ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিহাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে মস্কোর কাছে ওয়াশিংটনের সামরিক প্রস্তাব

সিরিয়ায় রুশ-মার্কিন মৈত্রী!

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২ জুলাই ২০১৬

সিরিয়ায় রুশ-মার্কিন মৈত্রী!

যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় জিহাদী দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন এক সামরিক মৈত্রী গড়ে তুলতে চাইছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও টেলিগ্রাফের। প্রস্তাবটি চলতি সপ্তাহে মস্কোর কাছে পাঠানো হয় বলে জানা যায়। এটি হবে সিরিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নীতির সুস্পষ্ট পরিবর্তন। দু’পরাশক্তি যুদ্ধে পরস্পর বিরোধী পক্ষগুলোকেই সমর্থন করে এসেছে। চুক্তিটির মূল বিষয় হলো আমেরিকা ও রাশিয়া সিরিয়ারআল কায়েদার শাখা জাবহাত আল-নুসরার উপর বোমাবর্ষণ শুরু করবে। এর বিনিময়ে রাশিয়া এর বড় মিত্র আসাদ সরকারকে মার্কিন সমর্থিত বিদ্রোহী দলগুলোর ওপর বিমান হামলা বন্ধ করতে চাপ দেবে। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে এ কথা জানান। প্রস্তাবে মূলত অনানুষ্ঠানিকভাবে নিরাপদ এলাকা সৃষ্টি করতে বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দলগুলোর সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানানোর বদলে ঐসব এলাকা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে দেবে এবং এগুলোর ওপর বোমাবর্ষণ করতে রাশিয়া ও সিরিয়া সরকারকে নিষেধ করা হবে। প্রস্তাবটি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্যক্তিগতভাবে অনুমোদন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সমর্থন করেছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ঐ খবরের সত্যতা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে সিরীয় শাসকগোষ্ঠীর বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার দায়দায়িত্ব নিয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা আমাদের নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি আল কায়েদা ইরাকের সৃষ্ট হুমকি সম্পর্কে সজাগ আছি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়াতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেও য়ার কথা ভাবছে। এক উর্ধতন বিশ্লেষক আলাপ-আলোচনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বলে টেলিগ্রাফকে নিশ্চিত করেছেন। ওয়াশিংটন ও মস্কো সিরিয়ার আকাশসীমায় একে অপরকে সহ্য করে এসেছে এবং ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ওপর বোমাবর্ষণ করতে ক্রমশ আরও সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু মার্কিন সরকার এখনও অবধি কোন বাস্তব মৈত্রীর কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করা থেকে বিরত রয়েছে। মে মাসে রাশিয়া আল-নুসরার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অনুরূপ প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা তখন ঐ ধারণার প্রতি শীতল সাড়াই দিয়েছিলেন। আল-নুসরা প্রধানত সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধেই লড়াই করছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে রুশ ও মার্কিন জঙ্গী বিমানগুলো আকাশে একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে আসে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিলিশিয়া দল নিউ সিয়ারান আর্মির এক ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণের দায়ে মস্কোকে অভিযুক্ত করা হয়। যদি পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়, তবে সেটিকে আসাদ শাসকগোষ্ঠী এক সাফল্য হিসেবেই দেখবে। কারণ তারা পশ্চিমের চোখে দামেস্কের একঘরে হয়ে থাকার অবসান ঘটাতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা আইএস ও অন্যান্য জিহাদী দলকে দমন করার উপায় বের করতে ব্যতিব্যস্ত থাকায় দামেস্ক নিজেকে সিরীয় সমস্যা সমাধানের অন্যতম পক্ষ বলে উপস্থাপন করল। বিশিষ্ট বিশ্লেষক ও সিরীয় বিশ্লেষকরা প্রকাশিত প্রস্তাবকে অবজ্ঞার সঙ্গে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা সতর্ক করে দেন যে, বিদ্রোহী দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করা থেকে সিরীয় সরকারকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে রাশিয়া সামান্য উৎসাহ বা সামর্থই দেখিয়েছে। আটিলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ফয়সাল ইতানি বলেন, ওবামা প্রশাসন আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। এবং গৃহযুদ্ধের শীঘ্রই মীমাংসা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করে। ওই প্রস্তাবই সেটিরই অতিরিক্ত প্রমাণ। ইতানি বলেন, ওবামার মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় ওই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো সহিংসতাকে বছরের শেষ অবধি নিয়ন্ত্রণে রাখা। এরপর সেটি হবে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের সমস্যা।
×