ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেসিকে ফেরানোর সংগ্রাম

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৯ জুন ২০১৬

মেসিকে ফেরানোর সংগ্রাম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফুটবলবিশ্ব বিস্ময়ে বিমূঢ়। লিওনেল মেসি আচমকা অবসর নিয়ে নেবেন এটা কেউ ভাবতেই পারেননি। কিন্তু এটাই এখন বাস্তবতা। চিলির কাছে শতবর্ষী কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন বর্তমান ফিফা সেরা ফুটবলার। সময়ের অন্যতম সেরা তারকার এমন সিদ্ধান্তের পর ফুটবলবিশ্বে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মেসির সিদ্ধান্তে আর্জেন্টিনার ফুটবলেও বড় ধরনের ওলট-পালট শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন অবসর নিয়েছেন, আরও অনেকেই নেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এমন হতে থাকলে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা খেলতে পারবে কিনা সে প্রশ্নও উঠে আসছে। এ কারণেই টনক নড়েছে আর্জেন্টাইনদের। মেসির সিদ্ধান্তের পর দেশটির সর্বকালের সেরা ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা অনুরোধ জানিয়েছেন ফিরে আসতে। শুধু তাই নয়, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাক্রিও গোটা জাতির পক্ষ থেকে মেসির অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এই আহ্বান জানিয়েছেন তারা। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে ম্যারাডোনা বলেন, মেসিকে অবশ্যই জাতীয় দলে থাকতে হবে। তাকে রাশিয়ায় যেতে হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। যারা দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, তাদের কথাতেই ভরসা করা উচিত মেসির। যারা চলে যাওয়ার কথা বলছে, তাদের কথায় না। যারা বলছে মেসির জাতীয় দল থেকে সড়ে দাঁড়ানো উচিত তারা বুঝতে পারছে না কি দুঃস্বপ্ন আর্জেন্টিনার জন্য অপেক্ষা করছে। আর্জেন্টিনার ফুটবল কতটা বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। মেসির বিদায় ঘোষণার পরপর আর্জেন্টিনার আরও একঝাঁক খেলোয়াড় অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বলে খবর চাউর হয়েছে। মেসির প্রতি সহমর্মিতা জানালেও অন্যদের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী তারকা। তাদের উদ্দেশ্যে পাল্টা সমালোচনার চাবুক ছুড়েছেন ম্যারাডোনা। তার মতে, আমরাও চলে যেতে চাই জাতীয় কথাবার্তা বলে ওইসব খেলোয়াড়েরা নাকি সহমর্মিতা কুড়ানোর চেষ্টা করছেন! ম্যারাডোনার সাফ কথা, যারা বলছে ওর চলে যাওয়া উচিত, তারা এমন করছে, যেন আর্জেন্টিনার ফুটবলের যে জঘন্য অবস্থা, তা যেন আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। টানা তিন বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলে কী হবে, এটিকে মোটেও সাফল্য হিসেবে মানতে রাজি নন ম্যারাডোনা। মাঠের বাইরে আর্জেন্টিনার ফুটবলে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। ফাইনালের আগমুহূর্তে আর্জেন্টিনার ফুটবল সংস্থার (এএফএ) প্রধানের পথ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে সেগুরাকে। এর আগে এএফএতে হাস্যকর একটা নির্বাচন হয়েছে। এসব প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে দিয়ে ম্যারাডোনা বলেন, আর্জেন্টিনার ফুটবলে যা ঘটে চলেছে, তাতে আমি সত্যিই খুবই ব্যথিত আর ক্ষুব্ধ। আমরা একেবারে তলানিতে পৌঁছে গেছি। আর্জেন্টিনার আরেকটি ফাইনাল হারে ব্যথিত হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাক্রিও। কিন্তু এজন্য মেসিকে দোষারোপ করছেন না তিনি। বরং এই দুঃসময় তার পাশে থেকে তাকে খেলা চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধা জানিয়েছেন। মেসির কাছে সরাসরি ফোন করেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট। জানা গেছে, মেসির সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন মাউরিসিও। এ সময় তিনি অনুরোধ জানান, এখনই হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই। তিনি মেসিকে বলেছেন, তাকে এখনও আর্জেন্টিনার ফুটবলে অনেকদিন দরকার। সেই তাদের সেরা তারকা। আর্জেন্টিনার রোসারিওতে জন্ম নেয়া মেসি সেই শৈশবেই চলে গিয়েছিলেন দেশ ছেড়ে। বেড়ে ওঠা, বড় হওয়া বার্সিলোনাতেই। কিন্তু জাতীয় দল হিসেবে মেসিকে আর্জেন্টিনাকেই বেছে নেন। স্পেন যদিও তাকে পেতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল। এমনকি স্পেনের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে মেসিকে খেলানোর আয়োজন প্রায় করেই ফেলেছিল দেশটির ফুটবল সংস্থা। মেসি ?যদি স্পেনের হয়ে খেলত? নামের পাশে একটি বিশ্বকাপ আর দুটি ইউরো থাকত! কিন্তু নিজ দেশের নাড়ির টান কেইবা অস্বীকার করতে পারে? নিজ দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদটাকে আর্জেন্টিনাও এভাবে হারিয়ে ফেলতে চায় না। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিচ্ছেন জানার পর প্রেসিডেন্ট নিজে থেকে ফোন করেন মেসিকে। ফুটবলবিশ্বে কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থক আহ্বান করছেন- ‘ফিরে এসো মেসি’। মেসির বার্সিলোনা সতীর্থরা আশা করছেন, দ্রুতই সে হতাশা কাটিয়ে উঠবে।
×