ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থায়ন জটিলতার মধ্যে শুরু হচ্ছে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপন

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২ জুলাই ২০১৬

অর্থায়ন জটিলতার মধ্যে শুরু হচ্ছে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপন

রশিদ মামুন ॥ অর্থায়ন জটিলতার মধ্য দিয়ে সারাদেশে বৃহৎ পরিসরে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জোনের জন্য তিন লাখ প্রিপেইড মিটার কিনছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধি এবং বিদ্যুত বিল শতভাগ আদায় করার লক্ষ্যে দেশে প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম হাতে নেয়া হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনায় বলা হচ্ছেÑ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুতসেবা দেয়া হবে। উপসচিব সুরাইয়া আখতার জাহার স্বাক্ষরিত পৃথক দুই পত্রে বিদ্যুত বিভাগকে তিন লাখ প্রিপেইড মিটার ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পত্রে দেখা যায়, পিডিবির নিজস্ব অর্থায়নে প্রিপেইড মিটার কেনা হবে চীন থেকে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। চীনের হেক্সিং ইলেট্রিক্যাল কোম্পানির কাছ থেকে মিটারগুলো কেনা হবে। এ ব্যয়ের মধ্যে মিটারের ডিজাইন থেকে কমিশনিং এবং টেস্টিং করবে চীনা কোম্পানিটি। প্রিপেইড মিটারিং ব্যবস্থায় গ্রাহক ব্যবহারের আগেই বিদ্যুত বিল পরিশোধ করেন। এক্ষেত্রে বিতরণ কোম্পানির মিটার রিডিং, বিল প্রণয়ন এবং আদায়ের কোন ঝামেলা থাকে না। গ্রাহক চাইলেও নির্দিষ্ট সীমার উপরে বিদ্যুত ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রিপেইড মিটারে যতক্ষণ টাকা থাকবে ততক্ষণই গ্রাহক বিদ্যুত ব্যবহার করতে পারবেন। গ্রাহক দোকান থেকে মোবাইল কার্ডের মতো কার্ড ক্রয় করে নিজেই রিচার্জ করে নিতে পারবেন। অর্থ শেষ হয়ে আসার আগেই গ্রাহককে মিটার সঙ্কেত দেবে, যাতে গ্রাহক ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন। চট্টগ্রাম জোনে এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৫০টি সিঙ্গেল ফেইজ এবং তিন হাজার ২৫০টি তিন ফেইজের মিটার কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৩ কোটি ৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে কুমিল্লা জোনে এক লাখ ৪৫ হাজার ৪০০টি সিঙ্গেল ফেইজ এবং তিন ফেইজের চার হাজার ৬০০টি মিটার কেনা হবে। এতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ কোটি ২৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ গড়ে একটি মিটার বাবদ খরচ হবে চার হাজার ৮৪৪ টাকা। অর্থাৎ সারাদেশে এ প্রক্রিয়া ছড়িয়ে দিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। তবে বিল প্রস্তুতে মিটার রিডিংয়ের কোন প্রয়োজন না পড়লে এ খাতে ব্যয় কম হবে। অন্যদিকে এ প্রক্রিয়ায় চুরিও হ্রাস করা সম্ভব। এতে বিনিয়োগকৃত অর্থ সহজেই ফেরত আসা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দাতারা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে প্রকল্পের অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন প্রকল্পটি ইআরডিতে পড়ে রয়েছে। এর আগে পিডিবির বিতরণ এলাকার জন্য প্রায় চার হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ইআরডি কোন অর্থের সংস্থান করে দিতে পারেনি। সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে প্রিপেইড মিটার বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যদিও এখন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বলছে তা সম্ভব নয়। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের ছয়টি অঞ্চলে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে পিডিবি। ২০১৮ সালের মধ্যে এসব মিটার লাগানো হবে। এতে মোট সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। পিডিবি বলছে, তাদের রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের ৬টি জোনে ৩৯ লাখ গ্রাহকের প্রিপেইড মিটার দরকার। যদিও বিদ্যুত বিভাগ পিডিবির সঙ্গে আরও চার লাখ প্রিপেইড মিটার যোগ করে ৪৩ লাখ মিটারের জন্য প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প তৈরি করে। তবে অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যায়নি। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রিজার্ভ থেকে সহজ শর্তে গত বছর সেপ্টেম্বরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানায়। তবে সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
×