ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিলরুবা আহমেদ

টেক্সাসান ঈদ-রোজা

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১ জুলাই ২০১৬

টেক্সাসান ঈদ-রোজা

এক ডলার দেন যে আংকেল ওনাদের বাসায় যাবে কি মা আজকে? প্রশ্নটা আমার মেয়ের। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হয়ে আসার পর কোথায় কোথায় কার কার বাসায় আগে বা পরে যাব সেই আলোচনা আর ভাবনাটা করতেই শুমাইসা জানতে চাইলো তার ডলার আংকেলের কথা। ছোট বেলায় ঈদের দিনে ঐ আংকেলের বাসায় গেলেই সে পেয়েছে একটি করে ডলার। ছোট্ট শুমার কাছে তাই ছিল যক্ষের ধন। স্মৃতির ধনে ধনবতী হয়ে শুমাও এত বছর পরে মনে রেখে জানতে চাইছে তার সেই আংকেলের কথা। আর ঐ ভাই সবসময়ই প্রবাসী বাচ্চা বাহিনীকে দিয়ে এসেছিলেন ঈদী, বয়স ভেদে ১, ২, বা ৫টি ডলার, জানাতে শিখাতে আমাদের দেশে নামাজ শেষে পা ধরে সালাম করে মুরব্বীদের কাছ থেকে আমরাও পেয়েছি এত্ত এত্ত টাকা। মুঠো মুঠো ঈদী, সালামী আর আনন্দময় এক গাল হাসি। বুঝলাম ওনার ঈদী প্রথাকে জিইয়ে রাখার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। না হলে আমার মেয়েইবা প্রায় ১০/১২ বছর পরে আজ এক ঈদের সকালে ওনাকে মনে করছে কেন? বাড়ী কিনে আমরাও যেমন চলে এসেছি উনিও অন্য কোথাও বাড়ীর বাসিন্দা হয়ে এ্যাপাটমেন্ট কমপ্লেক্সের বাচ্চাদের সাক্ষাত পান না এখন আর। আমাদের বাচ্চারা পায় না ওনাকে খুঁজে। এদেশে অযাচিতভাবে যাওয়া যায় না কারও বাসাতেই। কেউ ডাকলে, সময় দিলে, অপেক্ষার আশ্বাস দিলে তাবেই যাওয়া হয়। তাই যখন তখন দেখার সুযোগ নেই। তবে আমার ভাল লাগলো শুমাইসার এই মনে পড়াটা। ভালই স্মৃতি তৈরী করেছেন উনি আগামী প্রজন্মের প্রতিনিধিদের মাঝে। আমাদের এই প্রবাস জীবনে এই তো আমরা করি। খুব সচেতন বা অচেতন মনে স্মৃতিরই রোমন্থন করি। সেই সাথে স্মৃতি তৈরী করে শিশুর মানসপটেও ভরে দিতে চাই সেই হারানো কথা, সংস্কৃতি, শৈশব স্মৃতি দিয়ে যা ছিল একান্তই আমাদের। উত্তরাধিকার দিয়ে যেতে চাই যেন। মাটি ছেড়ে এসেছি অথচ রয়ে গেছে মাটির টান। এবং তা রয়েছে প্রচণ্ড ভাবেই। প্রচণ্ড নিনাদে। আমাদের এই প্রবাস জীবনে খুঁজে খুঁজে বার করি অতীতকে। যখন দেশে ছিলাম কবে কি করেছি ঐ ঈদে ঐ চাঁদে আনন্দে উৎসবে। সত্যি বলছি, তাই করি। আসলে আমাদের সংস্কার সংস্কৃতি আমাদেরই সাথে সাথে ঘোরে। কাছে আসে, কাছে থাকে, পাশে বসে থাকে, ফেলে রেখে আসা হয় না কোথাও, মহাবিশ্বের সব কোণেই ঘরের ভেতর ঘর স্টাইলে গড়ে তুলি লিটল বাংলাদেশ। নতুন ভুবনে আপনকে আপনাকে বপন করার আপ্রাণ চেষ্টা থাকে। ঈদ এলেই তাই ফিরে আসে জর্দা পায়েস এর সুগন্ধ দারুণ এক আবেগ আর ভালবাসা নিয়ে। আমার শিশু কাল থেকে না পছন্দের খাবার জর্দা পায়েস ফিরনী অথচ ঈদ এলেই তা পরম মমতায় শুমাইসার মুখের কাছে তুলে ধরি যেন অতি সুখাদ্য। যখন এ্যাপার্টমেন্টে ছিলাম তখন ঐ কমপ্লেক্সের মোটামুটি সবকটা বাংলাদেশীর বাসাতেই সবার ঈদ যোগাযোগ থাকত দুই কদম ফেলে এ বাড়ী ও বাড়ী আসা যাওযায়। এখন বাড়ী কেনাতে হাত বাড়িয়েই পাশের বাসায় কাওকে পাওয়া যাচ্ছে না যে একসাথে দেশীয়, মুসলমান এবং বন্ধুও। তবে যা আমরা করি তা হলো কোন একজনের বাসায় মিলিত হই সবাই নামাজ শেষে। ব্রাঞ্চ (ইৎঁহপয) করা হয়। রাতে হয়তোবা অন্য কোন গ্রুপের ডিনার পার্টিতে অন্য কোন গ্রুপের বন্ধুদের সাথে দেখা হয়। এখানে মানুষের মাঝে বহু ধরনের গ্রুপ আছে। দল উপদল। ছোট দল। বড় দল। স্মার্ট দল। হা হা, ইয়া, গাইয়া দলও আছে। অস্বাভাবিক বা খারাপও বলার নেই একে। স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠেছে এগুলো। আছে ডালাস এলাকা ভিত্তিক বন্ধুত্ব। মনমানষিকতা ভিত্তিক বন্ধুত্ব। বাংলাদেশের জেলা ভিত্তিক দলও আছে, বন্ধুত্বও। মানুষ দেখা হলেই দেখেছি জানতে চায় দেশ কোথায়। কতদূরে চলে এসেছি দেশ ছেড়ে। এখন দেশ বলতে তো বাংলাদেশ। তারপরও সবাই জানতে চায় কোন জেলা, কোন গ্রাম, কোন থানা। আমি যদি শেরপুর বলি তাতেই বা কি মন্দ বের হবে আর টাঙ্গাইল বললে কার আপন হয়ে যাব জানি না, ফেনীতেও কোন অসুবিধা নেই, মাদারীপুরেও না। আমার কাছে ডিসটিকালিজম প্রাধান্য না পেলেও সব সময়ই মানুষ এটিই জানতে চায় দেখেছি। আরেকটি বিষয় প্রায়ই জানতে চাইবে সেটা হচ্ছে, কোন সালে এস, এস, সি পাশ করেছি। মুখ বাকিয়ে বলতে চাইলে বলা যায় এটা বয়স বের করবার একটা ফন্দী ফিকির পন্থা, কিন্তু বলা যাবে না কারণ কি ভদ্রভাবে জানতে চাওয়া হচ্ছে লেখাপড়ার সাথে যুক্ত করে। যদি বলে বসি পড়ি নাই জীবনেও, কখনোও, তখন !! এখন ভাবছি আগামীতে তাই করবো। আপনার থেকে কেউ যদি দুদিনেরও ছোট হতে পারে তবে তার আনন্দের সীমা থাকবে না। ওদিকে যে ক অক্ষর গো মাংস তার খবর নেই। কিংবা আচ্ছা, যাই হোক, বাদ দিন পরর্চ্চা, আমার আসে না। এছাড়াও রয়েছে সমবয়সী বাচ্চা ভিত্তিক বন্ধুত্ব। কর্ম ও পেশা ভিত্তিক বন্ধুত্ব। সবারই আবার একাধিক উপদলের সাথে যোগাযোগ থাকে। এক বাসা থেকে যে কজনা বন্ধুর বাড়ীতে বুড়ী ছু করা যায় বলা যায় তারই একটা দৌড় শুরু হয় সকাল থেকে। তবে শুধু তাদের বাসাতেই যাওয়া হয় আগেই বলেছি যারা বলে দেন ওনাদের বাসায় যাবার জন্য। অন্যরা হয়তো বা বেড়াচ্ছেন বা অফিস করছেন। সকালে নামাজ পড়েই অনেকে মসজিদ থেকে অফিস চলে যান। মসজিদে ঢোকার সময়ই সবার হাতে একটা করে পলেথিন এর ব্যাগ ধরিয়ে দেন ভোলানাটিয়ার ভাই বা বোনেরা। বিভিন্ন দেশীয় তারা। রং বর্ণ, গোত্র, ভাষা ভিন্ন, মিল শুধু ধর্মের, ঐ বন্ধনে মসজিদে দেখা মিলে ঐ ধরনের বহু ভাই বোনের। মসজিদের বিবিধ কাজে তারা স্বেচ্ছায় শ্রম দেন। তাদের দেয়া ব্যাগের ভেতর জুতা ভরে যে যারটা সাথে রাখে। জুতা রাখবার জন্য আলাদা করে থাকে থাকে র‌্যাকও তৈরী করা আছে কমবেশী সব মসজিদেই। এখানে ডালাস এ অধিকাংশ মসজিদই দোতলা। উপরের তলাটা মহিলাদের জন্য বরাদ্দ থাকে বলা যায়। লেন্ডা পোন্ডা আন্ডা বাচ্চার মায়েদের জন্য বিশেষভাবে আলাদা করা একটা রুম থাকে যাতে তারা আরাম করে একসাথে বসতে পারে আর তাদের বাচ্চাদের কাকা কুকু যেন অন্যদের বিরক্ত না করে। কিন্তু কোথায় কি? প্রায়ই দেখি ঐ রুম এতই ভর্তি থাকে যে বাচ্চা ওয়ালা মা-রা পুরো মহিলাদের এলাকায় সর্বত্র যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। তবে আমার দেখতে খুবই সুন্দর লাগে ফুটফুটে বাচ্চাগুলো চারদিকে সুন্দর সুন্দর পাজামা-পাঞ্জাবি, সোলায়ার-কামিজ পরে অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছে এত ধরনের এত রঙের মানুষের সমাহার। সবাই আসে যার যার দেশীয় ধাঁচে। সাজও তাই বিবিধ। বাচ্চাগুলো অবাক চোখে দেখছে বহুধরনের সাজের মানুষ। এবার মসজিদে ঈদের দিনে আমার হাতে ছিল গোল একটা পার্স। সোনালী রংয়ের। তিন চারটা পর্তুগীজ তিন-চার বছরের বাচ্চা গোল হয়ে তার পাশে বসে পড়লো। নড়েও না, চড়েও না। ধরেও না। ওরা জানে অন্যের জিনিষ ধরা নিষেধ। কিন্তু এতসুন্দর সোনালী বল ছেড়ে যায় কিভাবে? থেকে থেকে আমার দিকেও চাইছে। আমিও দেখলাম নয়ন জুড়ে শিশুতোষ নির্মলানন্দের মিছিল। নামাজ শুরু হতেই মা-গুলো বাচ্চাগুলোকে টেনে নিয়ে গেল। গেল তারা চলে তবে দেখলাম ঘুরে ঘুরে তারা দেখছে আমার ব্যাগটাকে। কি সুন্দর এই মানব শিশুরা। একটু পরেই দেখলাম বড় সাইজের কিছু বাচ্চা ছোট ছোট পা ফেলে সবার মাঝে ঘুরে বেড়াতে লাগালো দান বাক্স নিয়ে। ফিতরার টাকা নামাজ শুরুর আগেই দান করতে বলা হচ্ছে মাইকে। বাক্সগুলো অল্প সময়েই ভরে যাবে জানি। ১০ ডলার করে জনপ্রতি এ বছরের ফিতরা। নামাজ শুরুর আগেই দেখলাম সবাই হাত ভরেই ডোনেট করছে। যাদের টাকা আছে বলে জানি এদেশে দেখেছি তাদের দু’হাত ভরেই দান করতে। বিশেষ করে রোজার মাসে যে হারে ইফতারী পাঠানো হয় মসজিদে তা অভাবনীয়। আমিও বহু বছর ধরে শুনে এসেছিলাম মসজিদে ইতফারীর পার্টটা দর্শনীয়। এবারই প্রথম বারের মতন লুৎফর ভাই ও ভাবীর আগ্রহে এত বছরের প্রবাস জীবনে মসজিদে ইফতারী করলাম দু’দিন। দু’দিনই যারপরনাই মুগ্ধ হলাম। শয়ে শয়ে মানুষ পাশপাশি বসে এত সুন্দর ও উন্নত ব্যবস্থাপনায় ইফতারী করছে যা খুবই প্রশংসনীয়। ইফতারী বাক্স নিয়ে সবাই অবশ্যই ফ্লোরে গালিচা বা চাদরের উপরে লাইন ধরে বসছে। সাথে থাকছে পানির বোতল। মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে আসা মাত্রই সবাইকে খোরমা আর একটা করে বোতল ধরিয়ে দেওয়া হয়। খতমে তারাবী যারা পড়েন তারা প্রতিদিনই মসজিদে নামাজে আসেন, ইফতারী করেন তারা, এশা আর তারাবী পড়ে গভীর রাতে বাড়ী ফেরেন। খুবই পবিত্র মনোমুগ্ধকর একটি ব্যবস্থা। আমার সাথে পরিচয় হলো এক আলাপী ভাবীর ওখানে। উনি আমাকে চোখ বড় বড় করে বললেন, এখানে যে এত মানুষ দেখছেন না, ওদের মধ্যে কিন্তু অনেক জীনও আছে। না হলে এত্ত এত্ত মানুষ কোত্থেকে আসবে। বলে চোখও ঘুরালেন এদিক ওদিক। আমেরিকায় আমেরিকান জীন! আমি তো অবাক, যাবে কোথায় বাঙালীর আজব আজব ভাবনা। আমি মনে মনে মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসলাম। ভেবেছিলাম আমি ভয় পাব না। কিন্তু না পেয়েছি। না পাইনি। না পেয়েছি। না আসলে কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিল। একসময় এদিক ওদিক চেয়ে আসলেই কে জীন কে মানুষ তা বুঝার চেষ্টা করছিলাম। আলাপী বা গোপ্পী ভাবী থামেননি, নিজে ঘুরে বসে, গায়ের কাছে লেগে বললেন, দেখছেন না কি রকম গম গম ভাব। এটা কি আমরা তৈরী করছি নাকি। আমার এরপর মহিলাটির দিকে তাকাতেও ভয় ভয় করছিল। এই বা কে, কে জানে!! দুই দিন-ই শুধু গিয়েছিলাম, দুদিনই ওনাকে দেখেছিলাম গুজ গুজ ফুস ফুস করছেন এর ওর সাথে। পরে গেলেও হয়তো ওনাকে দেখলে অন্যদিকে দূরে কোথাও গিয়ে বসতাম। এখানে এক বাঙালী ভাবী আছেন উনি আবার প্রায়ই বলেন, “ রমজান আসলেই তা রীতিমত চোখেই দেখা যায়। ওনার একটা খাবারের দোকান রয়েছে। ডালাসের প্রচুর বাঙালী, পাকিস্তানী, আফ্রিকান মুসলমান ভীড় করেন ওনার দোকানে। রোজার মাস শেষ হতেই ভীড়টাও উবে যায়। উনি চোখেই দেখতে পান রোজার মাসের আগমন এবং শেষ হয়ে যাওয়া। উনি অবশ্য এটাকে কোনো ভুতুড়ে কা- বলেন না। তার উপর তো রয়েছেই ওনার দোকানে মসজিদে ইফতারীর পাঠানোর অর্ডার। রোজার মাসের প্রতিটি শুক্র শনিবারই মসজিদগুলোতে ফ্রি ইফতারীর ব্যবস্থা থাকে। মুসলিম সমাজের পক্ষ থেকে দেশ ভেদে এক সাথে বিভিন্নভাগে বিভিন্ন তারিখে মসজিদে ইফতারী পাঠানো হয়। বন্ধু, ছাত্র, প্রতিবেশী সবাই থাকে আমন্ত্রিত। মসজিদের নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো থাকে অমুক দিন আমি ইফতারী দিতে চাই কেও সঙ্গী হতে চায় কিনা। চাইলে এক সাথে ইফতারী দেওয়া হয়। এত মানুষের ইফতারী ঘরে বানানো অনেক সময়ই হয়ে উঠে না। এই অর্ডারগুলো যায় মুসলিম দোকানগুলোতে। দোকানগুলোতে খুবই রমরমা অবস্থা থাকে রোজার সময়। ডালাসে মসজিদও কম না। প্রায় প্রতিটি সিটিতে একটি করে মসজিদ আছে বলা যায়। আরভিং, লুইসভিল, কেরলটন, আরলিংটন, এলেন, রিচাড়সন ইত্যাদি সব পাশপাশি লাগোয়া শহর। কিন্তু প্রতিটিতেই একটি করে মসজিদ রয়েছে। অত্যন্ত আধুনিক কারুকার্য খচিত অপূর্ব সুন্দর এই মসজিদগুলো। এবং সব খানেই ইফতারী খাওয়ানোর রেওয়াজ চলে আসছে। শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদও রয়েছে আলাদা করে। তাদের মসজিদেও ইফতারীর প্রচলন রয়েছে বলে জানালো আমার এক প্রতিবেশী। বোঝাই যাচ্ছে তাই সারা রমজান মাসেই মুসলিম দোকানগুলোতে বুট, পেয়াজু, বেগুনীর খুশবুতে ভরপুর থাকে। কোন দোকানী ভাবী যদি বলেন, গন্ধ শুকেই বলে দেওয়া যায় রমজান এসেছে কি আসেনিÑ তাও ভুল বলা হবে না। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এ বাড়ী ও বাড়ী করে ইফতার পার্টি পুরো মাস জুড়েই চলে। রোজাদারকে ইফতার খাওয়ানো অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ এ কথাটা বহুবার করে শোনা যায়। আমি যখন প্রথম এলাম, রান্নায় অপটু, তখন থেকে বহু বছর পর্যন্ত, যতদিন না এ্যাপার্টমেন্ট ছেড়েছি, এানী ভাবীর দুই মেয়ে কারিশমা ওয়াসিমা প্রতিদিন মাগরিবের সময় ইফতারী হাতে নিয়ে আমার দরজায় টোকা দিত। আ-হা, কী অসীম মমতা এই পরবাসে প্রতিবেশীদের। এখানে রমজান মাসের শুরুতেই মোটামুটি বুক হয়ে যায় কবে কবে কার কার কোথায় কোথায় ইফতারীর দাওয়াত আছে। এক্ষেত্রে শুক্র শনি আর রবিবারের উপরই ধকল যায় বেশী। যে কোন দিন নামাজও পড়ে না সেও ইফতার পার্টি দেয়। বড় করে। জাঁকজমকের সাথে। কেউ কেউ হোটেলেও ইফতার পার্টির আয়োজন করে। ইফতার পার্টির শুরুটা হয় শরবত খোরমা খেজুর দিয়ে। এরপর বুট, পেঁয়াজু, বেগুনী, হালিম, মুড়ি, শশা, গাজর সমুচা, ডালপুরী, এগ রোল থেকে দই বড়া হয়ে ডালের হালুয়া সবই তৈরী থাকে টেবিলে। যত পার খাও। এখানেই শেষ না, আরো আছে। ইফতার শেষে ঘণ্টা দুয়েকের বা একের বিরতি দিয়ে ডিনার। কাজের লোক নেই বলে কিছুই কিন্তু থেমে নেই এদেশে। একেক জনের বাসাতে হাজারটা করে আইটেম দিয়ে ইফতারীর পসরা সাজানো হয়। যদিও একটা আইটেম যা অতি পরিচিত বাংলাদেশের টেবিলে সেই কলা, নারকেল, চিনি দিয়ে ভিজা চিড়া মাখানো তা আজ পর্যন্ত কোথাও দেখলাম না। হয়তোবা ভবিষ্যতে দেখবো। এবারে ডালাসে প্রথম রোজাটা খোলার সময় ছিল ভর সন্ধ্যা, ৮:৩৩ মিনিটে। প্রায় ডিনারের সময়। অনেকে তাই একই সাথে ডিনারও সার্ভ করেছে। ডিনার দেরীতে দিলে দেখা গেছে অনেকেই মসজিদে চলে গেছে তারাবী পড়তে। তারাবী পড়ার ক্ষেত্রে এখানকার মানুষ জনের ভালই আগ্রহ রয়েছে তবে অনেকেই বললেন, বিশেষ করে ভাবীরা তারা ২০ রাকাতের পরিবর্তে ৮ রাকাত পড়েন। কোরআন খমতও দেন অনেকে রোজার মাসে। যারা এই পুণ্যের কাজটি করেন দেখা গেছে ওনারা ইফতারীর দাওয়াত নেওয়া ও দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। একজন বললেন, ইফতারীর দাওয়াতে গেলে অনেকক্ষণ সময় চলে যায়। যেমন সন্ধ্যা ৭টার দিকে যেতে হয়, ডিনার শেষ করে ফিরতে ফিরতে প্রায় ১০টা ১১টা বেজে যায়। তার চেয়ে নিজের ঘরে বা মসজিদে গিয়ে কোরআন পড়া অনেক সাওয়াবের কাজ। আমাদের এক ¯লীপলেস ভাবী আছেন, পুরো রোজাতে উনি হাতওয়ালা জামাকাপড় পরেন। এ কারণে ওনাকে আমরা সব পার্টিতে পুরো রমজানেই একটা কালো কামিজেই দেখি। কারণ ওনার আর সব পোষাকের হাত নেই। যাই হোক, এই মাসটিকে এভাবে উনি সম্মান জানান। দাওয়াতের পালাক্রম থেকে আমার বাসাও বাদ গেল না, তবে সেটা গত বছর । খেয়ে আসবো, খাওয়াবো না তা কি করে হয়, তাই এ বছর দাওয়াতই নেই নি, একমাত্র রোজার দাওয়াতে গিয়েছিলাম নীনু ভাবীর বাসায়। তার বিশাল আয়োজন দেখে আমারও মনে পড়লো আমিও যথারীতি প্রচুর আয়োজন করে রোজাদারদের স্বাগতম জানিয়েছিলাম গেল বছর, সবাই তাই করে। মনে আছে তার আগের দিনটি ছুটিও নিয়েছিলাম। সে-টা শুক্রবার ছিল, দিনভর রাঁধলাম। বুট সিদ্ধ করে, পেঁয়াজুর ডাল রেড়ী করে ফ্রিজে রেখেছিলাম। কম করে হলেও ৬০ জন মানুষের দাওয়াত। প্রতিটি জিনিষ জন প্রতি ২টা করে ধরলেও ১২০টা করে ভাজতে হবে। বেগুনীর জন্য বেগুনও কেটে কেটে লবণ মেখে ফ্রিজে রাখলাম। সমুচা, এগ রোল, ডালপুরী দোকান থেকেই পেকেটে পেকেটে কিনে আনলাম, দাওয়াতের দিন অর্থাৎ শনিবার শুধু ভাজবো। হালিম বানিয়ে আনার দায়িত্ব এক ভাবীকে দিয়ে, শামী কাবাব পুরোপুরি তৈরী করে রেখে দিলাম, শুধু খাওয়ার সময় গরম করলেই হবে। চিনা ঘাস আজকাল খুব পরিচিত এখানে। এটা দিয়ে ফালুদা বানালাম। চিনাঘাস, কাস্টার্ড, নুডুলস আর আইসক্রিম দিয়ে চমৎকার ফালুদা তৈরী হলো। জানতাম এটা খেয়ে সবাই খুব মুগ্ধ হবে, বা না হলেও মুগ্ধ হবার ভান করবে। দোকান থেকে কেনা বিভিন্ন রকমের মিষ্টি তো রয়েছেই। রীতিমত বায়োনিক গতিতে কাজ করেও দেখা গেল ইফতারীর সময় প্রায় পৌঁছে গেছে দরজায়। দরজায় টোকা পড়লো বলে। ছুট ছুট ছুট। ডিনারের জন্যও পোলাউ, মুরগী, খাসী, গরুর মাংস সবই তৈরী। এক ভাবীর কথা মনে পড়লো। ইফতারীর দাওয়াত শেষে উনি নিজেই মাথা ঘুরে উল্টে পড়ে গেলেন। আমারও ঐ অবস্থা হয় কিনা ভেবে ভয়ে ভয়ে দম নিয়ে নিয়ে এরপর এগুতে লাগলাম। আমার মেয়েটাকেও কাজে লাগালাম। জন প্রতি ১টি করে ৬০টি পানির বোতল সাজাতে বললাম। ৬০ মগ শরবতও। রোজা তো সবাই এক সাথে খোলে তাই পানি ও শরবত একসাথে তৈরী করে রাখা হলো। এবং ইফতারীর আগেই ঘরময় মেহমানে ভরে গেল। অন্য সময় মেহমান আগে পরে করে আসে। কিন্তু ইফতারীর দাওয়াতে রোজাদার সময়মতন হাজির হন। আমি নাভিশ্বাসে উর্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছিলাম। ইফতারী সবাই নিয়ে নেওয়ার পর খেয়াল হলো, আরে ও খোদা, আমি তো রোজাই ভাঙ্গিনি। সোজা কল থেকে পানি খেয়ে রোজা ভাঙলাম। এবং রাতে সবাই চলে যাওয়ার পর আবিষ্কার করলাম পানিই ছিল শুধু আমার রিজিকে বরাদ্দ। আর কিছু মুখে দেওয়ারও অবসর পাইনি। তাও এই বোধোদয় হলো যখন আমার স্বামী এক বাটি খাবার সামনে এনে বললো, এবার তুমি কিছু খাও তো। যাই হোক, এটলিষ্ট সামওয়ান হেজ নোটিশড। তাতেই আমি মহাখুশী। ঐদিকে সবাই সেদিন একটু করে ইফতারী মুখে দিয়েই নামাজে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। আমার বাসায় এত মানুষ একসাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছে দেখতেই আমার দিনভর কষ্টটা লাঘব হয়ে গিয়েছিল যেন। নীনু ভাবীও তাই বললেন আমরা এত মানুষ একসাথে নামাজ পড়েছি ওনার বাসায় তাই ওনার কাছে সুখকর। নামাজ শেষে সবাই বসে বাদ বাকী ইফতারী খেলেন। গল্প করলেন। চা বানালাম। এক সময় ডিনারও দিলাম, তাও শেষ হলো। আমার শুমাইসাকে এতকিছুর মাঝে ক্ষণে ক্ষণে বলতে লাগলাম আমরা বাংলাদেশে এভাবে ইফতারী করি, ঐভাবে সেহেরী খেতাম ইত্যাদি। স্বজন পরিবেষ্টিত হয়ে কি অপূর্ব স্মৃতিময় রোজার মাসগুলো ছিল তার লক্ষ কোটি গল্প করে যেতে লাগলাম। ও তো ঐগুলোর কিছুই দেখলো না। কিন্তু প্রতিবছরই শুমাইসা শুনে যায় একবার করে আমার যত গল্প। তবে যে-বার সে প্রথমবার রোজা রেখেছিল সেই ৭/৮ বছর আগে আমি সেদিন অসীম আগ্রহ ভয় আর উৎকণ্ঠা নিয়ে রোজার দীর্ঘ ১৪টা ঘণ্টা তার দিকে চেয়ে থেকেছিলাম। বলা যায় শ্বাস বন্ধ করে তার জীবনের প্রথম রোজাটি পার করেছিলাম এই প্রবাসে। ইফতারীর সময় সেদিন আমার একটা ওড়না ওর মাথায় পেঁচিয়ে দিয়ে রোজা খোলার দোয়াটাও শিখিয়েছিলাম। যদিও বারে বারে সারাদিনে বহুবার বলেছিলাম জীবনের প্রথম রোজাটা একদিনে তিনটে করা যায়। দেখ একটু পানি খেতে চাইলে খাও। নেক্সট ডে তে রেখো। আমার পিচ্চিটাও কম টেটনা না। বলেছিল, মামি ইটস ওকে, ইট ইজ মাই মিশন। আমি বুঝতে পারছি তুমি ভাবছো আমাকে নিয়ে কিন্তু আই হেভ টু ফিনিশ মাই জার্নি। আমি হা করে ওর দিকে চেয়ে থেকেছিলাম। বলে কি একটুখানি মেয়ে। আমেরিকান স্কুলগুলোতে পড়ে পড়ে কি বেশী পাক্না হয়ে যাচ্ছে নাকি!!!! পরের বছরও আশে পাশের সব টেমাটুমা পিচ্চি-পাচ্চি সবাই রোজা রাখছিল। আমারটাও রাখবে। কয়েক জন ভাবী ভয় পাচ্ছিলেন রোজা রাখার কারণে তাদের বাচ্চারা ক্লাশে “সিংগেল ম্যান আউট” হয়ে যায় কিনা। সে রকম কিছু অবশ্যই হয় নি। বরং স্কুল থেকেই বলে দেওয়া হলো মুসলমান বাচ্চারা রোজা রাখলে পেরেন্স-এর অনুমতি পত্র নিয়ে যেতে, যাতে প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী চঞ (এদেশে চঊ) ক্লাশে যেতে না হয়। রোজা রাখা নিয়ে ছোটদের মধ্যে রীতিমত যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিলো। অনেক মুসলিম বাপ-মাই এখন তাদের ছেলেমেয়েদের নাম এমনভাবে রাখছেন যেন বুঝতে পারা না যায় তাদের ধর্ম আদিবাস সংস্কার সংস্কৃতি কি, সেক্ষেত্রে বিপুল উৎসাহে রোজা রেখে বাচ্চাগুলো স্বধর্মের ঘোষণা দিচ্ছে দেখে ভালই লাগছিল। তারপরও রোজার দিন আমার রোজাদার বাচ্চাটিকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমিও অনেকক্ষণ চুপচাপ গাড়ীতে বসে চেয়ে থাকতাম। অন্য ভাবীদের ভয় আমার ভেতরও কিভাবে জানি সংক্রমিত হয়েছিল। এক গুচ্ছ খৃষ্টান ছেলেমেয়ের মধ্যে সে গিয়ে পড়ছে। ওর ক্লাশে ওই একমাত্র মুসলমান। কে কি জিজ্ঞেস করবে!! কি ভাবে নেবে, সেইবা কিভাবে ব্যাপারটা ফেস করবে ভেবে চুপচাপ তার চলে যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে থাকতাম। কোন দুষ্ট বাচ্চা যদি ওকে উল্টো পাল্টা কিছু বলে বা করে ভাবতেই বুকটা আমার ধুকধুকও করে উঠতো। ঐ দুষ্ট বাচ্চা তো জানবেও না, বুঝবেও না, ভাববেও না এই বাচ্চাটি হচ্ছে আমার সুখপাখী, নয়ন তারা, রুমঝুম ললিতকলা। আর সব মায়ের মতন ও কষ্ট পেলে আমিই আগে মরে যাব। ধুকধুকানী নিয়ে স্কুলের সময়টা শেষ করে একদিন নিতে এসে ওকে দেখা মাত্রই আমার হার্টফেলের অবস্থা। মাথা গলা সব পেঁচানো সাদা কিছুতে। সর্বনাশ মাথাটাই কি ফাটিয়ে দিল নাকি? দৌড়ে কাছে যেতেই দেখলাম পেপার টাওয়েল লম্বা করে মাথায় গলায় পেঁচিয়ে রেখেছে। এটা কেন করেছো? বললো, ওদের আমেরিকান টিচার বলেছে, মুসলমান মেয়েরা মাথার চুল ঢেকে চলে। তাই এই ব্যবস্থা। পেছন পেছন বেরিয়েছে তার দুই বান্ধবী ভিকি আর শ্যারন। তাদেরও মাথা ঢাকা। বললো, ওর সমর্থনে আমরাও ঢেকে রেখেছি। অবাক হয়ে আমারটা আমার খোলা চুলের দিকে চেয়ে বললো, তোমার ঢাকনা কই মা। অনেক বাংলাই এরা বলে ইংরেজী থেকে ট্রান্সলেট করে বলার মতন করে।‘কভারড’-কে সে বাংলা করেছে ‘ঢাকনা’, নিজেকে অবশ্যই আমার হঠাৎ করে ¯লীপলেস ভাবীর মতন মনে হতে লাগলো। তারপরও ও-ঠিক আছে দেখে ওকে, সেই সাথে ভিকি আর শ্যারনকেও বুকে টেনে নিয়েছিলাম। শুমাইসা এখন সব রোজাই রাখে, রাখতে পারে। সময় চলে গেছে নিজ নিজ গতিতে, প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিয়ে। এখন আর আগের মতন খুব বেশী দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে না ঈদের দিন নিয়ে। সপ্তাহের শুরুতেই ঘোষণা দেয় মসজিদ থেকে কোনদিন ঈদ হবে। কয়টায় নামাজ হবে ইত্যাদি। মসজিদের ওয়েব সাইডেও দেওয়া থাকে। ছুটি নেওয়াও অনেক সহজ এতে করে। যাইহোক রোজার ঈদে নামাজ শেষে আমরা গিয়েছিলাম আসমা ভাবীর বাসায়। এধার ওধার করে টেবিলময় প্রচুর খাদ্য সাজিয়ে তিনি বসেছিলেন। ওনার ভাই, ভাইয়ের বৌ প্রমুখ এসেছিলেন অন্যান্য স্টেট থেকে ঈদ করতে একসাথে। এদেশে অনেক ভধনয়ের বৌ-ই বিদেশী। আমেরিকান, মেক্সিকান। প্রায়ই দেখি তারা খুব মিশে যেতে চাইছে আমাদের সাথে, বুঝে না আমাদের ভাষা বকবকানী তারপরও পাশে দাঁড়ায়ে থাকে পরম মমতায়। শাড়ী পড়তে না পারলেও ঈদে চাঁদে দেখি সালোয়ার কামিজ পরে খুব আনন্দ সহকারে। কিছু মানুষ সবসময়ই খুব ভাল থাকে, যারা ভালবাসে নিজের পরিবার, স্বামীকে ধর্ম বর্ণের উপরে উঠে। আমি এ ধরনের বহু বিদেশী বৌ দেখলাম এদেশে এসে। কাছে এলে, গল্প করলে, পাশে বসলে, একসময় সত্যিই আর মনে হয় না আমাদের দূরত্ব রয়েছে বর্ণে, শব্দে, ভাষায়, ব্যঞ্জনে, জন্মে। যাই হোক প্রবাসী পিতামাতারাও আসেন ছেলেমেয়ের সাথী হয়ে এই ধরনের ঈদ অনুষ্ঠানে। ওনাদের সমবয়সী মানুষজন অবশ্যই অনেক কম থাকে। এতে করে আনন্দ কতটা ওনারা পান ঠিক জানি না। তবে প্রায়ই মনে হয় ওনারা ছটফট করছেন। হয়তোবা আমারই বোঝার ভুল। তবে আমার ওনাদের আসলেই অনেক নিঃসঙ্গ মনে হয় যেন ‘ঋরংয ড়ঁঃ ড়ভ ধিঃবৎ’, ছটফট করছে। যে কোন পার্টিতে তো ছবি তোলা ব্যাপক বিশাল একটা ব্যাপার। টপাটপ ঝটপট ছবি তোলা চলতেই থাকে। ফেইস বুকের কারণে ছবির এই রমরমা হালচাল। সাজগোজও থাকে বাহারী। বেশ ক’জন ভাবী দুঃখ করলো একবার না পরতেই ফেইসবুকে শাড়ী সবাই দেখে ফেলে আর পরা যায় না। আরেকজন বললো, গত পার্টির কোন ছবিই উনি এখনও আপলোড করেননি কারণ আরো কয়েকবার শাড়ীটা উনি পরবেন তাই। এখানের অধিকাংশ পার্টিতে আজকাল প্রফেশনাল ক্যামেরাম্যান আনারও হিড়িক পড়েছে কারণ তাতে করে ভাবীরা খুব খুশী হয়, অসাধারণ সব ছবি পায়। একজন ভাবী আসমা ভাবীকে জিজ্ঞেস করলো আপনার ভাইয়ের ফ্যামেলীকে নিশ্চয় ‘গাধা গাধা আমি জাতি’ জায়গাটা দেখিয়ে এনেছেন। ভাবী অবাক হয়ে বললো, না তো, কি সেটা। আরে বুঝলেন না সেটা হচ্ছে কেনেডী এসোসিনেশন (অংংধংংরহধঃরড়হ) এর জায়গাটা। ডালাসে কেও এলেই ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়। আর যাওয়া হয় ডালাস মুভীর ঔজ এর সেই সাউথ ফর্ক রেঞ্চে। জন প্রতি টিকেট লাগে আঠার টাকা। যারা মুভীটা দেখেছিল তাদের জন্য দেখা আনন্দের। অন্যদের জন্য অতটা না। যাই হোক ঈদের দিনে আরো কিছু বাসায় ঘুরাটা অনেক আনন্দের। সাথে যখন আছে শুমাইসা আর ইমতিয়াজ। আমি জানি কোন একটা ঈদ আসবে শুমাইসার জীবনে যখন আমিও নেই ইমতিয়াজও। ও হয়তো ওর বাচ্চাদের কাছে গল্প করবে অমুক সময়ে অত বছর আগে বাবা-মায়ের সাথে এই ওই আন্টিদের বাসায় ঈদের দিনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতাম। আমরা বেরিয়ে পড়লাম পরপর অনেকগুলো বাসাতে দেখা দিতে। এদেশে আমরা সচরাচর সবাই সবার বাসাতে দাওয়াতে গেলে গিফট নিয়ে যাই কিন্তু ঈদের দিনে খালি হাতে গিফট ছাড়া হাসি মুখে হাজির। নিয়মটা কেন কিভাবে হলো জানি না। সম্ভবত একদিনে এত বাসা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেতে হবে এই দৌড়ে গিফট কেবলই বাড়তি ঝামেলা। কেউ কেউ ঈদ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন হোটেলে। টাকা সিস্টেম, টিকেট কেটে ঢুকে পড়। এখানে কিছু ঈদ জামাতেরও আয়োজন করা হয় হোটেলের বিশাল রুম ভাড়া করে। না ওখানে নামাজ পড়তে টিকেট কাটতে হয় না। বরং দারুণ সব স্নেক্স এর ব্যবস্থা থাকে। ঈদ মানেই এদেশে রমরমা আয়োজন। ডালাসে অন্তত তাই। অনেকেই তাই চলে আসে ডালাসে ঈদ করতে। আপনিও আসুন না! দেখা হবে কোন এক ঈদে টেক্সাস!!
×