থেকে আজকে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল, সব দিক থেকে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই কেন জানি না আমাদের ওপর একটা আঘাত চলে আসে। এ সময় গুলশানে জিম্মি ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি জানি আপনারা সকলেই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। ঘটনার পর থেকেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত তৎপর ছিল। যেই মুহূর্তে ঘটনা ঘটেছে, সঙ্গে সঙ্গে টইল পুলিশ চলে যায়। পাশাপাশি ওই থানা পুলিশও চলে আসে। তারা যখন এ্যাকশন নিতে যায় তখন সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় আমাদের দুই জন পুলিশ অফিসার মারা যান। আরও প্রায় ৩০ জনের মতো আহত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখানে থেমে থাকিনি। একটি ঘটনা ভাল যে, জঙ্গী-সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়নি। তারা ওখানেই আটকা থাকে। এর মাঝে আমরা সেনাবাহিনীকে ডাকি। সেনাবাহিনীর কমান্ডো সিলেট, সাভার ও ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসে। কমান্ডো অপারেশন প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, এগুলো করতে করতে রাত প্রায় যখন ৪টা, তখন সকলে মিলে সমস্ত পরিকল্পনা গণভবনে বসে নেই কীভাবে অপারেশন চালানো হবে। এরপর কমান্ডো বাহিনী সেখানে গিয়ে অপারেশন শুরু করেন। তিনি বলেন, এই অপরারেশনে একটিই ভালো দিক যে, আমাদের ১০ ঘণ্টাও সময় লাগেনি। তার আগেই আমরা জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের উপর হামলা চালাতে সক্ষম হই এবং যারা জিম্মি ছিল তাদের ১৩ জনকে বাঁচাতে পেরেছি। বাকি কয়েকজনকে হয়ত বাঁচাতে পারিনি। কয়েকজন আহত অবস্থায় সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপারেশনকালে সন্ত্রাসীদের ছয় জনই ‘অন দ্য স্পট’ (ঘটনাস্থলেই) মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের হত্যা করা হয়। তারা সেখানেই মারা যায়। একজন ধরা পড়েছে। কাজেই ওখানে যে সন্ত্রাসীরা ছিল তারা প্রায় সবাই মারা যায়। এই সফল অপারেশন করার জন্য প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নসহ অপারেশনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। তারা আগে তারা টুকটাক একটা দু’টা করে মানুষকে হত্যা করে যাচ্ছিল। কিন্তু তারা হঠাৎ এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ করেছে। যারা এইভাবে জঙ্গী হয়ে ঢুকল এবং যারা এভাবে মানুষকে হত্যা করল- তারা তো নিজেরাও বাঁচতে পারল না। ঘটনাটিকে জঙ্গী হামলা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজান মাসে একজন মুসলমান যখন নামাজ পড়বে, এশার আজান হয়েছে। সে যাবে নামাজ পড়তে। আর সে (জিম্মিকারী সন্ত্রাসী-জঙ্গী) আজান উপেক্ষা করে গেল মানুষ খুন করতে! তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে কেমন মুসলমান তারা? এরা কেমন মুসলমান? কেমন ধর্ম রক্ষা করল? নামাজ আদায় রেখে তারা মানুষ খুন করতে চলে গেল? আর সেখানে নিজেরাও বাঁচতে পারল না। তাদেরও মরতে হলো। তাদের পরিবারই বা কি পেল? কেন যে এ ধরনের সন্ত্রাসের পথে মানুষ যায়, এটা আমার বোধগম্য হয় না। শেখ হাসিনা বলেন, যেভাবে তারা হত্যাগুলো করেছে সেগুলো দেখা যায় না। যেন একটা জিঘাংসা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। একটা মানুষ এভাবে আরেকটা মানুষকে কিভাবে আক্রমণ করতে পারে? তাও এই পবিত্র রমজান মাসে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আসলে এরা কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না। এদের কোন ধর্ম নেই, সন্ত্রাসটাই এদের ধর্ম। এটাই আমি মনে করি। যাই হোক আল্লাহর রহমতে সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের দমন করতে পেরেছি। এদেরকে খতম করতে পেরেছি। সেজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়া করি। আর যারা অপারেশনে সম্পৃক্ত ছিল তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। বক্তব্যের শুরুেেত দেশবাসীকে রমজানুল মোবারকবাদ এবং পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদ আসন্ন। পবিত্র ঈদ উপলক্ষে দেশের জনগণের জন্য ঈদের উপহার হিসেবে এই মহাসড়ক দুটো উৎসর্গ করলাম। এতে করে সবাই বাড়ি ফেরার যন্ত্রণা, যানজট থেকে মুক্তি পাবেন এবং নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন। সেই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা স্বাধীন দেশ গিয়েছিলেন বলেই আমরা দেশকে উন্নত করতে সক্ষম হচ্ছি। আমাদের সবসময় একটা লক্ষ্য রাজধানীর সঙ্গে সমগ্র বাংলাদেশের একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। যাতে দ্রুততার সঙ্গে মানুষ চলাচল করতে পারে, ব্যবসাবাণিজ্যসহ সকল কাজকর্ম আরও সুন্দরভাবে করতে পারে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা অবকাঠামো উন্নয়নের উপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেই। কারণ যেকোন দেশই যদি উন্নতি করতে হয়, তাহলে অবশ্যই অবকাঠামো উন্নয়ন একান্তভাবে প্রয়োজন। অবকাঠামো উন্নয়ন হলে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটে, কর্মসংস্থানের প্রসার হয়। দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হয়। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে জনগণের সেবা করতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে আমরা বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছি। দেশকে সব দিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
×