ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

রাজনীতির শিষ্টাচার বনাম শিষ্ট-অশিষ্টের সমাজ

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২ জুলাই ২০১৬

রাজনীতির শিষ্টাচার বনাম শিষ্ট-অশিষ্টের সমাজ

শিষ্টাচার সমাজ থেকে শেষ হয়ে গেছে? শিষ্টাচার জীবন থেকে চলে গেছে? একেবারে চলে গেছে বলা ঠিক হবে না। এখনও শিষ্টাচার আছে বলে সমাজ আছে। রাষ্ট্র তার গতি হারায়নি। রাজনীতি একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েনি। ক’দিন আগে দীপ্ত টিভিতে একটি টক-শোতে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। আমরা ৪ জন। গুণী উপস্থাপক রুবাইয়াত ফেরদৌসের পরিচালনায় অংশগ্রহণকারী অপর তিনজন ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি ও যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আখতার ও সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। আলোচনার বিষয় ছিল ‘রাজনীতির শিষ্টাচার’ বা ‘শিষ্টাচারের রাজনীতি’। সীমিত সময়ের মধ্যেও আলোচনাটি ছিল প্রাণবন্ত। আমরা একমত হয়েছিলাম এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। এখনও মানুষে মানুষে প্রেম-ভালবাসা আছে (অবশ্য কিছু মনুষ্যরূপী বর্বর বাদে)। রাজনীতি থেকে শিষ্টাচার একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। হ্যাঁ, এটা ঠিক, একশ্রেণীর রাজনীতিকের মধ্যে শিষ্টাচার বলুন, মানবিকতা বলুন, মানুষের প্রতি সম্মানবোধ বলুন, একেবারে অবশিষ্ট নেই। রাজনীতিকের ছত্রছায়ায় বা অঢেল বিত্ত-বৈভবের দম্ভে অনেকে অমানুষ হয়ে সমাজে দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। আইন-আদালত, র‌্যাব-পুলিশ-দুদক কেউ ওদের স্পর্শ করতে পারে না। বিত্তের সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়া থাকলে তো কথাই নেই। মালিক তো মালিক, তৈস্য কর্মচারীও তখন ভদ্রলোকদের শালা-হারামজাদা গাল দিয়ে পার পেয়ে যায়। সাত খুন মাফ। সমাজের মুখে চপেটাঘাত করা একজন শিক্ষকের করুণ কাহিনী পড়লাম সেলফোনে। একজন স্ট্যাটাসটি দেখালেন। মনে হলো এতক্ষণ যে কথাগুলো বলেছি তার কোনটাই ঠিক নয়। আসলে আমরা অন্ধ গলি থেকে বেরিয়েও যেন আলোর পথে হাঁটতে পারছি না বা হাঁটার পথ খুঁজে পাচ্ছি না। কয়েক মাস আগে যখন সরকারের শিক্ষা বিভাগের নীরবতায় শিক্ষকদের মর্যাদা আমলাদের নিচে ঠেলে দেয়া হয়েছিল তখন ‘আমার শিক্ষকগণ’ শিরোনাম দিয়ে এই চতুরঙ্গ পাতায় কলাম লিখেছিলাম। তাতে আমার মকতবের জীবন থেকে মকতব-মাদ্রাসা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার শিক্ষকদের যেমন দেখছি লেখার চেষ্টা করেছি। একজন শিক্ষক, যে স্তরেরই হোন; তিনি শিক্ষক মাথার মণি। তাঁর আসন সবার ওপরে। তারপরও যখন দেখি শিক্ষকগণ অপমানিত হচ্ছেন তখনও আমরা দূরে দাঁড়িয়ে যেন নাটকের দৃশ্য উপভোগ করছি। নইলে একজন শিক্ষক যিনি সারাজীবন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন, যার ছাত্র কেউ কেউ দেশের মন্ত্রী-শিল্পপতি, তাকেও কেন ছেলের চিকিৎসার মাত্র ৭ লাখ টাকার জন্য প্ল্যাকার্ড হাতে রাজপথে সাহায্য চাইতে হবে? আমি ভিক্ষে শব্দটি ব্যবহার করলাম না, এটি ঘৃণিত শব্দ। একজন শিক্ষকের জন্য তো তারচেয়েও বেশি। এই শিক্ষকের নাম হারুনুর রশীদ। অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বা রশীদ স্যার। তিনি বগুড়া আযীযুল হক কলেজ, রাজশাহী সিটি কলেজ, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। অন্যের সন্তানের ভবিষ্যত গড়েছেন পরম মমতায়। অথচ তাঁর ১২ বছরের একমাত্র পুত্র কৌশিক দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি সন্তানের চিকিৎসায় নিজের সব শেষ করে এখন রাজপথে নেমেছেন। সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছেন। সমাজ থেকে শিষ্টাচার যে একেবারে শেষ হয়ে যায়নি তার প্রমাণ জাবের সিরাজী। সিরাজী ফেসবুকে ঐ শিক্ষকের করুণ কাহিনী লিখে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে রশীদ সারের সেলফোন নং ৮৮০১৮৫৪৩২৪৩০২ # (বিকাশ) এবং তার ডাচ-বাংলা ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নং ১৩৫.১০১.৯৮১৩৫# দিয়েছেন। আমি সেল নং এ টেলিফোন করলে অপরপ্রান্ত থেকে একটি কাতরকণ্ঠ থেকে কেবল ২টি বাক্য শুনতে পেলাম- “আমার ছেলে এখন ভারতের মুম্বাইতে অবস্থিত ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে’ চিকিৎসাধীন। আমার স্ত্রী সঙ্গে রয়েছেন আর আমি অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। দোয়া করবেন।” এর বেশি আর কিছু বলেননি। সিরাজী স্ট্যাটাসে আরও বলেছেন, প্রতি ২১ দিন পর একটা ইনজেকশন দিতে হয়, যার দাম ৪০ হাজার টাকা। আর পুরো চিকিৎসা করাতে লাগবে ৭+ লাখ টাকাÑ খুব বেশি কি? আমার জানা মতে কেউ কেউ কিছু টাকা তাঁর এ্যাকাউন্ট নম্বরে বিকাশ করেছেন। কিন্তু স্যারের ছাত্রদের কেউ না কেউ একাই তো এ কাজটি করতে পারেন। তাহলে স্যারও হাত পাতার দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন। শুরু করেছিলাম টক-শো ‘রাজনীতির শিষ্টাচার’ নিয়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিষয়টি চমৎকার এবং সময়োপযোগী। শিষ্ট শব্দের আভিধানিক অর্থ ভদ্র, সুশীল, নীতিবান, শিক্ষিত, মার্জিত, অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে বিনয়ী ও ভদ্র আচরণ করা। ব্যাপক অর্থে মানে সম্মানের আচরণ করার নামই শিষ্টাচার। এই বস্তুটির সবচেয়ে বড় অভাব আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ আজ সঙ্কট মোকাবেলা করে এগিয়ে চলেছে যেটি কেবল বাংলাদেশের একার সঙ্কট নয়, বিশ্বব্যাপী এ সঙ্কট সভ্যতা-শিষ্টাচারকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। কয়েকটি গোষ্ঠী পবিত্র ইসলামের নামে দেশে দেশে গুপ্ত হত্যা, বোমা মেরে হত্যা, সুইসাইড বোম এটাক করে হত্যা করে চলেছে। বাংলাদেশের বাইরে এদের নাম মুসলিম ব্রাদারহুড, আইএসআই, আল কায়েদা, বোকো হারাম। এখানে জামায়াত-শিবির; হিযবুল মুজাহিদীন; হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, আনসারুল ইসলাম বা হামযা ব্রিগেড। আর তাদের গডমাদার খালেদা জিয়া। এখন পর্যন্ত এসব নামই শোনা যাচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান কিছুদিন আগে আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ- কার্যকর করার প্রতিবাদ করেছিলেন। অথচ বৃহস্পতিবারের গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হলো ইস্তানবুুল এয়ারপোর্টে সুইসাইড বোমা ও গুলিতে অর্ধশতাধিক নিহত এবং দুই শতাধিক আহত। শোনা যায়, এই এরদোগান মুসলিম ব্রাদারহুডপন্থী। তাকেও ঐ তথাকথিত ইসলাম কায়েমীদের টার্গেট হতে হচ্ছে? আইএসআই ইসলামী স্টেটের যে পরিকল্পনা করেছেÑ আফগানিস্তান-ইরাক-তুরস্ক-সিরিয়া নিয়ে একটি রাষ্ট্র, সেই ভৌগোলিক অবস্থানই এরদোগানকে ছাড়েননি। আসলে ওরা কি ইসলামের জন্য এই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে? বাংলাদেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছিল আজও তেমনি টার্গেট কিলিং চলছে। এটিকে হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। তাই রাজনীতিতে শিষ্টাচারের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য একান্ত জরুরী। কিন্তু বাংলাদেশের সৃষ্টি একটি রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে যাতে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ এবং ৫ লক্ষাধিক মা-বোন ধর্ষিত। যে কারণে এখানে জাতীয় ঐক্যের প্রেক্ষাপটও সেভাবেই নির্ণীত হতে হবে। জাতীয় ঐক্য হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিতে শক্তিতে। এর বাইরে কোন জাতীয় ঐক্য হবে না। তথাকথিত সুশীল সমাজ যতই চিৎকার করুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে ঐক্য অবাস্তব এবং কখনও হবে না। একজন শহীদ পরিবারের সন্তান কিভাবে খালেদা জিয়াকে সমর্থন দেবে যিনি রাজাকার-আলবদরদের পাশে বসিয়ে রাজনীতি করছেন? রাজনীতির শিষ্টাচারের প্রশ্নটি এখানে অবশ্যই ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বলেন গুপ্ত হত্যার পেছনে বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার হাত রয়েছে। এটি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাবে না, কারণ খুনীরা তো খালেদা জিয়ারই সাথী। তিনি যতই বলুন গুপ্ত হত্যার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে তা কেবলই রাজনৈতিক বুলি, এর পছেনে কোন সত্যতা নেই। এই মহিলার স্বভাবই মিথ্যে বলা। মিথ্যে বলে নিজের অপরাধ ঢাকা দেয়ার চেষ্টা। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনার কথায় যুক্তি আছে, সত্য আছে। গুপ্ত হত্যার দায়ে যারা ধরা পড়ছে তাদের জন্ম জামায়াত-শিবিরে, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে এবং এই জামায়াত-শিবির তো খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জোটের প্রধানতম শরিক এবং নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। যে কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলেন তখন এই খালেদা জিয়াই বিচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। খালেদা জিয়াই বলেছিলেন ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেবেন। এমনকি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ছেলেমেয়েদের চরিত্র সম্পর্কেও তিনি কটাক্ষ করেছিলেন। ওরা রাতভর শাহবাগে বসে সেøাগান দিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। খালেদা জিয়া তাদের এ অবস্থান নিয়ে নোংরা ইঙ্গিতও করেছিলেন। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসতে পারেননি। আসলে কি যে করতেন, আল্লাহই জানেন। ২০০১ সালে তো দুই আলবদর কমান্ডার নিজামী-মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়ে তাদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন। এবার হয়ত বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোরই পদক্ষেপ নিতেন। অবশ্য এ ধরনের অলীক চিন্তাভাবনা খালেদা জিয়ার পক্ষেই সম্ভব। এই দেশটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ নেতৃত্ব দিয়ে লালিত আদর্শে, নির্দেশে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তাঁর কন্যাই আজ রাষ্ট্রনেতা; যিনি সাহসে, সততায়, মেধায়, মননে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ রাষ্ট্রনায়ক। এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে কোন লাভ হবে না, যতই দিন যাবে খালেদা হারিয়ে যেতে থাকবেন। শিষ্টাচার আসে পারিবারিক ঐতিহ্য বা ফ্যামেলি কালচার থেকে। শেখ হাসিনা তা ভালোভাবেই পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার তিনি বহন করে চলেছেন। সে কারণে তার রাজনীতি ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনও আলাদা; সাধারণের মধ্যে অসাধারণ। শেখ হাসিনা ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনে শিষ্টের চর্চা করেন, আর খালেদা উভয় জীবনেই অশিষ্ট, পার্থক্যটা এখানেই। রাজনীতির শিষ্টাচার আলোচনা করতে হলে আমাদের পেছনে তাকাতে হবে- স্বাধীনতার আগে ও পরে। স্বাধীনতার আগের রাজনীতিকগণ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, শত্রু ছিলেন না। একজনের শাহাদাত দিবসে আরেকজন ঢাউস কেক কেটে জন্মদিন পালন করতেন না। তাও সত্যিকার নয়, ভুয়া বানানো জন্মদিন কেবল প্রতিপক্ষকে অসম্মান করার জন্য বিকৃত মানসিকতা থেকে উদ্ভূত। স্বাধীনতাপূর্বকালে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, খান আবদুস সবুর খান, ফজলুল কাদের চৌধুরী, মনি সিং, অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ কিংবা আন্ডার গ্রাউন্ড হক-তোয়াহা-আলাউদ্দিন দেবেন শিকদারের মতো নেতা ছিলেন। এরা একেকজন একেক রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল চমৎকার, ভাই-বন্ধু বা গুরু শিষ্যের। একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে যেটি সবুর খান নিজে বলেছেন। মুসলিম লীগ নেতা হিসেবে সবুর খান গং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা তথা পাকিস্তানের দালালী করেছেন। স্বাধীনতার পর স্বাভাবিকভাবে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী। একদিন ডেপুটি জেলার এসে সবুর খানকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন। সুন্দর বিছানার খাট, টেবিল-চেয়ার, বাথরুম সব পরিপাটি। জেলার বললেন, ‘স্যার আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না, আমি শুধু নির্দেশ পালন করছি। সবুর খান জবাবে বললেন, ‘তোমাকে কিছু বলতে হবে না, ও ভালভাবেই জানে কোন কক্ষটি কেমন, আমরাইতো ওকে বছরের পর বছর এ-কক্ষে নয়তো ওকক্ষে রেখেছিলাম।’ কাজী জাফর আহমদ, আবদুল মতিন (পাবনা) এর ওপর হুলিয়া। বঙ্গবন্ধু তখন সুগন্ধায় বসতেন। প্রায় দেখা যেত তারা সুগন্ধা থেকে বেরোচ্ছেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশা পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চিত্র পাল্টে গেল। মিলিটারি জিয়া কেবল যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা মূলধারাই পাল্টে দিলেন তা নয়, সে সঙ্গে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করলেন। জিয়াই প্রথম একাত্তরের পরাজিত রাজাকার-আলবদর, জামায়াত-মুসলিম লীগকে পুনর্বাসিত করলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশ নিয়ে যাবার সব ব্যবস্থা করে নিজেও জীবন দিলেন। মিলিটারি এরশাদও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই চলেছেন, আর খালেদা জিয়া তো আলবদর কমান্ডার নিজামী-মুজাহিদের হাতে শহীদের রক্তরাঙা পতাকাই তুলে দিলেন। অপমান করলেন গোটা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও শহীদানের রক্তকে। মূলত আজ জঙ্গীবাদের যে বিষবৃক্ষ ডালপালা ছড়িয়েছে এর চারাটি রোপণ করে গেছে মিলিটারি জিয়া। এটি যারা অস্বীকার করবেন তারাই শিষ্টাচার বিবর্জিত রাজনীতির ধারক ও বাহক। ঢাকা ॥ ৩০ জুন ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব নধষরংংযধভরয়@মসধরষ.পড়স
×