ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৩ জুলাই ২০১৬

অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে

রহিম শেখ ॥ চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পরিচালন মুনাফা বাড়লেও ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা অনেক কম। এই পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকের ঋণ ও খেলাপীঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর খেলাপীঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান দেয়ায় এর বিপরীতে প্রভিশনের পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা আরও কমবে। এদিকে ব্যাংকগুলোকে ৬ মাসের পরিচালন মুনাফা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে ও স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে হবে। ব্যাংকগুলো বলছে, সার্বিকভাবে আগের বছরের তুলনায় বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। আমদানি খাতও অনেক গতিশীল হয়েছে। এছাড়া সার্ভিস চার্জ থেকেও মুনাফার একটি বড় অংশ এসেছে। এগুলোর প্রভাব মুনাফার ওপরে পড়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের বেসরকারী ব্যাংকগুলো প্রায় সবাই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। ব্যাংকগুলো কিছুদিন পরে তাদের এ মুনাফার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পেশ করবে। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হবে। এর আগে যে কোন মাধ্যমে তা প্রকাশের ওপর বিএসইসির বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ কারণে আপাতত ব্যাংকগুলো তাদের পরিচালন মুনাফার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে বেশকিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা সবচেয়ে বেশি। ২০১৫ সালের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটির মোট পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৮৯৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ছিল ৮৪২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ৬১০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৯৫ কোটি টাকা। ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে বেশকিছু দিন ধরে আলোচনায় থাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক ৪৫ কোটি টাকার লোকসান করেছে। বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া অর্থের বিপরীতে আমানতকারীকে সুদ গুনলেও কোন আয় না আসায় বড় অঙ্কের এ লোকসান হয়েছে। গত ৬ মাসে ৪১০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রাইম ব্যাংক। আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা করেছে ৩১৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৩৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩১০ কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ২২৬ কোটি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২১০ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৮০ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংক ২৫৫ কোটি টাকা, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৭০ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংক ২০১ কোটি টাকা, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ৪১৫, ব্যাংক এশিয়া ২৭৮, এমটিবি ১৭৫। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত ৬ মাসে মেঘনা ৫৮, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ১০৭, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ৭০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারী একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, যে কোন ব্যবসার প্রবৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফাতেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে মুনাফা খুব সাংঘাতিক বেড়ে যাবে তা নয়। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত মুনাফা নয়। বছর শেষে পরিচালন মুনাফা থেকে কর, প্রভিশনসহ অনেক কিছু বাদ দিয়ে নিট বা প্রকৃত মুনাফা হিসাব করা হয়ে থাকে। ফলে মুনাফা খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না।
×