ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইকবাল চৌধুরী

‘দুই পা ফেলিয়া’ মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১ জুলাই ২০১৬

‘দুই পা ফেলিয়া’ মালয়েশিয়া

২০১৩। জুনের মাঝামাঝি সময়। কর্মক্ষেত্রে ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকি। বিবাহিত জীবনে আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। দীর্ঘ এক গুয়েমির জন্য নাভিশ্বাস উঠছিল। ইচ্ছে করল দূরে কোথাও ঘুরে আসি। রুটিন জীবনে তেমন মন বসছিল না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আসব। যদিও আমরা ঢাকায় থাকি, যাত্রাটা শুরু হয়েছিল জন্মভূমি চট্টগ্রাম হতে। পরিকল্পনাটা ছিল প্রথমে বাসযোগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা। অতঃপর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বিমানে মালয়েশিয়া। সবশেষে মালয়েশিয়া থেকে বাসযোগে সিঙ্গাপুর। কিন্তু ঘটনাক্রমে সিদ্ধান্তের কিছু রদবদল হলো। সেদিন ১৬ জুন ২০১৩। সকাল ৮টায় বাস। খুব ভোরে প্রস্তুত হয়ে সোহাগ বাস কাউন্টারে গেলাম। যাওয়ার পর দেখলাম বাস কাউন্টারে প্রচ- ভিড়। কৌতূহল জাগল ঘটনা জানার জন্য। জানলাম রাস্তায় অসম্ভব রকমের জ্যাম। চট্টগ্রাম-ঢাকার রাস্তায় ৪ লেনে উন্নয়নের জন্য ২২-২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে ঢাকায় পৌঁছতে। আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। কেননা রাত ৯টায় বিমান ছাড়ার সময়। হাতে আছে মাত্র ১১-১২ ঘণ্টা। চিন্তা করতে করতে বাসে উঠলাম। মনে দ্বিধা কাজ করছিল যেতে পারব কি পারব না। আমার এক কলিগকে ফোন করলাম। সে আগের দিনে বিকেলে রওনা দিয়েছিল। শুনে অবাক হলাম, ১৫ ঘণ্টার পর সে বর্তমানে মিরসরাই যেখানে যেতে মাত্র ২ ঘণ্টা লাগে। আতঙ্কটা হতাশায় রূপ নিল। তাহলে কি বিদেশ যাওয়া আমাদের হবে না। এতদিনের স্বপ্ন এভাবে ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমার বউ তো পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ল। কারণ যাওয়ার ব্যাপারে তার উৎসাহটা ছিল বেশি। মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর তারই পছন্দের জায়গা। বউ বলল তাহলে কি আমরা বিমান মিস করব? আমি নিশ্চুপ। হঠাৎ মাথায় আসল, আমরা বিমানে ঢাকা যেতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে বাস থেকে নেমে গেলাম। শুরু করলাম ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি। সব বিমান অফিসে কল করলাম। মনে মনে ভাবছিলাম বাস তো চলে গেল, বিমানের টিকেট না পেলে দুই দিকই হারাব। আল্লাহর অশেষ রহমতে অনলাইন এ ১১-৪৫ বিমানের টিকেট কেটে নিলাম। কিন্তু তখন ১০টা। মাত্র ১ ঘণ্টা পরেই বিমান ছেড়ে দেবে। আবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম দুজনেই। শুরু করলাম একে খান মোড় থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা। প্রতিটি সেকেন্ড যেন মিনিট মনে হচ্ছে । অতঃপর যাত্রার ৩০ মিনিট আগেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দর পৌঁছলাম। যথারীতি বোডিং পাসের কাজ সেরে বিমানে উঠলাম। তারপর যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মনে হলো শেষ ৩-৪ ঘণ্টার কথা জীবনে কখনই ভুলব না। এরপর কোন ঝামেলা ছাড়া ঢাকায় পৌঁছলাম। বাসায় গিয়ে জরুরী জিনিসপত্র নিলাম। সন্ধ্যায় ঢাকা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিলাম। যথারীতি রাত ৯-১০ মিনিটে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে উঠলাম। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের সেবা, পরিবেশ মোটামুটি ভাল। সবাই পরিপাটি এবং হাসি-মুখ নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছিল। সম্মুখের টিভি স্ক্রিনে-এ মুভি দেখলাম দুজনে। কিছুক্ষণ পর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সারাদিন অনেক ধকল গেল। খুবই টায়ার্ড ঘুম ভাঙল বিমানের ঝাঁকুনিতে। দেখলাম কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর অনেক বড়। এই বিমানবন্দরে প্রচুর বিমান ওঠা-নামা করছে। স্থানীয় সময় তখন রাত ৩টা-৩০ মিনিট। বিমান থেকে নেমে বাসযোগে কেইলা মেইন টার্মিনাল বিল্ডিং -এ পৌঁছলাম। তারপর উঠলাম ড্রাইভারবিহীন এইরোট্রেন-এ। খুবই সুন্দর ও উন্নত প্রযুক্তির এই এইরোট্রেন, যা কেইলা মেইন টার্মিনাল বিল্ডিং থেকে স্যাটেলাইট বিল্ডিং-এ প্যসেনঞ্জার-কে আনা-নেয়া করে। মাত্র ২-৩ মিনিটের যাত্রা। অতঃপর এইরোট্রেন থেকে নেমে বিমানবন্দোর। বিভিন্ন রকমের ব্রান্ডে-এর দোকান দেখতে দেখতেই ইমিগ্রেইশনের-এর ফেসিলিটিস সম্পন্ন করলাম। তখন ভোর ৫টা বিমানবন্দরের সামনে থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম হোটেলে, আগে থেকেই বুকিং দেয়া ছিল। আমার এক মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বড় ভাইরিপন কুমার সাহা আমাদের জন্য এই ব্যবস্থা করে রেখেছিল। রুমে গিয়ে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। অতঃপর ঘুম, উঠলাম সকাল ১০টায়। নিচে নেমে মোবাইল সিম নিয়ে কল করলাম রিপন ভাইকে। আধঘণ্টার পর উনি হাজির, তারপর কিছুক্ষণ জমিয়ে আড্ডা দিলাম। উনি আমাদের গাইড করল টুরিস্ট স্পটগুলো নিয়ে, সঙ্গে সকালের নাস্তা সারলাম। শুরু হলো আমাদের ঘোরাঘুরি-চায়নাটাউন টু চায়নাটাউন শহরের ইলান পুডু নামক স্থানে পেট্রেলিং স্ট্রিটে-এ অবস্থিত। খুবই সস্তা দামের ভাল জিনিস নাকি পাওয়া যায় এখানে। অনেক নাম শুনেছিলাম এই জায়গার। কিন্তু হতাশ হলাম পণ্যের অবস্থা দেখে নাম করা ব্রান্ড ‘এডিডাস’ ‘লুইস ভুলটন’ ‘সিকে’-এর চিপ কোয়ালিটির নকল পণ্যে সয়লাব চায়নাটাউন। কিছুক্ষণ দেখার পর বুঝলাম আমাদের পছন্দের কিছুই এখানে পাওয়া যাবে না। বউ তো আমার চেয়ে আরও বেশি হতাশ সে তার লম্বা তালিকার কিছুই মিলাতে পারল না। তারপরও পেট্্েরানাস টাউন থেকে দু’চারটা সোভিনর কিলাম ১০-২০ রিংগিত দিয়ে ততক্ষণে দুপুরে খাওয়ার সময় হয়ে গেল গেলাম ম্যাগডোনাস–এ বিশ্বের নামকরা এই ফাস্ট ফুড সপে, অনেক রকমের খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে তুলে বের হলাম । প্রমাণস্বরূপ কিছু ছবি তুলে নিলাম ম্যাগডোনাস সপের সামনে। তারপর আশপাশে মার্কেটে ঢুঁ মেরে চলে গেলাম জালান পুডু এলআর স্টেসন-এ উদ্দেশ্য ওয়াল্ড বিখ্যাত পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারে।
×