ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশীদের আগেই হত্যা করে জঙ্গীরা ॥ সেনাবাহিনীর ব্রিফিং

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ জুলাই ২০১৬

বিদেশীদের আগেই হত্যা করে জঙ্গীরা ॥ সেনাবাহিনীর ব্রিফিং

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্যারা কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে গুলশানের জিম্মি উদ্ধার ঘটনার পর সেনাবহিনীর পক্ষ থেকে শনিবার দুপুরে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অফিসার্স মেসে মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, শনিবার সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে অভিযান চালানো হয়। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মাথায় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ শেষ করে জীবিত ১৩ জনকে উদ্ধার করে আনে কমান্ডোরা। অভিযানে ৬ বন্দুকধারী মারা পড়েছে। ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, এক জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২’র ৭৯ নং সড়কে হলি আর্টিজান বেকারি নামক একটি রেস্টুরেন্টে দুষ্কৃতকারীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে প্রবেশ করে। তারা রেস্টুরেন্টে থাকা সকলকে জিম্মি করে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে পুলিশ কর্ডন করে সন্ত্রাসীদের যথেচ্ছ কর্মকা- থেকে নিবৃত করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব যে সাহসিকতা, আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করেছে তা অনন্য। তাদের এই অভিযানকালে ২ সাহসী পুলিশ অফিসার শাহাদত বরণ করেন এবং ২০-এর বেশি পুলিশ সদস্য আহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে অভিযান পরিচালনার জন্য সরকারপ্রধান কর্তৃক আদেশ প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিকল্পনা করা হয়। সেনাবাহিনী রাতে ঘটনাস্থলে অবস্থানরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের সহযোগে সম্মিলিতভাবে অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনা করা হয়। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, শুক্রবার রাতে বন্দুকধারীরা হামলা চালালে রাতভর ক্যাফেটি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ঘিরে রাখার পর সকালে সামরিক বাহিনী যুক্ত হয়ে শুরু করে কমান্ডো অভিযান। প্যারা কমান্ডোরা ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু করে ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যে সব অপরাধীকে নির্মূল করে সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে। এর পর তল্লাশি চালিয়ে ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এদের সবাইকে রাতেই হত্যা করা হয়। ধারাল অস্ত্রের মাধ্যমে নৃশংসভাবে এই হত্যাকা- ঘটানো হয়। মৃতদেহগুলো প্রচলিত নিয়ম মেনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। তাদের পরিচয় নিশ্চিতকরণের উদ্দেশে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শালের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তার মোবাইল নম্বর ০১৭৬৯০১২৫২৪। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারলেও তারা সবাই বিদেশী বলে জানানো হয়। অভিযান চালিয়ে একজন জাপানী, দুই শ্রীলঙ্কানসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী তার লিখিত বক্তব্যে বলেন। অভিযানে ছয় হামলাকারী মারা পড়েছে। এক হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপারেশন শেষে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যবহৃত পিস্তল, ফোল্ডেড বাঁট একে ২২, অবিস্ফোরিত আইইডি, ওয়াকিটকি সেটসহ বহু দেশী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের কেউ হতাহত হয়নি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, জিম্মি ঘটনা অবসানের পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়েছে। এছাড়া অপারেশনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যবৃন্দ নিরলসভাবে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সার্বিক কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে অতিদ্রুততার সঙ্গে অভিযান সফল করার জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত, দৃঢ়, সাহসী সিদ্ধান্ত ও সঠিক নির্দেশনার জন্যই এই অভিযান সফল হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনার বিস্তারিত তথ্যবলী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরবর্তীতে জানানো হবে। অভিযান চলাকালে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ায় ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। ব্রিফিংয়ে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, বিমান ও নৌবাহিনীর মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×