ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে এয়ারলাইন্সগুলোর বাম্পার ব্যবসা, টিকেট যেন সোনার হরিণ!

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ জুলাই ২০১৬

ঈদে এয়ারলাইন্সগুলোর বাম্পার ব্যবসা, টিকেট যেন সোনার হরিণ!

আজাদ সুলায়মান ॥ রমজানের শুরুতে এয়ারলাইন্সগুলো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে টিকেটের দামে বিশেষ ছাড় দিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করে। মাত্র দু’ সপ্তাহ না যেতেই সেই দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হয়েছে। ভাড়া বেড়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে। তারপরও মিলছে না টিকেট। ঈদ সামনে রেখে বিমানসহ দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর বাম্পার ব্যবসা হলেও সেবার মান বাড়েনি। তবে যাত্রীদের এ নিয়ে আপত্তি নেই। টিকেট পেলেই তারা যারপরনাই খুশি। এ সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো। রমজানে ঢাকা বরিশাল রুটে মাত্র দুই হাজার টাকায় টিকেট বিক্রির প্যাকেজ ঘোষণা করে বিমান। সেই টিকেট এখন সেই টিকেট চার হাজার টাকায়ও মিলছে না। একই অবস্থা সৈয়দপুর রুটেও। দুই হাজার টিকেট ছয় হাজার দিয়ে একটা টিকেট পাননি বিলকিস, যিনি চাকরি করেন বিমানেই। জানালেন, ইচ্ছে ঘরে ফেরার। কিন্তু টিকেট না পাওয়ায় ঢাকাতেই হচ্ছে ইচ্ছের বিরুদ্ধে। এ সম্পর্কে বিমানের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আহসান কাজী জনকণ্ঠকে বলেন, মার্কেটিং পলিসি তো সব সময় বাণিজ্যিক বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই করা হয়। এখন ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী বরিশালের টিকেট হয়ত ছয় হাজার টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু যদি কেউ বরিশাল থেকে ঢাকায় ফিরতে চান তিনি দুই হাজার টাকাতেই টিকেট পাবেন। আবার ঈদের পর ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়া যাবে দুই হাজার টাকায়। কিন্তু বরিশাল থেকে ঢাকায় ফিরতে লাগবে হয়ত দ্বিগুণ। কারণ যখন যে প্রান্তে যাত্রীর চাপ সেই প্রান্তেই দাম চড়া থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেবার মান সম্পকে কাজী বলেন, রমজানে আবার কিসের সেবা? যাত্রীরা কি রোজা রেখে কিছু পান করবে? শুক্রবার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজের টিকেটও শেষ। কেবল রোজার ঈদের নয়, এখন থেকে কোরবানি ঈদের টিকেটও আগাম বিক্রি হচ্ছে। চাপ এতটাই বেশি যে, আকাশপথে দেশের সব বিমান পরিবহন সংস্থার ৯০ শতাংশ টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ঈদের আগে ও পরে আকাশপথের টিকেট একেবারেই নেই। বাড়তি মূল্যের টিকেটও যাত্রীরা সাগ্রহে লুফে নিচ্ছেন। এ নিয়ে চলছে রীতিমতো কাড়াকাড়ি। শুধু অভ্যন্তরীণ রুটেই নয়, আন্তর্জাতিক রুটের অবস্থা আরও কঠিন। সাংবাদিক এ জেড এম রাহাগীর তার স্ত্রীর চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যাংকক যাওয়াটা খুবই জরুরী হলেও টিকেট পাননি। ঈদের বাকি এখনও এক সপ্তাহ। অথচ তিনি আরও এক সপ্তাহ আগে থেকেই বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে দৌড়াদৌড়ি করেও চারটি টিকেট পাননি। এমনকি পঁচিশ হাজারের টিকেট পঁয়ত্রিশ হাজারে মেলেনি। এ সম্পর্কে বিমানের পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) ডক্টর সাফিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন- ঈদে সব সময়ই দেশ-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর টিকেটের দাম বাড়ে। কিন্তু এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারী ছুটি। যে কারণে সরকারী চাকুরেরা পরিবার নিয়ে নিকটবর্তী কলকাতা, নেপাল, মিয়ানমার, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে ছুটছেন। এমনকি দুবাইয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তাতে শুধু বিমান নয়, সব এয়ারলাইন্সেই চাপ পড়েছে অবিশ্বাস্য। টিকেট সঙ্কট থাকায় অনেকে আবার দালালও ধরছে। দালাল ধরে নির্দিষ্ট দামের চেয়ে চার হাজার টাকা বেশি দিয়ে বেসরকারী এয়ারলাইন্সের একটি টিকেট সংগ্রহ করেছেন লাইজু। বাস এবং ট্রেনের মতো আকাশপথেও ঈদে টিকেটের জন্য বেজায় চাপ। অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি ইউএস বাংলা, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ার ও নভো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলাচল করছে। সরকারী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও কক্সবাজার, যশোর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও সৈয়দপুর রুটে ফ্লাইট চলাচল নিয়মিত রেখেছে। বেসরকারী এয়ারলাইন্সগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে টিকেটের দাম না বাড়ালেও বিমানের কিছু রুটে টিকেটের দাম বেড়েছে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, মূলত ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ ও কেনাকাটা করতে এখন অনেক সচ্ছল পরিবার দেশের বাইরে যায়। আর এসব যাত্রীকে লক্ষ্য করেই এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো নানা রকম প্যাকেজ সুবিধা ঘোষণা করেছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন গন্তব্যে জন্য রয়েছে এসব প্রস্তাব। আবার প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রচুর প্রবাসী দেশে এসেছেন। ঈদের পর তারা আবার কর্মস্থলে ফিরবেন। এ কারণে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে। তাদের অনেকেই রিটার্ন টিকিটের তারিখ পরিবর্তন বা বুকিং নিশ্চিত করতে আসছেন। এ কারণে দুবাই, মাস্কাট, সৌদি আরবসহ কুয়ালালামপুর, কলকাতা ও দমদম রুটে স্বাভাবিকের চেয়ে এখন যাত্রীর চাপ বেশি। বাংলাদেশ বিমানের সহকারী ম্যানেজার (জনসংযোগ) তাসমিন আক্তার বলেন, অতিরিক্ত চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঈদের চার দিন আগে থেকেই নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে আরও চার-পাঁচটি ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইউএস বাংলা এয়াারলাইন্সের ম্যানেজার (রিজার্ভেশন) মুশফিকুর রহমান বলেন, ঈদে ইউএস বাংলা ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে। যশোরে তিনটি, রাজশাহীতে তিনটি ও সৈয়দপুরগামী ফ্লাইট দুটি বাড়ানো হয়েছে। এর পরও যাত্রীদের চাপ কমছে না। এ পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ আরও ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে। তবে ইউএস বাংলা ঈদ উপলক্ষে কোন মূল্য বাড়ায়নি।
×