ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি : শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ২৯ জুন ২০১৬

সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি : শেখ হাসিনা

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরে বলেছেন, সব ধরণের নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, হুকুমদাতা এবং অর্থের যোগানদাতাদের আইনের আওতায় আনতে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পাশাপাশি জঙ্গী-সন্ত্রাসীসহ সকল অপরাধীদের কর্মকান্ড রোধে অর্থের উৎস সন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬টি সংগঠনকে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতেও সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও যে কোন ধরণের অরাজকতা রোধসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সব ধরণের নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ও হুকুমদাতাদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার পুলিশসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর এ লক্ষ্যে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, জনসাধারণের সম্পদ ও জীবনের নিরপত্তা বিধানসহ অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সকল ধরণের কর্মকান্ড মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬টি সংগঠনকে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সকল প্রকার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ওয়েরেন্টভূক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র ও বিষ্ফোরক এবং মাদকদ্রব্যসহ সকল ধরণের মামলাল উদ্ধারে পুলিশের নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা সংক্রান্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে সফলতার পরিচয় দিয়েছে। সন্ত্রাসী হামলা, অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলা, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ রুজুকৃত মামলাসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তপূর্বক বিচার কার্যক্রম গৃহীত হচ্ছে। কূটনৈতিক ও বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় পুলিশ কর্তৃক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তিনি জানান, ইতোপূর্বে সন্ত্রাসী, নাশকতামূলক বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কর্মকান্ড ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গী-সন্ত্রাসীসহ সকল অপরাধীদের কর্মকান্ড রোধে তাদের অর্থের যোগানদাতা ও অর্থের উৎস সন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। রাজধানীতে প্রতিটি থানা এলাকায় নিয়মিত উঠান বৈঠক করা হচ্ছে এবং থানা এলাকার বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়াদের নাম-ঠিকানাসহ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ, দিক-নির্দেশনা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে বিএনপি-জামায়াত জোট ও নাশকতাকারীদের সারা দেশব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, নির্বাচন পরবর্তী লাগাতার আন্দোলনের নামে পেট্টোল বোমা দিয়ে নৃশংসভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এবং ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র দিবসে সৃষ্ট ঘৃণ্য কর্মকান্ডের মাধ্যমে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রয়াস বাস্তবায়িত হয়নি। আর এ ধরণের নাশকতা ও সহিংসতামূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, সন্ত্রাসী-নাশকতাকারীদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়ার জন্য জেলার বিভিন্নস্থানে থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর সংবলিত বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এলাকাভিত্তিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সব ধরণের নাশকতা ও সহিংসতার কুফল সম্পর্কে প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সাত বছরে সাড়ে ১০ কোটি নতুন কর্মসংস্থান ॥ সরকারি দলের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফলে দেশে ও বিদেশে মিলে গত সাত বছরে প্রায় ১০ কোটি ৬৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। এতো কর্মসংস্থান অতীতে আর কখনও হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোর সরকারের পূর্বের মেয়াদে জনগণের অভূতপূর্ব রায় নিয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। এ গণরায়ের ভিত্তি ছিল ‘রূপকল্প-২০১৯’, দিন বদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচির প্রতি জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন। সংসদ নেতা বলেন, যখন আমরা ২০০৯-এ সরকার গঠন করি, সারা বিশ্ব ছিল তখন অর্থনৈতিক মন্দাগ্রস্থ। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ছিল মন্দা কবলিত। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৫ সালের নমিনাল জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৬তম এবং ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে ৩৪তম স্থান অধিকার করেছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহিত প্রধান পদেক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশের প্রধানতম শ্রম বাজারের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফলে দেশে ও বিদেশে মিলে গত সাত বছরে প্রায় ১০ কোটি ৬৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। এত কর্মসংস্থান অতীতে আর কখনও হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যেহেতু একটি রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে, সে কারণে আমার দৃষ্টি কেবল এক বছরে সীমাবদ্ধ নয়। আওয়ামী লীগ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪- তে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথমসারির উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত করার রূপরেখা অঙ্কিত হয়েছে। ২০১৮ সালেই পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলবে ॥ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাহসী নেতৃত্ব ও দৃঢ় সিন্ধান্ত গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে এবং ২০১৮ সাল নাগাদ এ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে।
×