ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদে দেশী পোশাক

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১ জুলাই ২০১৬

ঈদে দেশী পোশাক

‘হে বঙ্গ ভা-ারে তব বিবিধ রতন/ তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি’- মহাকবি মাইকেল মধুসূদন সেই কোন্কালে লিখে গিয়েছিলেন কথাগুলো; মূলত বাংলা ভাষাকে উপজীব্য করে। যদিও এটি ভাষার মতো বাংলাদেশের বহু সম্পদ সম্পর্কেই প্রযোজ্য হতে পারে। কথাগুলো পুরনো হচ্ছে না। এমনকি ঈদ মৌসুমে নতুন কাপড় কেনাকাটার ধুম দেখেও মনে প্রশ্ন জাগেÑ অবোধের মতো দেশী সম্পদকে আমরা উপেক্ষা করে যাচ্ছি না তো? অবশ্য স্বীকার করতেই হচ্ছে, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। ক্রেতা আর হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন না ভিনদেশী পোশাকের ওপর। আরও খোলাখুলি বললে বলতে হবে, ভারতীয় পোশাকের সেই আগের ক্রেজ আর নেই। নববর্ষ বরণ উৎসবকালে প্রায় শতভাগ স্বদেশী কাপড়ের জয়জয়কার লক্ষ্য করা যায়। ঈদে এখনও শতভাগ বলার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে প্রতিবছরই অধিক সংখ্যক মানুষ ঈদের কেনাকাটায় দেশী কাপড়কেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় একই ধরনের বড় ঘের দেয়া কামিজ কখনও জিপসি, কখনও আনারকলি কখনও পাখি জামা নামে বাজারে এসেছে। আদতে পোশাকের ধরন একই ছিল সব সময়। সেই একই পোশাকের নাম চলতি বছর বাজিরাও মাস্তানি। উদ্ভট সব নাম আমদানিকৃত ভারতীয় পোশাকের। এসব পোশাকের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক নেই; তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে নামগুলো নারীর জন্য অবমাননাকরও। ‘ছাম্মাক ছাল্লো’ একটি পাঞ্জাবি শব্দ। যার মানে চটকদার সাজ-পোশাকের নারী, যে পোশাক এবং সাজ দিয়ে পুরুষকে আকৃষ্ট করতে চায়। সাধারণত আইটেম গার্লদের জন্যই এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। অথচ এই নামের পোশাক ঢাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ‘দেশী পোশাকের মতো আরামদায়ক ফেব্রিক আর কোন দেশের ফেব্রিকে হয় না। এই ঈদেও দেশীয় ফ্যাশন হাউসের শাড়িই কিনব’Ñ এ কথাগুলো হাল আমলের জনপ্রিয় এক নায়িকার। রুপালি পর্দার তারকারাই যখন দেশী পোশাক সম্বন্ধে এমন ধারণা পোষণ করছেন তখন মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত তরুণীদের পছন্দের পোশাক বিষয়ে অনুমান করতে কষ্ট হয় না। আমাদের প্রতিবেদক ঈদ-বাজারে রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মলের ক্রেতা, বিক্রেতা, নক্সাবিদ এবং দেশীয় ফ্যাশন হাউসের কর্ণধারদের সঙ্গে আলাপচারিতার ভিত্তিতে জানিয়েছেন, এবার ঈদে ক্রেতাদের দেশীয় পোশাক কেনার আগ্রহের মাত্রা বেড়েছে। তবে সত্য প্রকাশের দায়বোধ থেকে বলতেই হবে- এখনও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের জাঁকজমকপূর্ণ পোশাকের ব্যাপারে আকর্ষণ রয়েছে এক শ্র্রেণীর ক্রেতার। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যের প্রতিযোগিতা থাকবে। তাছাড়া পোশাক ব্যক্তিবিশেষের রুচি ও ক্রয়ক্ষমতার ওপরও নির্ভর করে। তবে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় ঈদ মৌসুমে দেশী পোশাকের ওপর মানুষের নির্ভরতা আগের তুলনায় বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রতিবছরই নতুন নতুন বুটিক হাউস দেশে আত্মপ্রকাশ করছে। সত্যি বলতে কি, গণমাধ্যমের একটা অংশ বিদেশী পোশাকের প্রতি কিছুসংখ্যক ব্যক্তির আকর্ষণকে ফলাও করে প্রচার করে থাকে। এ নিয়ে একজন উদ্যোক্তা আক্ষেপ করে বলেছিলেনÑ ‘ঈদ এলেই বিদেশী পোশাক নিয়ে প্রতিবেদন হয়। কিন্তু আমরা দেশী ফ্যাশন হাউসগুলো যে কী ধরনের অবর্ণনীয় কষ্ট করছি, তা কেউ লেখে না।’ দেশী পোশাকশিল্পকে দারুণভাবে সজীব রাখা শুধু ক্রেতার দায়িত্ব নয়Ñ এ বিষয়ে সরকারেরও নিশ্চয়ই কিছু করণীয় রয়েছে। মজুরি স্বল্পতার কারণে জামদানির অভিজ্ঞ কারিগররা পেশা বদল করে অন্য পেশায় যাতে চলে না যান সেদিকটাতেও দৃষ্টি দিতে হবে। সব দিক বিচক্ষণতার সঙ্গে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিলে দেশী পোশাকের বাজার নিশ্চয়ই সম্প্রসারিত হবে। সেদিন বেশি দূরে নয় যখন পার্শ্ববর্তী দেশের নানা উৎসবে আমাদের তৈরি পোশাকের যথেষ্ট চাহিদা সৃষ্টি হবে।
×