ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ব্যস্ত শেরপুরের জামদানী পল্লীর কারিগররা

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ২ জুলাই ২০১৬

ঈদে ব্যস্ত শেরপুরের জামদানী পল্লীর কারিগররা

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর ॥ ‘আর যাবো না দুবাই ঢাকা, ঘরে বসেই আনবো টাকা’ এ শ্লোগানে উৎসাহিত শেরপুরের প্রত্যন্ত পল্লীর বেকার যুবক-যুবতীরা। প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠা জামদানী পল্লী আলোর মুখ দেখায় এখন অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে এ পেশায়। ঈদুল ফিতরের ঈদকে ঘিরে দম ফেলার সময়টুকুও যেন নেই। শেরপুরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে গড়ে উঠা জামদানি পল্লী ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র। জেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত একটি গ্রাম চরশেরপুর ইউনিয়নের হাইটাপাড়া। ওই গ্রামে সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও নেই উন্নত রাস্তাঘাট। নেই রিকশা কিংবা মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোন যানবাহনে করে যাতায়াতের কোন সুযোগ। গ্রামের মানুষের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম কৃষি। হতদরিদ্র ওই গ্রামেরই ছেলে কামরুল ইসলাম। তিনি জীবিকার তাগিদে প্রায় ১১ বছর আগে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁও জামদানি পল্লীতে কাজে যোগ দেন। প্রথম কিছুদিন কাজ শিখে সেখানেই কারিগর হিসাবে কাজ করেন। এরপর তিনি গ্রামে ফিরে তার নিজের এলাকার বেকার ও হতদরিদ্র যুবকদের নিয়ে ২০০৬ সালে মাত্র ৯ হাজার টাকা পুঁজি ও ২ জন সহযোগি নিয়ে নিজেই একটি তাঁতের মাধ্যমে শুরু করেন জামদানি তৈরি। বর্তমানে ওই কারখানায় ১৪টি তাঁত মেশিনে জামদানী শাড়ী তৈরী হচ্ছে। এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক যুবক-যুবতী তাদের দারিদ্রতার হতশ্রী থেকে মুক্তি পেয়েছে। বর্তমানে তাদের উৎপাদিত শাড়ী ঢাকার অভিজাত দোকানে বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। একজন শ্রমিক নিজ বাড়িতে থেকে মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা আয় করছে এবং একজন সহযোগি পাচ্ছে ৬-৭ হাজার টাকা। কারখানার উৎপাদিত শাড়ীর সর্বনিম্ন মূল্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা। তবে অর্ডার পেলে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার শাড়ীও তৈরি করা হয়। ঘরে বসে থাকা বেকার মহিলারাও জামদানী তৈরির কাজ করে সংসারে এনেছে স্বচ্ছলতা। পুরনো কারখানায় কাজ শিখে আরও ৭টি বাড়িতে তৈরি হয়েছে নতুন কারখানা। সেখানে কাজ করছে আরও প্রায় শতাধিক বেকার যুবক-যুবতী। একসময়ের হতদরিদ্র বেকার যুবক কামরুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মেধা ও মননশীলতায় প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে উঠা জামদানী পল্লীতে কর্মহীন মানুষগুলো কর্ম পেয়ে বেশ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেই কালাতিপাত করছে। শ্রমিক সালেহা বলেন ,আমরা তো গ্রামের মহিলা, আগে ঘরে বসেই থাকতাম, কোন কাজ করতাম না। এহন এ জামদানী কাজ আসাতে বেশ আয় করতে পারছি, আর তা দিয়ে সংসারও ভাল চলছে। ঈদ উপলক্ষে জামদানীর কাজ বেশি থাকায় স্কুলপড়–য়া ছেলে-মেয়েরা কাজ করছে কারখানাগুলোতে। অষ্টম শ্রেণিপড়–য়া মীম জানালো, স্কুল বন্ধ, তাই জামদানীর কাজ করে যা আয় হবে তা দিয়ে ঈদে জামা কাপড় কিনবো। সুমন জামদানী কারখানার মালিক কামরুল ইসলাম বললেন, পুঁজির অভাব এবং গ্রামের ভালো রাস্তা না থাকায় শহর থেকে অনেক মানুষ ওই প্রত্যন্ত পল্লীতে গিয়ে শাড়ী কিনতে এবং অর্ডার দিতে ভোগান্তিতে পড়ছে। তাই উদ্যোক্তাদের এগুতে হচ্ছে অনেক কষ্ট করে। এ বিষয়গুলোতে সরকার নজর দিলে আমরা আরও ভাল করবো। নানা সীমাবদ্ধতার কথা বললেও বিসিকের তরফ থেকে ঋণদান করে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম খান জানান, আমরা ইতোমধ্যে কয়েকজন কারখানা মালিককে সহযোগিতা করেছি এবং তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
×