ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী ৬ মাসের মধ্যে ভাড়াটেদের ডাটাবেজ সম্পন্ন হবে ॥ ডিএমপি কমিশনার

রাজধানীর ৮ ক্রাইম জোনে ১২ ছিনতাই চক্র তৎপর

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৩০ জুন ২০১৬

রাজধানীর ৮ ক্রাইম জোনে ১২ ছিনতাই চক্র তৎপর

শংকর কুমার দে ॥ পুলিশের ভাষায়, ‘ওরা মৌসুমী অপরাধী’। ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ভুয়া ডিবি বা র‌্যাব, প্রতারক চক্র। পবিত্র রমজান থেকে ঈদ পর্যন্ত এই মওসুমী অপরাধী চক্রের তৎপরতা দমনই হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ। রাজধানী ঢাকার ৪৯ থানা এলাকায় মওসুমী অপরাধ দমনে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া মঙ্গলবার সকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় বলেছেন, রাজধানীতে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। পুরো শহর সিসি টিভির আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো কম্পিউটারের বাটনে চাপ দিলেই নাগরিকদের সব তথ্য জানা যাবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে ঢাকায় সব ভাড়াটিয়ার ডাটাবেস তৈরির কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে ভাড়াটিয়াদের যে তথ্য নেয়া হয়েছে, সেখান থেকে অনেক অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। ডিএমপি সূত্র মতে, ঈদ ঘনিয়ে এলেই শুরু হয় মওসুমী অপরাধীদের তৎপরতা। রাজধানীর ৩ শতাধিক স্পটে ছিনতাইকারীরা ছিনিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা, যা উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। পবিত্র রমজান মাসে ইতোমধ্যেই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ। চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম ও ব্যাপক তৎপরতার কারণে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় মওসুমী অপরাধীদের তৎপরতা অনেক কম বলে জানিয়েছে ডিএমপির কর্মকর্তারা। ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ ঘনিয়ে এলেই শুরু হয় ‘ঈদের সালাম’ দিয়ে চাঁদাবাজি করে সন্ত্রাসী চক্র। ‘ঈদের বকশিশ’ চাওয়ার নামে চাঁদা দাবির নেপথ্যে প্রচ্ছন্ন হুমকির ইঙ্গিতও থাকে। এই কায়দায় চাঁদাবাজি করে সন্ত্রাসীরা। আর অভিনব উপায়ে নানা কৌশলে পথচারী, যাত্রীদের কিছু খাইয়ে বা মুখে রুমাল ধরে অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে অজ্ঞান পার্টি। সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার সময়ে অজ্ঞানপার্টির হাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। ছিনতাইকারীরা রাস্তার পথচারীদের নির্জন বা সুবিধাজনক স্থানে ছিনতাই তো করছেই, এমনকি মোটরসাইকেল, বেবিট্যাক্সি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের মাধ্যমেও ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে। ছিনতাইকারীদের কাছে ছিনতাইয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে মোবাইল ফোন। আর রিক্সারোহী মহিলা যাত্রীদের স্বর্ণালংকার হচ্ছে ছিনতাইকারীদের প্রথম টার্গেট। ডিএমপি সূত্র জানান, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসে ততই ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, অজ্ঞান পার্টির অপরাধীর তৎপরতাও বেড়ে যায়। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল, ফুটপাথে ওঁৎ পেতে থাকে এই ধরনের অপরাধীরা। সুযোগ বুঝে ছোঁ মেরে অপরাধ সংঘটিত করে নিমিষেই উধাও হয়ে যায় তারা। এই ধরনের অপরাধীরা সংঘবদ্ধ চক্র। বেশির ভাগ চক্রই শহরের বাইরে থেকে আসে। অপরাধ সংঘটিত করে আবার তারা শহরের বাইরে চয়ে যায়। তবে বস্তি এলাকার কিছু অপরাধী আছে যারা মাদকাসক্তও। চলতি রমজান মাসে বেশ কিছু লোকজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছে। ডিবির অভিযানে অজ্ঞান পার্টির অনেক সদস্য গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গেছে। ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় যেসব জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে সেসব জিডির সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পুরান ঢাকা, মিরপুর, তেজগাঁও, বাড্ডা, রামপুরা, উত্তরাসহ কয়েকটি এলাকায় এমনিতেই সব সময় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পরিচয়ে চাঁদাবাজি চলে। বাড়ি নির্মাণ বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করলেই চাঁদা দিতে হয়। ঈদে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। এখন শাহাদাৎ, কিলার আব্বাস, ইমন, জিসান, জয়, সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, বিকাশ ও প্রকাশের মতো সন্ত্রাসীদের সঙ্গে উঠতি সন্ত্রাসীদের নামেও চাঁদা আদায় চলছে। তবে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কোন অস্তিত্ব নেই বলে মনে করেন ডিএমপির কর্মকর্তারা। সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী পরিচয়েও চলছে চাঁদাবাজি। কয়েকজন ব্যবসায়ীকে চিরকুট পাঠিয়ে হুমকিও দেয়া হয়েছে। বড় ব্যবসায়ী থেকে ফুটপাথের দোকানদারদেরও চাঁদার টাকা গুনতে হচ্ছে। চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে সরকারী-বেসরকারী চাকরিজীবীদেরও। রোজার শুরু থেকে তারা মোবাইল ফোনে ‘ঈদ সালাম’ দিতে শুরু করেছে, যা এখন ঈদ বকশিশে রূপ নিয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আওতাধীন ৮ ক্রাইম জোনের প্রতিটিতেই ১০-১২টি করে ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে শতাধিক ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। এই চক্রের সদস্য তিন শতাধিক। ছিনতাইকারীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে শুরু করে ধারালো অস্ত্র রয়েছে। মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, কখনও প্রাইভেট কারে করে তারা শহরজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাজধানীর তিন শতাধিক স্পটে সক্রিয় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। ঈদকে সামনে রেখে অভিনব কায়দায় ছিনতাইয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। সাংবাদিক, ডিবি পুলিশসহ নানা পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে লুটে নিচ্ছে তাদের অর্থ-সম্পদ। এমনকি একশ্রেণীর নারী ছিনতাইকারী, নারী পকেটমার দলকে ব্যবহার করছে প্রতারক ও দুর্বৃত্ত চক্র। এই চক্র ব্যাকমেইল করে দিনদুপুরে হাতিয়ে নিচ্ছে সর্বস্ব। এমনকি সুন্দরী তরুণীদের এই কাজে ব্যবহার করছে এসব প্রতারক চক্র। ঈদকে সামনে রেখে অভিনব কায়দায় রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই চক্রের সদস্যরা। প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এই চক্রের কবলে পড়ে ছিনতাই ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঘটছে চাঁদাবাজির ঘটনাও। ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টাকার লেনদেন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রমজান শুরুর পর পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে নেই ছিনতাই। দিনে-দুপুরে শত শত মানুষের সামনেই অস্ত্রের মুখে কখনও বা গুলি করে আহত করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। ডিএমপি সূত্র জানান, ভুয়া ডিবি, র‌্যাব ও পুলিশ পরিচয় দিয়ে ১০ থেকে ১২টি গ্রুপ ডাকাতি ও ছিনতাইসহ অপরাধী কাজে সক্রিয় রয়েছে রাজধানীতে। এরা একই চক্রভুক্ত। র‌্যাব-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত বেশকিছু সদস্য এসব দলে কাজ করছে।
×