ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাতের রাস্তায় ছিনতাই, পাকড়াও তৃণমূল নেতা

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ১ জুলাই ২০১৬

রাতের রাস্তায় ছিনতাই, পাকড়াও তৃণমূল নেতা

অনলাইন ডেস্ক ॥ রাতের রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চালক-আরোহীদের থেকে টাকাকড়ি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, অভিযোগ মিলছিল বারবারই। টহল দিয়ে দুষ্কৃতীদের ধরার ছক কষেছিল পুলিশ। কিন্তু সেই জালে যে এমন মাছ উঠবে, ভাবেননি পুলিশের কর্তারা! ধরা পড়লেন তৃণমূল নেতা। বুধবার রাতে পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়কে তল্লাশিতে বেরিয়েছিল বর্ধমানের কাঁকসা থানার টহলদার গাড়ি। এক মোটরবাইক আরোহীকে আটকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার খবর আসে ফোনে। গাড়ি ছুটিয়ে অকুস্থলে যাওয়ার সময়ে রাস্তার ধারে নম্বরহীন একটি কালো গাড়ি দেখতে পায় পুলিশ। সেখানে নেমে খানিক খুঁজতেই পাশের পোলট্রি ফার্মে দেখা মেলে লুকিয়ে থাকা দু’জনের। পাকড়াও করে গাড়িতে তোলার সময়ে এক জনের মুখ ভাল করে দেখেই তাজ্জব পুলিশকর্মীরা। তিনি স্থানীয় বনকাটি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান প্রদীপ বাগদি। রাস্তায় গাড়ি আটকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে ওই উপপ্রধান ও তাঁর শাগরেদ অঞ্জন চৌধুরী গ্রেফতার হওয়ার পরে শাসকদলকেই বিঁধছেন বিরোধীরা। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলের টিপ্পনী, ‘‘ওদের নেতারা দিনে ডাকাতি করেন। আর রাতে এই সব চুরি-ছিনতাই!’’ কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘দুর্নীতিতে ডুবে থাকা দলের নিচুতলার নেতা ছিনতাইয়ে জড়িত, এতে বিস্ময়ের কী আছে!’’ কাঁকসার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বক্সী শুধু বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী যা হওয়ার হবে। এই ঘটনার সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই।’’ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস ধরেই ওই রাস্তায় রাতে চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ মিলেছে। তাই টহল বাড়ানো হয়েছে। ওই রাতে পানাগড়ের বাসিন্দা আনন্দময় কোনার অভিযোগ করেন, রাত ১০টা নাগাদ তিনি মোটরবাইকে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। একটি কালো গাড়ি তাঁকে বসুধা মোড়ের কাছ থেকে ধাওয়া করে। পাশের একটি রাস্তায় ঢুকে পড়েও রেহাই মেলেনি। পিছন থেকে এসে রাস্তা আটকে মারধর করে মোবাইল, টাকা, আংটি ছিনিয়ে নিয়ে পালায় দু’জন। খানিকটা এগিয়ে কিছু গ্রামবাসীর দেখা পেলে তাঁদের সাহায্যে পুলিশে খবর দেন তিনি। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের কাছাকাছিই ছিল তাদের একটি ভ্যান। তারা দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় দুষ্কৃতীরা পালাতে পারেনি। পুলিশ আসতে দেখে গাড়ি রাস্তায় ফেলে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। পুলিশের দাবি, ধরা পড়ার পরে নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করেন প্রদীপ। কিন্তু জেরায় অসঙ্গতি মেলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সে রাতেই ওই রাস্তায় আরও দু’টি গাড়ি আটকে ছিনতাই হয়েছে বলে জেনেছে পুলিশ। তবে কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। বছর তিরিশের প্রদীপের নাম এর আগে পুলিশের খাতায় না উঠলেও নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। এক সময়ে নিজের এলাকায় অজয়ের বালিঘাটের দখল নিয়ে গোলমালের পিছনে তাঁর হাত ছিল বলে তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ। পঞ্চায়েতে শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগেও নাম জড়িয়েছিল তাঁর। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা প্রদীপকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য থানায় দরবার করেন বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি। দেবদাসবাবু যদিও তা মানতে চাননি। দুপুরে ধৃতদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেয় দুর্গাপুর আদালত। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×