ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদে ঘরে ফেরা

ঈদের লম্বা ছুটিতে ঘরমুখো মানুষের স্রোত

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২ জুলাই ২০১৬

ঈদের লম্বা ছুটিতে ঘরমুখো মানুষের স্রোত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাল্টে গেছে ঘরে ফেরার দৃশ্যপট। লম্বা ছুটি। তাই এখন পর্যন্ত কোথাও ভোগান্তি নেই। স্বাচ্ছন্দ্যে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন ঢাকার মানুষ। শুক্রবার ছুটির দিনে ঘরমুখো মানুষের স্রোত ছিল টার্মিনালমুখী। তবে কমলাপুল রেল স্টেশনে ভিড় হলেও অস্বাভাবিক নয়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের চিত্র একই রকমের। তুলনামূলক সড়ক পথে ভিড় ছিল বেশি। সবক’টি বাস টার্মিনালে যাত্রী ছিল বেশ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস ও ট্রেন স্টেশনে অপেক্ষার ভোগান্তি গত কয়েক বছর দেখা গেলেও এবার তা হয়নি। এ কারণে সন্তুষ্ট সবাই। শুক্রবার বেশিরভাগ মহাসড়ক ছিল যানজটমুক্ত। এদিকে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট নেয়া যাত্রীরা শুক্রবার সকাল থেকে যাত্রা শুরু করেছেন। অর্থাৎ বিভিন্ন সময়ে এক জুলাইয়ের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছে নৌ-সড়ক ও রেলপথের যাত্রীদের জন্য। পরিবহন মালিকরা বলছেন, ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় নেই। সকালে অনেক গাড়ির আসন ফাঁকা যাচ্ছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৬ জুলাই বুধবার ঈদ ধরে এবার ৫, ৬ ও ৭ জুলাই রোজার ঈদের ছুটি নির্ধারিত আছে। আর ৩ জুলাই রবিবার শব-ই-কদরের ছুটি। মাঝের একমাত্র কার্যদিবস ৪ জুলাই সোমবারও সরকার ছুটি ঘোষণা করায় এবার ঈদে টানা নয় দিন ছুটি পেয়েছেন অনেকে। গাবতলীতে শ্যামলী পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক পারভেজ বলেন, ৪০ শতাংশ মানুষ বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়ায় শুক্রবার তেমন ভিড় নেই। ২৭ রোজার দিন ভিড় হতে পারে। দিনাজপুরের মিনহাজ জানান, গাবতলী থেকে হানিফ পরিবহনে শুক্রবার সকাল ৯টার বাসের টিকেট কেটেছিলেন। সোয়া ১০টায়ও সে গাড়ি টার্মিনালে আসেনি। হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, ‘ঘড়ি ধরেই’ গাড়ি ছাড়ছেন তারা। অবশ্য গাড়ি ছাড়তে যেটুকু দেরি হচ্ছে সেজন্য হালকা যানজটকে দায়ী করেন তিনি। গাবতলীতে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক সোহেল হাওলাদার বলেন, তাদের সকাল ৮টার গাড়িতে সাতটি সিট ফাঁকা গেছে। গাবতলী বাস টার্মিনালে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক সঞ্জিত কুমার দাস জানান, সকালে তাদের ১০টি গাড়ি ছাড়ার কথা থাকলেও যাত্রী কম থাকায় ছয়টি ছেড়েছেন। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ, সিলেট, হবিগঞ্জ, পাবনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর ও শেরপুরের যাত্রী সবচেয়ে বেশি। সায়েদাবাদ বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানিয়েছেন, যাত্রী বেড়েছে। তবে খুব বেশি নয়। এখন পর্যন্ত সহনীয় অবস্থায় আছে। ঈদের কারণে রাতভর গাড়ি চালানোর কথা জানান তিনি। শুক্রবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিকেল পর্যন্ত স্টেশন থেকে প্রায় ২০টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সোয়া এক ঘণ্টা এবং খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে ঢাকা ছেড়েছে বলে জানান এক কর্মকর্তা। খুলনা যেতে আগেভাগে স্টেশনে এসেও ঠিক সময়ে ট্রেনের দেখা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, সিলেট ও রাজশাহীর ট্রেন কিছুটা বিলম্বে ছাড়ার অভিযোগ যাত্রীদের। ভিড় বাড়েনি সদরঘাটে ॥ সদরঘাটে যাত্রী চাপ বেড়েছে। কিন্তু তা মাত্রা ছাড়ায়নি। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে যাত্রী চাপ। এখন বেশিরভাগ লঞ্চ পাচ্ছেন কাক্সিক্ষত যাত্রী। অর্থাৎ আসন খালি নিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) যুগ্ম-পরিচালক মোঃ জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঈদে নির্বিঘœ যাতায়াতের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে সদরঘাটের ১৪টি প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে ১৪টি সিসি-টিভি। যাত্রীদের চলাচলের সুবিধায় ৪ হাজার ২০০ বর্গফুট পার্কিং স্পেস বাড়ানো হয়েছে। চাঁদপুর ও বরিশালের ডে-সার্ভিসের’ যাত্রীরা এখন থেকে লালকুঠির ঘাট দিয়ে যাবেন। এর ফলে সদরঘাটের মূল পন্টুনে যাত্রীর চাপ কমবে। সারা দেশে ৪১টি নৌ-রুট আছে এবং লঞ্চের সংখ্যা ১৯০টি। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে সদরঘাটে ঢাকা মহানগর পুলিশের পাশাপাশি ১৯৫ জন নৌ-পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। নদীতে ছয়টি বোট সবসময় টহল দেবে। দায়িত্ব পালন করবে র‌্যাব, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের পাশাপাশি বিএনসিসির ৫০ জন এবং মেরিন ক্যাডেটের ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী। বৃহস্পতিবার সদরঘাট থেকে ঈদের স্পেশাল সার্ভিস শুরু হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ কর্পোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ বরকত উল্যাহ। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সদরঘাট থেকে দুটি স্টিমার মোড়লগঞ্জ ও হুলার হাট গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় হুলার হাট যাবে ‘লেপচা এবং সাড়ে ৬টায় যাবে মাসুদ’। তিন জুলাই থেকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরে সড়ক পথে যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে এবং মনিটরিং টিমসমূহের কার্যক্রম সমন্বয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। আগামী তিন জুলাই থেকে নয় জুলাই পর্যন্ত মোট সাত দিন নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম চলবে। বিআরটিএ’র এলেনবাড়ির (তেজগাঁও) সদর দফতরে অবস্থিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নং-০২-৯১৩০৬৬২, মোবাইল নং- ০১৯৬৬৬২২০১৯। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জাতীয় কমিটির ॥ ঈদে ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সারাদেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি (এনসিপিএসআরআর)। যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে কমিটির নেতারা ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট টার্মিনাল) এবং মাওয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটসহ সকল মহাসড়ক, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনারও দাবি জানিয়েছেন। শুক্রবার জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে এক যুক্ত বিবৃতিতে এসব দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে অগণিত মানুষ স্বজনদের সান্নিধ্য প্রত্যাশায় নৌ, সড়ক ও রেলপথে তাদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পথিমধ্যে নানা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ঘরমুখী লাখ লাখ মানুষের যাত্রাপথে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও দুর্ঘটনা রোধে পুলিশ, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান। এবার ডেকে ডেকে টিকেট বিক্রি হয়েছে- রেলমন্ত্রী ॥ ঈদযাত্রার রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, এবার যাত্রীদের ডেকে ডেকেও টিকেট বিক্রি করা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় আমাদের ব্যবস্থাপনা খুব ভাল। টিকেট সহজলভ্য ছিল বলে যাত্রীদের কোন ঝামেলা হয়নি। এবার তো আমরা অনেক যাত্রীকে ডেকেও টিকেট বিক্রি করেছি।
×