ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিএম আখতারুল ও এজিএম শফিউল্লাহও গ্রেফতার ॥ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

অগ্রণীর ভারপ্রাপ্ত এমডি দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ জুলাই ২০১৬

অগ্রণীর ভারপ্রাপ্ত এমডি দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান খান। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আটকের পর অভিযুক্ত আটজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করে দুদক। এর আগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৭৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করার অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবদুল হামিদকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এমডিকে অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়। জানা গেছে, মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুন গ্রুপকে ১০৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়া এবং পর্যায়ক্রমে ৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগে করা মামলায় মিজানুর রহমান খানকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরেই তিনিসহ আটজনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক বেনজীর আহমেদ। ওই মামলার এজাহারভুক্ত আরও দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেনÑ ব্যাংকটির উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আখতারুল আলম ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক শফিউল্লাহ। মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑ ব্যাংকটির সদ্য অপসারিত এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ, মুন গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মোফাজ্জল হোসেন, ডিজিএম (অবসরপ্রাপ্ত) আমিরুল ইসলাম ও প্রধান শাখার সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার রফিকুল ইসলাম। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যদের লাভবান করে প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ৫৫৫ নম্বর প্লটে মিজানুর রহমানের বৈধ মালিকানা ছিল না। ওই জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছিল। তাছাড়া রাজউক অনুমোদিত বৈধ নক্সাও ছিল না। বিতর্কিত ওই জমিতে নির্মাণাধীন একটি ভবনের অস্বাভাবিক নির্মাণ ব্যয় ও আয় দেখিয়ে মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুন গ্রুপকে ১০৮ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংক। মঞ্জুর হওয়া ঋণ থেকে পর্যায়ক্রমে ৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা তুলে নিয়ে ব্যাংক তথা রাষ্ট্রের ওই পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত করেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে সকালে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদকে অপসারণ করা হয়। এর পর দুপুরের দিকে ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয়া হয় মিজানুর রহমান খানকে। তিনি অগ্রণী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এমডির দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর মিজানুর রহমান দুদকে হাজিরা দিতে যান। দুদকে যাওয়ার আগে অগ্রণী ব্যাংকে নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ আসায় তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। এদিকে, অপসারণের বিষয়টি জানিয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক মহাব্যবস্থাপক স্বাক্ষরিত চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে। মেয়াদের শেষ সময়ে এমডিকে অপসারণের বিষয়ে বুধবার বিকেলে অনুমোদন দেন গবর্নর। এর আগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৭৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করার ব্যাপারে শুনানি শেষে তাকে অপসারণের সুপারিশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটি। এমডি হিসেবে তার মেয়াদ ছিল আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত। জানা গেছে, ২০১১ সালে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ প্রধান শাখা থেকে তানাকা ট্রেডকম ইন্টারন্যাশনালকে ১২০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেয়। পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই এমডি নিজে জামানত পরিবর্তন করে দেন। যদিও এ ক্ষমতা তার ছিল না। এর পর ২০১৫ সালে ১১ কোটি টাকা ঋণ নবায়ন করে দেন এমডি, পাশাপাশি ৪৬ কোটি টাকা ঋণখেলাপী হওয়ার পরও নিয়মিত দেখানো হয়। ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৩ লঙ্ঘন করে ২০০ কোটি টাকা ঋণপত্র সীমা দু’বার নবায়ন করেন এমডি। এছাড়া সানমুন গ্রুপের কর্ণধার মিজানুর রহমান মিজান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে ব্যাংককে ঝুঁকিতে ফেলেছেন। এমন কয়েকটি অনিয়মের কারণেই তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুরুতে এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে ৯০৬ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ আনা হলেও পরে ৭৯২ কোটি টাকা অনিয়মের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৪৩৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে খেলাপী হয়ে গেছে। শুনানি শেষে ২১ জুন স্থায়ী কমিটি তাকে অপসারণে গবর্নরের কাছে সুপারিশ জমা দেয়।
×