ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিতে পৌঁছে শিরোপাস্বপ্ন পর্তুগালের

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২ জুলাই ২০১৬

সেমিতে পৌঁছে শিরোপাস্বপ্ন পর্তুগালের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্বপ্নপূরণ থেকে আর মাত্র দুই জয় দূরে পর্তুগাল ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। চলমান ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে ইউরোপের ব্রাজিলরা। বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্সের মার্শেইতে টুর্নামেন্টের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে পোল্যান্ডকে ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে পরাজিত করে পর্তুগাল। এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। ম্যাচে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি পর্তুগালের অধিনায়ক ও সেরা তারকা রোনাল্ডো। দুটি লোপ্পা সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। এরপরও সতীর্থদের নৈপুণ্যে শেষ চারে নাম লিখিয়েছে তার দল। এখন ২০০৪ সালের পর আরেকবার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন বুনছে পর্তুগীজরা। শুধু তাই নয়, নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ফার্নান্ডো সান্টোসের দল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেমিফাইনালে পর্তুগাল খেলবে ওয়েলস ও বেলজিয়ামের মধ্যকার ম্যাচের বিজয়ী দলের বিপক্ষে। কোচ সান্টোসের অধীনে টানা ১১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার আত্মবিশ্বাস নিয়ে পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল পর্তুগাল। এই ১১ ম্যাচের আটটিতেই জিতেছিল পর্তুগীজরা, ড্র করেছিল বাকি তিনটি। কোয়ার্টার ফাইনালেও পর্তুগীজদের অপরাজিত থাকার গৌরব অটুট থেকেছে। গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে এটা পর্তুগাল-পোল্যান্ডের তৃতীয় আর ইউরোতে প্রথম লড়াই। আগের দুটি ম্যাচ হয়েছিল বিশ্বকাপে। ১৯৮৬ সালে পোল্যান্ড ১-০ গোলে জিতলেও ২০০২ সালে পর্তুগাল ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল পোলিশদের। মার্শেইয়ের স্টাডে ভেলোড্রোমে ম্যাচের শুরুতেই চমক। দ্বিতীয় মিনিটেই কামিল গ্রসিচকির পাস থেকে পোল্যান্ডকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক রবার্ট লেভানডোস্কি। এবারের ইউরোতে পোল্যান্ডের সবচেয়ে বড় তারকার এটাই প্রথম গোল। পাল্টা আক্রমণ থেকে ডি বক্সের মধ্যে চলতি বলে অসাধারণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন বেয়ার্ন মিউনিখ তারকা। লেভার গোলটির পর অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন, নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছে পোলিশরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পিছিয়ে পড়ার পর প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পর্তুগাল। মাঝেমধ্যে পাল্টা আক্রমণ করতে থাকে পোলিশরা। ম্যাচের ৩১ মিনিটে রোনাল্ডোকে পোল্যান্ডের মিখাল পাজদান বক্সের মধ্যে ফেলে দেন। কিন্তু পর্তুগালের পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। দুই মিনিট পরই অবশ্য পর্তুগীজদের হতাশা দূর হয় অসাধারণ গোলে। ন্যানির সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে জোরালো শটে খেলায় সমতা আনেন রেনাটো সানচেজ। পর্তুগালের জার্সি গায়ে এটাই সানচেজের প্রথম গোল। ১৮ বছর বয়সী এই ফুটবলার দেশের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করার রেকর্ড গড়েন। এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে উপভোগ্য লড়াই হলেও নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আর গোল হয়নি। ইউরোতে রেকর্ড ১৯তম ম্যাচ খেলতে নামা রোনাল্ডোর ওপরে অনেক আশা করেছিল পর্তুগাল। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও গোলের দেখা পায়নি পোল্যান্ড ও পর্তুগাল। দু’দলকে তাই দাঁড়াতে হয়েছে টাইব্রেকারের লটারির সামনে। কিছুদিন আগে বিশেষ কোপা আমেরিকার ফাইনালে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার পক্ষে প্রথম শট নিতে গিয়ে ক্রসবার উঁচিয়ে মেরেছিলেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনাকেও আরেকবার ফাইনালে হারের কষ্টে পুড়তে হয়ে। যে কারণে মেসি অবসর পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু রোনাল্ডো এমন ভুল করেননি। পেনাল্টি শূটআউটে পর্তুগালের পক্ষে প্রথম শটে দর্শনীয় ভঙ্গিতে গোল করেন সি আর সেভেন। লেভানডোস্কিও প্রথম শট নিয়ে হাসি ফোটান পোলিশদের মুখে। দু’দলই গোল করে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পোল্যান্ডের পক্ষে চতুর্থ শট নিতে আসা জাকুব বোয়াস্টোকভস্কির শট রুখে দেন পর্তুগাল গোলরক্ষক। ফলে পর্তুগালের সামনে চলে আসে জয়ের সুযোগ। রিকার্ডো কারেসরা পঞ্চম শটটি পোলিশদের জালে পাঠালে জয় নিশ্চিত হয় পর্তুগালের। মাঠের নৈপুণ্যে নিষ্প্রভ থাকার কারণেই হয়ত টাইব্রেকারে জেতার পর বুনো উল্লাস করেন রোনাল্ডো। ম্যাচ শেষে পর্তুগাল অধিনায়ক বলেন, আমাদের জন্য রাতটা অবিস্মরণীয়। পর্তুগালের সেমিফাইনালে ওঠার লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। আমাদের দলের প্রত্যেককে অভিনন্দন জানাচ্ছি। ক্লাবের হয়ে অনেক সাফল্য পেলেও জাতীয় দলের জার্সিতে মেসির মতোই ব্যর্থ রোনাল্ডো। এবার তাই সব হতাশা ঘুচিয়ে শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে উঠতে মরিয়া তিনবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। সি আর সেভেন বলেন, আমরা স্বপ্ন পূরণের আরেকটু কাছে। এখন যে কোন কিছুই হতে পারে। সম্মানের দিক দিয়ে আমার কোন অপূর্ণতা নেই। এমনকি এখন আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেলেও আমি নিজেকে বিশেষ সম্মানিত মনে করব। তবে আমি সব সময়ই বলেছি, জাতীয় দলের হয়ে আমি অন্তত একটা শিরোপা জিততে চাই। আর আমি এ কথা কখনও লুকাতেও চাই না। আমরা এখন সঠিক পথেই আছি।
×