ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করব॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৩:০২, ২ জুলাই ২০১৬

সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করব॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর গুলশানে হোটেল হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে দুইদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে বলেছেন, এই বর্বর ও কাপুরুষোচিত আক্রমণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে নজিরবিহীন। সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে আমরা বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করবোই ইনশাল্লাহ। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করতে পারবে না। শনিবার রাত পৌণে আটটায় জাতীয় উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মুষ্টিমেয় বিপথগামী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সন্ত্রাস-বিরোধী কমিটি, কমি্যুনিটি পুলিশ এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সন্ত্রাসী মোকাবেলায় এগিয়ে আসারও উদাত্ত আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন একটি আত্ম-মর্যাদাশীল এবং আত্ম-নির্ভরশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তখন দেশী-বিদেশী একটি চক্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ ষড়যন্ত্রকারীদের কৌশল বাস্তবায়িত হতে দেবে না। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যে কোন মূল্যে আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত প্রতিহত করব। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আমরা যেকোন মূল্যে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাজধানীর গুলশানে হোটেল হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলা এবং কমান্ডো অপারেশনের মাধ্যমে জিম্মিদের উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার পুরোরাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মির ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সারারাত জেগে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, দফায় দফায় সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে যেকোন মূল্যে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন। গণভবনে গৃহীত কমান্ডো অপরাশেন মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে সফল হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ভোগ করা প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কমান্ডো অপারেশন এবং জিম্মি উদ্ধারে ঘটনা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। এরপর বিকাল পর্যন্ত জিম্মিদের উদ্ধার, নিহত দেশী-বিদেশী নাগরিক এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে করণীয় সিদ্ধান্ত নিতেও সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সরকারের একাধিক মন্ত্রী-নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। সবকিছু শেষে সার্বিক পরিস্থিতি জাতির সামনে তুলে ধরতেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বিপথগামীদের সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলেন, অস্ত্রের মুখে নিরীহ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এরা দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করাতে চায়। গণতান্ত্রিক পথে ব্যর্থ হয়ে এরা কোমলমতি যুবক-কিশোরদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনার সন্তানকে সুশিক্ষা দিন। তারা যাতে বিপথে না যায় সেদিকে নজর রাখুন। আর বিপথগামীদের প্রতি আহ্বান আপনারা সঠিক পথে ফিরে আসুন, ইসলামের মর্যাদা সমুন্নত রাখুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুক্রবার রাতে কতিপয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়। সেখান অবস্থানরত নিরস্ত্র, বেসামরিক নাগরিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং হত্যাকান্ড শুরু করে। পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা যখন এশা ও তারাবির নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন এই হামলা ধর্ম ও মানবিকতাকে অবমাননা করেছে। এই বর্বর ও কাপুরুষোচিত আক্রমণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে নজিরবিহীন। তিনি বলেন, হামলার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমার সরকার দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেয়। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত সেখানে পৌঁছায় এবং উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর কমান্ডোরা অভিযানে অংশগ্রহণ করে আজ (শনিবার) সকালে জিম্মিদের মুক্ত করে আনে। তিনি বলেন, ৬ জন হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। তিনজন বিদেশিসহ ১৩ জন জিম্মিকে আমরা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সমর্থ হই। প্রধানমন্ত্রী এ অভিযানে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ারসার্ভিসসহ অন্যান্য বাহিনীর যেসব সদস্য অংশ নিয়েছেন তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বিশ্বসম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ যারা একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান। তিনি বলেন, এই নৃশংস হামলায় দুই জন পুলিশ সদস্য নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমি নিহত পুলিশ সদস্য এবং সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতরা দ্রুত আরোগ্যলাভ করুন- মহান আল্লাহ-তায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করছি। নিহতদের স্মরণে দুইদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছি। দেশবাসীকে আশ্বস্থ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উপর আস্থা রাখুন। ত্রিশ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আমরা যেকোন মূল্যে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মুষ্টিমেয় বিপথগামী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সন্ত্রাস-বিরোধী কমিটি, কম্যুনিটি পুলিশ এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সন্ত্রাস মোকাবিলায় এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব কোমলমতি যুবক-কিশোর বিপথে পরিচালিত হচ্ছে, যারা তাদের মদদ দিচ্ছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন - মানুষকে হত্যা করে কী অর্জন করতে চান? ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীদের সমূলে নির্মুল করে আমরা বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করবই ইনশাআল্লাহ। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করতে পারবে না। আসুন, আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করি।
×