ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বাজেট আলোচনা

ক্ষমতার লোভে দেশবিরোধী চক্রান্ত করছেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৯ জুন ২০১৬

ক্ষমতার লোভে দেশবিরোধী চক্রান্ত করছেন খালেদা জিয়া

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারী দলের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী-নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি দিচ্ছেন বলেই খালেদা জিয়ারা আজ জনবিচ্ছিন্ন, হতাশ ও বিভ্রান্ত। আর এই হতাশা থেকেই ক্ষমতার লোভে অন্ধ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দেশবিরোধী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করছেন, ইসরাইলের মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু তাঁর এই স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হবে না। একজন রাজনীতিবিদ, একজন মা এবং একজন স্ত্রী- সব ক্ষেত্রেই খালেদা জিয়া ব্যর্থ হয়েছেন। তাই খালেদা জিয়ার উচিত সরকারের ব্যর্থতা না খুঁজে নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করে চলে যাওয়া। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে মঙ্গলবার বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, সরকারী দলের আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক ডেপুটি স্পীকার কর্নেল (অব) শওকত আলী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নুরুল মজিদ হুমায়ুন, ছলিম উদ্দীন তরফদার, বেগম লায়লা আরজুমান বানু, বিএনএফে’র এস এম আবুল কালাম আজাদ, জাসদের রেজাউল করিম তানসেন ও জাতীয় পার্টির ইয়াহিয়া চৌধুরী। আলোচনা শেষে সংসদের অধিবেশন আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। আজ বুধবার সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমাপনি বক্তব্যের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দীর্ঘ আলোচনা শেষ হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পাস হবে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সব সূচকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। নিজের যোগ্যতায় প্রধানমন্ত্রী এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বে খ্যাতিমান নেতায় পরিণত হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, খালেদা জিয়া প্রত্যেক দিন ইফতার পার্টিতে অশোভনীয়, অমার্জনীয় বক্তব্যে দিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্যই প্রমাণ হয়েছে বিএনপি নেত্রী এখন হতাশ। ষড়যন্ত্র চলছে, ষড়যন্ত্র চলবে। প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এগিয়ে যাবেন। কোনকিছুই তাঁর অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না। ২১ আগস্টসহ বারবার বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে কেউ সফল হয়নি। তিনি বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলছেন। এ কাজে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। বৈশ্বিক রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের পোশাক খাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন। তাতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন করে আমাদের নেগোশিয়েশন করতে হবে। রফতানিকারকদের ওপর সোর্স ট্যাক্স বৃদ্ধি না করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এটা করলে আমাদের রফতানিকারকরা আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের কাছাকাছি আসতে ভারত পোশাক খাতের জন্য বিশেষ প্যাকেজ নিয়েছে। ৬ হাজার কোটি টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেবে এবং প্রতিটি পণ্যে তারা ২৫ শতাংশ ট্যাক্স ইনসেনটিভ দেবে। এক্ষেত্রে আমরা যদি তৈরি পোশাক খাতে সুবিধা না দেই তাহলে বিনিয়োগ হবে না, কর্মসংস্থান হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ক্ষমতার লোভে খালেদা জিয়া শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। এখন গুপ্তহত্যা চালাচ্ছেন। শেখ হাসিনা জনগণকে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি দিচ্ছেন বলেই খালেদা জিয়ারা আজ জনবিচ্ছিন্ন। ক্ষমতার লোভে বিএনপি নেত্রী সরকার উৎখাতে ইসরাইলের মোসাদের সঙ্গে পর্যন্ত হাত মেলাচ্ছেন। যে কোন মূল্যে উনার মসনদ চাই। কিন্তু উনার সেই স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হবে না। রাজনীতিতে হেরেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে হেরেছেন, আন্দোলনেও হেরে গিয়ে খালেদা জিয়া হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে সরকার পরিবর্তন হবে একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে, হত্যা-ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত কিংবা গুপ্তহত্যা করে হবে না। সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জাতীয় নির্বাচন হবে, তার আগে নয়। সেই নির্বাচনেও দেশের জনগণ শেখ হাসিনাকেই নির্বাচিত করবেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া চরম হতাশা থেকেই এখন আবোলতাবোল বকছেন। উনি বললেন, আওয়ামী লীগে নাকি জঙ্গী আছে! আসলে খালেদা জিয়া নিজেই একজন জঙ্গী, এছাড়া দেশে কোন জঙ্গী নেই। খালেদা জিয়াকে থামাতে পারলেই দেশ জঙ্গীমুক্ত হবে। উনি সরাসরি একাত্তরের ঘাতকদের পক্ষালম্বন শুধু নয়, মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। আজ যত হত্যাকা- ঘটছে তা শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা করছে। যারা খুনীর সঙ্গে হাত মেলায়, মদদ দেয়, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেন, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন সমঝোতা হতে পারে না। এরশাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব ভাল কথা বলেন, কিন্তু একটা সমস্যা আছে তাঁর। উনি সব সময় সিদ্ধান্ত বদল করেন। প্রেমিকাও বদলান। উনি ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদল না করলে উনি সবচেয়ে কার্যকর বিরোধী দলের নেতা হতে পারতেন। সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের সামনে অকথ্য মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করতে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। দেশে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করতে প্রত্যক্ষভাবে বিএনপি মদদ দিচ্ছে। জাহাঙ্গীর কবির নানক বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি এখন একটা কক্ষচ্যুত রাজনৈতিক দল। এই দলের ব্যর্থ নেত্রী খালেদা জিয়া ইফতারের সময় নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। হত্যা-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ আর দুর্নীতি ছাড়া বিএনপি নেত্রীই কিছু বুঝেন না। ক্ষমতার লিপ্সায় খালেদা জিয়া পাগল হয়ে গেছেন। রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে, মা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া ব্যর্থ। সরকারের ব্যর্থতা না খুঁজে বরং নিজের ব্যর্থতা মেনে নিয়ে খালেদা জিয়ারই বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা উচিত। বিএনএফে’র এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অকৃতজ্ঞ। জিয়া হত্যার বেনিফিশিয়ারি খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র তারেক জিয়া। অথচ ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি নেত্রী স্বামী হত্যার বিচার করেননি। যিনি নিজের স্বামীর বিচার করেন না, তিনি ষড়যন্ত্র করেও কিছুই করতে পারবেন না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।
×