ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অসহায় নারীর আশার আলো

কোমল হাতের ছোঁয়া, শণ-সুতোয় শৌখিন সামগ্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ জুলাই ২০১৬

কোমল হাতের ছোঁয়া, শণ-সুতোয় শৌখিন সামগ্রী

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ শণ-সুতা দিয়ে সুতলির ব্যাগ, পার্স, সাইডব্যাগ, শপিংব্যাগ, ব্রেসলেট ও পুতুলসহ ৩৭১টি শৌখিন সামগ্রী বানিয়ে দু’শতাধিক নারী বেঁচে থাকার পথ খুঁজে পেয়েছেন। বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের কারণে অল্প বয়সে স্বামী পরিত্যক্তার খাতায় নাম লেখাতে হয়েছে মাসুদা খানম (১৮), শান্ত¡না রানী (১৭), রানু আক্তারসহ (২৫) শতাধিক তরুণী-নারীকে। এছাড়া বিধবা, দুস্থ ও অসহায় অপর শতাধিক নারীও তাদের অভাবের সংসারে যখন চারদিকে অন্ধকার দেখছিলেন, ঠিক তখনই ওই সব নারীর পাশে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। কঠোর পরিশ্রমের কারণে ওই সব নারী প্রত্যেকেই আজ স্বাবলম্বী। বাবার অভাবের সংসারে বাল্যবিয়ের পর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় অধিকাংশ নারীকে অল্প বয়সে স্বামী পরিত্যক্তার খাতায় নাম লেখাতে হয়েছে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বাগধা গ্রামে ১৯৮৪ সালে বাগধা এন্টারপ্রাইজ নামের প্রকল্পটি শুরু করা হয়। ২৫ শতক জমির ওপর ১২০ জন স্থায়ী কর্মী ও পাঁচজন স্টাফ নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলেও বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ও অনিয়মিত প্রায় দু’শতাধিক বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী কাজ করছেন। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান উপকরণ হচ্ছে শণ-সুতা। এ কুটিরশিল্পটি স্বল্প সময়ে দেশে তথা বহির্বিশ্বে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। এখানকার উৎপাদিত সামগ্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ সুতলির ব্যাগ, পার্স, সাইডব্যাগ, শপিংব্যাগ, ব্যাসলেট, পুতুলসহ ৩৭১টি শৌখিন সামগ্রী। প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার কালীপদ অধিকারী জানান, চলতি বছর উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় এক কোটি টাকার। উৎপাদিত পণ্যের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে রফতানি করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দারিদ্র্য জয় করে ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন বাগধা গ্রামের শেফালী হালদারসহ অসংখ্য নারী। এককালে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো সেই শেফালী হালদারের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল হিসেবে তার বড় ছেলে বর্তমানে ঢাকার বারডেম হাসপাতালের শিশু মেডিসিন বিশেষষ্ণ ডাঃ অমৃত লাল হালদার। এছাড়াও আগৈলঝাড়ায় এমসিসির চারটি প্রজেক্ট যথাক্রমে বাগধা এন্টারপ্রাইজ, জোবারপার এন্টারপ্রাইজ, কেয়া পাম হ্যান্ডিক্রাফ্টস ও বিবর্তনে প্রতিদিন বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় দুস্থ সহস্রাধিক নারী হস্তশিল্পের মাধ্যমে আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারী সংস্থা মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) একটি প্রকল্পের মাধ্যমে শণ-সুতা দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে (হস্তশিল্পের মাধ্যমে) একদিকে যেমন স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারীরা খুঁজে পেয়েছেন বেঁচে থাকার পথ, তেমনি প্রতিষ্ঠানটি ওই সব নারীর তৈরি হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী বিদেশে রফতানির মাধ্যমে আয় করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। ব্যতিক্রমধর্মী এ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত বাগধা গ্রামে। ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, জেন্ডার, কোয়ালিটি, এ্যাওয়ারনেস, পরিবেশ, চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সামাজিক মর্যাদার মাধ্যমে নারীকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাওয়া এমসিসি প্রকল্পের আওতাভুক্ত বাগধা এন্টারপ্রাইজ নামের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার কালীপদ অধিকারী জানান, সঠিক পারিশ্রমিক-সঠিক ব্যবসা’ এ মূল সুরকে ধারণ করে দুস্থ-অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫৬টি দেশে বেসরকারী এ সংস্থা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তাদের কর্মসূচীর আওতায় দেশের হাজার হাজার দুস্থ, অসহায় নারী আজ স্বাবলম্বী। বাংলাদেশে এমসিসির ৯টি শাখায় অসংখ্য দুস্থ নারী তাদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আত্মমর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে পেয়েছেন। একই সঙ্গে ওই সংস্থাটি দুস্থ নারীদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল হিসেবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে, যা দেশের জন্য বয়ে এনেছে বিরল সম্মান। আগৈলঝাড়ায় এমসিসির চারটি প্রজেক্টে সহস্রাধিক দুস্থ নারীকে নিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রকল্পগুলো হলোÑ বাগধা এন্টারপ্রাইজ, জোবারপার এন্টারপ্রাইজ, কেয়া পাম হ্যান্ডিক্রাফ্টস ও বিবর্তন। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক নারী উৎপাদনের ওপর প্রতি মাসে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এছাড়াও বছরের উৎপাদনের লভাংশ্য থেকে একটি অংশ এসব নারীর মাঝে সমহারে বণ্টন করে দেয়া হয়, যা দিয়ে প্রতিটি নারীই আজ স্বাবলম্বী।
×