ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩০ জুন ২০১৬

মিয়ানমারের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার উদ্যোগ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা-নেপিডো’র মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক পাঁচ দিনের সফরে বুধবার মিয়ানমার গেছেন। দেশটি সফরকালে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নেত্রী আউং সান সুচির কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি পৌঁছে দেবেন পররাষ্ট্র সচিব। প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো বার্তার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী আউং সান সুচির এনএলডি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার এখন গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা একটি চিঠি আউং সান সুচির কাছে হস্তান্তর করবেন পররাষ্ট্র সচিব। মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিডো’তে উচ্চপর্যায়ে একাধিক বৈঠক করবেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। শহীদুল হক মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান মিন অং লায়েং ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী প্রতিনিধি ইউ অং লেইলের সঙ্গেও একান্তে বৈঠক করবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো চিঠিতে এনএলডি সরকারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানায়। আউং সান সুচি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর পদটি সুচির জন্য তৈরি করা হয়েছে যাতে করে তিনি সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, এ্যাসোসিয়েশন ও ব্যক্তির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে পারেন। এই পদের মাধ্যমে তিনি পার্লামেন্টে জবাবদিহিও করতে পারেন। রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলেছে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যার মধ্যে আটকে না থেকে বহুমুখী সম্পর্ক গড়তে উদ্যোগী উভয় দেশ। বিশেষ করে এনএলডি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশই এখন বহুমুখী সম্পর্ক গড়তে চায়। এই লক্ষ্যে দুই দেশই সড়ক ও বিমান যোগাযোগ, ভিসা সহজীকরণ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, ভ্রমণ সুবিধা ইত্যাদি ইস্যুকেই এখন প্রাধান্য দিচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের মিয়ানমার সফর দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে মিয়ানমার পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান ও সচিব বো বো জানিয়েছেন, মিয়ানমারের নতুন সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। তারা আশা করে বাংলাদেশ সরকারও সম্পর্কোন্নয়নে বাধা অপসারণে পদক্ষেপ নেবে। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিয়ানমারের সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন অভিযাত্রা সূচিত হয়। এছাড়া ২০১৪ সালে ঢাকায় দেশ দুটির পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অষ্টম বৈঠক হয়। সেখানে উভয় দেশই পারস্পরিক সহনশীলতা ও সদিচ্ছার মাধ্যমে সীমান্ত রক্ষা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, আন্তঃসংযোগ, জ্বালানি নিরাপত্তা, বিসিআইএম ও বিমসটেকের উদ্যোগগুলোতেও একত্রে কাজ করার জন্য আলোচনা হয়। এদিকে বর্তমানে দেশটিতে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার জন্য অনেক দেশই অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি হলে উভয় দেশের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সুফল বয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই মতামত দিয়েছেন। ১৯৬২ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী মিয়ানমারে ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে ৫০ বছরের বেশি সময় সেনাবাহিনী দেশটি শাসন করে। তবে বিভিন্ন দেশের ব্যাপক অবরোধ আরোপের ফলে সামরিক সরকার ২০১০ সালে খোলানীতি গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের নবেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সুচির দল এনএলডি নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। মিয়ানমারে চলতি বছর এনএলডি সরকার গঠন করে। তবে মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী ৬৬৪ আসনের পার্লামেন্টে ১৬৮টি আসন (২৫ শতাংশ) সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া সীমান্তসহ বেশ কিছু ইস্যুতে সেনাবাহিনীর প্রভাব রয়েছে। এ কারণে গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব বহাল রয়েছে। তবে সুচির প্রতি প্রবল জনসমর্থন ও পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন থাকায় তাকে উপেক্ষা করতে পারছে না সেনাবাহিনী। এই অবস্থার মধ্যেই ঢাকা-নেপিডো নতুন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যেই বিশেষ প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×