ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ যাকাত ও ফিতরা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১ জুলাই ২০১৬

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ যাকাত ও ফিতরা

ইসলামে দান-খয়রাতের নানা মাত্রিক ধরন রয়েছে। সাদাকা ইফাক ফী সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। সব ধরনের দানই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। দানকে ফরয করে বিধান চালু হয় হিজরতের পর। একে বলা হয় যাকাত। যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। যাকাত ও ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কুরআন মজীদের বহু স্থানে সালাতের আদেশের সঙ্গে যাকাতের আদেশ দেয়া হয়েছে। যাকাত ফরয হবার বহু পূর্বে দান করার অর্থে যাকাত দেবার নির্দেশ নাযিল হয়। ইরশাদ হয়েছে, সালাত কায়েম করে যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহকে দাও উত্তম ঋণ (কর্যে হাসানা) তোমরা তোমাদের মঙ্গলের জন্য অগ্রিম যা কিছু প্রেরণ করবে তোমরা পাবে আল্লাহর নিকট। ওটাই উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসেবে মহত্তর। আর তোমরা ক্ষমা চাও আল্লাহর নিকট। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা মুয়াজ্জিম : আয়াত ২০)। যাকাতের নির্ধারিত বিধান নাযিল হয় হিজরতের পরে। সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কিংবা সাদাকা অর্থে দান খয়রাত করতেন। কিন্তু সে সব দানের মধ্যে ছিল সওয়াব লাভের প্রবল আকাক্সক্ষা। কত পরিমাণ দান করতে হবে তার নির্দিষ্ট কোন হার ছিল না। একবার তার দানের পরিমাণ সম্পর্কে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হে রসূল) লোকে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, কী তারা ব্যয় (দান) করবে? আপনি বলে দিন, যা উদ্বৃত্ত। এইভাবে আল্লাহ তার বিধান তোমাদের জন্য সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত করেন। যাতে তোমরা তাফাককার করতে পারো। (সূরা বাকারা : আয়াত ২১৯)। এর বহু পরে সূরা তওবার ১০৩ নম্বর আয়াতে কারীমা নাযিল হলে যাকাত আদায় ও খাতওয়ারি ব্যয় করার বিধান বলবত হয়। সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে যাকাত ব্যয় করার ৮টি খাত নির্ধারিত করে বিধান নাযিল করা হয়। এখানে লক্ষণীয় এতে যাকাতকে সাদাকাত বলা হয়েছে। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : সাদাকা (যাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান, আল্লাহ সব জানেন, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তওবা : আয়াত ৬০)। যাকাত সালাতের মতোই ফরয। ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর আমলে ভ- নবীদের একটা গ্রুপ যাকাত না দিবার পক্ষে প্রচারণা চালালে তিনি বলেন : আল্লাহর শপথ! যে ব্যক্তি সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব। (বুখারি শরীফ), (মুসলিম শরীফ)। যাকাত আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আয়কর নয় কিংবা গরিবের প্রতি দয়ার দানও নয়। এটা ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার যা আল্লাহ জাল্লা শানুহু বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। ফিতরাও এক ধরনের যাকাতÑ একে সাদাকাতুল ফিতরও বলা হয়। রমাদানুল মুবারকের শেষে ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায় শরী’আত দ্বারা। নির্দিষ্ট করে দেয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারীর ওপর অর্থাৎ সাহিবে নিসাবের উপর। যাকাতের নিসাব ও ফিতরার নিসাব সমান হলেও ধন-সম্পদের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যাকাতের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হলে সেই সাহিবে নিসাবের উপরে যাকাত বাধ্যতামূলক হয়ে যায় শতকরা আড়াইভাগ হিসাব করে যাকাত দেয়া, কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হবার প্রয়োজন হয় না বরং ঈদ-উল-ফিতরের দিন সকালে নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারী হলেই তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায়। নিসাবের পরিমাণ হচ্ছে সাড়ে সাত তোলা সোনা অর্থাৎ ৮৭.৪৫ গ্রাম সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অর্থাৎ ৫১২.১৫ রৌপ্য অথবা ঐ পরিমাণ সোনা বা রৌপ্যের দামের অর্থ অথবা সম্পদ। ফিতরার জন্য নির্ধারিত নিসাবের অধিকারীকে ফিতরার জন্য নির্ধারিত মাথাপিছু হিসেবে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। সাহিবে নিসাব নিজের পরিবারের নাবালিগ সন্তানাদি, গৃহভৃত্য সবার ফিতরা তিনি আদায় করবেন। এমনকি ঈদ-উল-ফিতরের দিন সকাল বেলার পূর্বে যদি কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে তারও ফিতরা আদায় করবেন। ঈদের দিন সকালে ঈদের সালাত আদায় করতে যাওয়ার পূর্বে ফিতরা দেওয়া উত্তম। ফিতরার মাধ্যমে রমাদানের সিয়ামের মধ্যে যদি কোন অনিচ্ছাকৃত ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে থাকে তার প্রায়শ্চিত্ত সঞ্চিত হয়। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.) সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×