ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল সিম জালিয়াতি হয়েছে পুনর্নিবন্ধনের সময়, গ্রাহকের সামনেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১ জুলাই ২০১৬

মোবাইল সিম জালিয়াতি হয়েছে পুনর্নিবন্ধনের সময়, গ্রাহকের সামনেই

ফিরোজ মান্না ॥ গ্রাহকের সামনেই কৌশলে মোবাইল সিম জালিয়াতি করা হচ্ছে। সিম পুনঃনিবন্ধনের সময়ই জালিয়াতির আশ্রয় নেয় চক্র। এই চক্র হাজার হাজার সিম অন্যের নামে নিবন্ধন করে নিয়েছে। এখন সেই সিমই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এর সঙ্গে অপারেটর, এজেন্ট ও রিটেইলাররা জড়িত বলে শনাক্ত করেছে মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি এ নিয়ে বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, কারও আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করে প্রিএ্যাকটিভ সিম নিবন্ধন হয়নি। বর্তমানে যেসব গ্রাহক সিম নিবন্ধন করছেন তাদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে এক একজন গ্রাহকের কাছ থেকে তিন চার বার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে প্রিএ্যাকটিভ সিম সংগ্রহ করছে অপরাধীরা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আশা করি তারা একে একে ধরা পড়বে। সূত্র জানায়, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সারাদেশে ঘটা করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে সিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়া চলে। এই সময় পুনর্নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১১ কোটিতে দাঁড়ায়। ৩১ মের পর থেকেই অনিবন্ধিত সিম বন্ধ করে দেয়া হয়। নিয়মানুযায়ী, আঙ্গুলের ছাপ ছাড়া কোন সিম বিক্রি করা যাবে না। কঠোর ও কঠিন আইনের মাধ্যমে সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে কী করে বাজারে প্রিএ্যাকটিভেটেড সিম পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি জানিয়েছে, এটা নিয়ে বিটিআরসিতে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আমরা বিষয়টি খুঁজে দেখছি। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। বিটিআরসির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রিএ্যাকটিভেটেড সিম বিক্রির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। মোবাইল সেক্টরে শৃঙ্খলা আনার পর একটি চক্র এমন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। চক্রটি যতই শক্তিশালী হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে যুক্তরা এ কাজের পেছনে থাকতে পারে। আবার দু’একটি অপারেটরও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে প্রিএ্যাকটিভ সিম পাওয়া যাচ্ছে এমন খবর পাওয়ার পরই আমি নিজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য লিখিতভাবে বলেছি। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে কয়েক হাজার সিমসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারাদেশে আনাচে-কানাচে যেখানেই এমন সিমের সন্ধান মিলবে সেখানেই অভিযান চালানো হবে। তবে সবার আগে সচেতন হতে হবে গ্রাহককে। গ্রাহকের সামনেই অসৎ প্রতারক চক্র তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিন চার বার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে নিচ্ছে। যদি গ্রাহক সচেতন হতেন তাহলে প্রতারক চক্র এ কাজটি করতে পারত না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুনঃনিবন্ধন সিমের ক্ষেত্রে এ কাজটি বেশি করতে পারেনি। বাজারে যেসব প্রিএ্যাকটিভ সিম পাওয়া যাচ্ছে এবং যেগুলো ধরা পড়েছে তাতে একজন গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ কয়েকবার নিয়ে সিম সংগ্রহ করেছে। এখন পর্যন্ত প্রিএ্যাকটিভ সিমের বিষয়ে এমন তথ্যই আমাদের কাছে রয়েছে। এর বাইরে কোন তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিতে পারেনি। ৩১ মের পর থেকে যে সব গ্রাহক নতুন সিম কিনতে বা পুরনো সিম নিবন্ধন করতে যাচ্ছেন তাদেরই প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা গোটা প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। আশা করি কাজটি তারা বেশি দিন চালাতে পারবে না। তার আগেই তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়া হবে। তাছাড়া এভাবে খুব বেশি সিম তারা নিতে পারেনি। এক থেকে দেড় লাখ সিম প্রতারণার মাধ্যমে নিতে পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আগামী ৭ জুলাই থেকে প্রতি গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেব তিনি কয়টা সিম নিবন্ধন করেছেন। তখন যদি কোন গ্রাহক আপত্তি তোলেন যে, সে দুই বা তিনটা অপারেটরের সিম নিবন্ধন করেছেন। তার নামে যদি আরও সিম নিবন্ধন হয়ে থাকে তাহলে ওইসব সিম বন্ধ করে দেয়া হবে। সাড়ে ১১ কোটি সিম নিবন্ধন থেকে আরও কিছু সিম এভাবে বন্ধ করা হবে। এ বিষয়ে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। একটা কাজ সুন্দরভাবে শেষ করার পর যদি এ নিয়ে আবারও কোন চক্রান্ত হয় তা কোনভাবেই মানা হবে না। এর আগে সিম পুনঃনিবন্ধনের সময় অনেক মহল চেষ্টা করেছে এটাকে বানচাল করার। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এখন যেটা করা হচ্ছে, এখানেও তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। সিম নিবন্ধনের কারণে মোবাইলে হুমকি, সন্ত্রাসী কর্মকা- অনেকাংশে কমে গেছে। এই সেক্টর ব্যবহার করে যেন কেউ কোন অপরাধ করতে না পারেন সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। পুলিশ জানিয়েছে, জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার করে হাজার হাজার মোবাইল সিম নিবন্ধন করে বিক্রি চলছে। এসব সিম প্রিএ্যাকটিভেটেড হিসেবে খুচরা দোকানে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। যে কেউ এসব সিম কিনে নিতে পারেন। তার জন্য নতুন গ্রাহককে কোন ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হয় না। তবে এই সিমগুলো বেশিরভাগ কিনে নিচ্ছে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে সিম জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে বুধবার রাতে ময়মনসিংহের সানকিপাড়া থেকে অবৈধভাবে বায়োমেট্রিক করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ হাজার ২শ’ মোবাইল ফোনের সিম, অবৈধ ভিওআইপি, বায়োমেট্রিক যন্ত্রসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে নাগরিক সমাজের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করে এসব সিম বাজারে আনা হচ্ছে। যদিও আদালতে এ বিষয়ে একটি রিটও হয়েছিল, যা খারিজ হয়ে গেছে। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আঙ্গুলের ছাপ কোনভাবেই সংরক্ষণ করা হয়নি। এটা করার কোন সুযোগও নেই। আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণের বিষয়টি একটি অপপ্রচার।
×