ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের রক্ত ও কেমিক্যাল পাচার হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২ জুলাই ২০১৬

সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের রক্ত ও কেমিক্যাল পাচার হচ্ছে

নিখিল মানখিন ॥ সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের রক্ত এবং বিভিন্ন রোগ জীবাণু শনাক্তকরণের দামী কেমিক্যাল পাচার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। একটি সরকারী হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ ব্যাগ রক্ত পাচার হয়ে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া যাবে। এই পাচারকারী চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক বিভাগের কিছু সংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে। বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সরকারী হাসপাতালের কিছু সংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এমন অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সরকারী হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাচার হওয়ার ঘটনা বেশ পুরনো। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগে ওষুধ পাচার অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের রক্ত এবং বিভিন্ন রোগ শনাক্তকরণের দামী কেমিক্যাল পাচারের ঘটনা। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন শ্যামলী এলাকার ২২/১৩ খিলজি রোডের সেবিকা ব্লাড ব্যাংক এ্যান্ড ট্রান্সফিউশন সেন্টারে অভিযান চালায় র‌্যাব-২ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। বিভিন্ন অভিযোগে ওই ব্লাড ব্যাংকের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট মোঃ তারিকুল ইসলাম (২৪) ও সহকারী পরিচালক মোঃ রবিউল ইসলামকে (৪৮) অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মোবাইল কোর্ট মামলা নং- র‌্যাব-২/১০৮/২০১৬। র‌্যাবের মামলায় লেখা রয়েছে, পটুয়াখালীর বাউফল থানার নারায়ণ বাসা গ্রামে মোঃ রবিউল ইসলামের বাড়ি। পিতা মৃত মোঃ আব্দুর রশীদ ও মাতা হাসিনা বেগম। এই মোঃ রবিউল ইসলাম আর কেউ নন, তিনি রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত মোঃ রফিকুল ইসলাম। তবে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলায় যে আসামির নাম ‘মোঃ রবিউল ইসলাম’ লেখা রয়েছে, তিনি সেই ব্যক্তি নন বলে দাবি করেছেন মোঃ রফিকুল ইসলাম। এ বিষয়ে সেবিকা ব্লাড ব্যাংক এ্যান্ড ট্রান্সফিউশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, র‌্যাবের অভিযানে অভিযুক্ত মোঃ রবিউল ইসলামই হলেন মোঃ রফিকুল ইসলাম। তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে কাজ করেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানে রক্ত দিতে এসে তিনি র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আটক হন। বর্তমানে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। মোঃ রফিকুল ইসলাম সরকারী হাসপাতালেই কর্মরত আছেন বলে জানান মোঃ সাখাওয়াত হোসেন। সেবিকা ব্লাড ব্যাংক ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ এবং র‌্যাবের মামলায় লেখা ঠিকানা ও মাতা-পিতার নাম যাচাই করে জানা গেছে, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের মোঃ রফিকুল ইসলামই হলেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে আটককৃত মোঃ রবিউল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবু আজম জনকণ্ঠকে বলেন, মোঃ রফিকুল ইসলাম আমাদের হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন। কিন্তু তার বিষয়ে আনীত অভিযোগ ও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানি না। তাছাড়া আমাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানান পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবু আজম। র‌্যাবের অভিযানের সময় উপস্থিত সেবিকা ব্লাড সেন্টারের এক কর্মচারী জনকণ্ঠকে জানান, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে কর্মরত মোঃ রফিকুল ইসলামই হলেন মোঃ রবিউল ইসলাম। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা তাড়াহুড়ো করে ‘মোঃ রফিকুল ইসলাম’-এর জায়গায় ‘মোঃ রবিউল ইসলাম’ লিখেছেন। গ্রামের ঠিকানা ও মাতা-পিতার নামও ঠিক রয়েছে। তিনি ব্লাড নিয়ে ব্যবসা করতেন। তাছাড়া আমি নিজেই ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম বলে জানান সেবিকা ব্লাড সেন্টারের ওই কর্মচারী। রাজধানীর সরকারী হাসপাতালসমূহ সরেজমিন ঘুরে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। সরকারী হাসপাতালের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী জনকণ্ঠকে জানান, সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর প্রয়োজনে অনেক সময় রক্ত চাওয়া হয়। রোগীর অভিভাবকরা দাতা সংগ্রহ করে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেক সময় সংগৃহীত রক্তের ব্যাগের সব কটি দরকার পড়ে না। রক্তের এই বাড়তি ব্যাগ তখন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে সঞ্চিত থাকে। একই গ্রুপের কোন অসহায় রোগীর জন্য রক্তের দরকার হলে ব্লাড ব্যাংকে সঞ্চিত ওই বাড়তি রক্ত নামমাত্র ফি নিয়ে প্রদান করার বিধান রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের অসাধু চক্রের সদস্যরা ওই সব রক্তের ব্যাগ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরবরাহ করে ব্যবসা করেন।
×