ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও অবৈধ অস্ত্রের রমরমা

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ২ জুলাই ২০১৬

হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও অবৈধ অস্ত্রের রমরমা

অনলাইন ডেস্ক ॥ পুলিশকর্তাদের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও শহরের অলিগলিতে যে বেআইনি অস্ত্র মজুত রয়েছে, ফের তার প্রমাণ মিলল। সপ্তাহ দুয়েক আগে এন্টালির দুই পাড়ায় গুলিবৃষ্টির ঘটনায় কয়েক জন অভিযুক্ত এখনও ফেরার। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে রিজেন্ট পার্ক থানার বাঁশদ্রোণীর জয়শ্রীতে এক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় চিন্তিত পুলিশ। পুলিশ জানায়, স্থানীয় নিরঞ্জনপল্লির একটি জমি ঘিরে দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পেশায় প্রোমোটার রাজীব নন্দী ওরফে জয়কে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের অনুমান, ঘটনায় ধৃত মনা অধিকারী, জনি গঙ্গোপাধ্যায় ও সুশান্ত নস্কর ওরফে সুখলালের মধ্যে মনা-ই গুলি করে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সিটি স্ক্যান রিপোর্টে রাজীবের গায়ে তিনটি গুলির ক্ষত মিললেও শরীরে মিলেছে দু’টি গুলি। লালবাজারের হিসেবে, ২০১৫-এ শহরে প্রায় ২০টি ঘটনায় বেআইনি অস্ত্র থেকে গুলি চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। হরিদেবপুরে পানশালার সামনে গুলিতে এক যুবকের মৃত্যুর পরে ওই বছরেই পুরভোটের দিন গিরিশ পার্কে গুলিতে জখম হন কলকাতা পুলিশের এক সাব-ইনস্পেক্টর। ২০১৬-র প্রথম ছ’মাসেও প্রায় ৮টি গুলি চলার ঘটনা ঘটেছে। শহরে এত অস্ত্র কোথা থেকে এল, সেই প্রসঙ্গ বারবার উঠেছে লালবাজারের ক্রাইম বৈঠকে। কিন্তু ছবিটা পাল্টায়নি। পুলিশ জানায়, বিধানসভা ভোটের পর থেকে এ নিয়ে ছ’বার গুলি চলল। ভোটের পরে বেহালায় এক সিপিএম সর্মথকের বাড়িতে গুলি চলে। ধরা পড়ে দুই দুষ্কৃতী। প্রগতি ময়দান এলাকাতেও এক ব্যক্তিকে লক্ষ করে গুলি চলে। পার্ক সার্কাসে শূন্যে গুলি ছুড়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। সপ্তাহ দুয়েক আগে একই দিনে দু’বার গুলি চলে এন্টালিতে। এর পরে বাঁশদ্রোণীর ঘটনা। পুলিশের একাংশের মতে, শহরের দুষ্কৃতীদের হাতে কত অস্ত্র মজুত, তারা কতটা বেপরোয়া, এই তালিকাই তার প্রমাণ। পুলিশের দাবি, বাঁশদ্রোণীর ঘটনার পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেটের বিবাদ। আহতের বাবা কার্তিক নন্দী জানান, একটি বহুতল নির্মাণ ও তাতে লাভ-লোকসান ঘিরে বিরোধী গোষ্ঠীর মনা, জনি, সুখলাল, সুব্রত ওরফে ভাই ও কালার সঙ্গে বিবাদ ছিল রাজীবের। বয়ানে জনি, সুখলাল ও সুব্রতর নামও বলেছেন রাজীব। পুলিশ জানায়, পয়লা বৈশাখও এ নিয়ে গোলমালে মারধরের অভিযোগ ছিল রাজীবের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দু’পক্ষই আমন্ত্রিত ছিল। অভিযোগ, ফের বচসা জুড়লে ব্যবসায়ী দু’পক্ষকেই চলে যেতে বলেন। বাইরে এসেও ঝামেলা চলতে থাকে। গুলিবিদ্ধ হন রাজীব। পুলিশের অনুমান, আগেই অস্ত্র মজুত রেখেছিল অভিযুক্তেরা। ভোটের আগে কলকাতার পুলিশ কমিশনার হিসেবে প্রথম বার দায়িত্ব নিয়ে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন রাজীব কুমার। বাহিনীকে আত্মতুষ্ট না হতেও বলেছিলেন। তাঁর আগের কমিশনার অবশ্য নিয়ম করে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে বলতেন। তবু এত বেআইনি অস্ত্রের রমরমা? লালবাজারেরই নিচুতলার একাংশের অভিযোগ, গুলি চলার পরে গ্রেফতার হচ্ছে অভিযুক্তেরা। কিন্তু অস্ত্রের জোগান নিয়ে খোঁজ হচ্ছে না। বিভিন্ন থানার অফিসারদের কথায়, এখন কিছু ঘটলে তবেই তল্লাশি হয় দুষ্কৃতীদের খোঁজে। তাঁদের অভিযোগ, আগে থেকে দুষ্কৃতীদের ধরতে বা অস্ত্রের খোঁজে অভিযানের অনুমতি মেলে না। পুলিশের একাংশের দাবি, কলকাতায় দুষ্কৃতীদের হাতে যত আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, তার খুব কম সংখ্যকই উদ্ধার হয়। নির্বাচন কমিশনের চাপে ভোটের আগে তল্লাশিতে কলকাতা থেকেই প্রায় ৫০টির বেশি বেআইনি অস্ত্র মেলে। কিন্তু ভোট-পর্ব মিটতেই সব চুপ। এই যুক্তি মানতে নারাজ লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘অস্ত্র উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান হয়।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×