ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাবুল আক্তার আমাদের নজরদারিতে নেই ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ জুন ২০১৬

বাবুল আক্তার আমাদের নজরদারিতে নেই ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শংকর কুমার দে ॥ স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের ঘটনায় স্বামী পুলিশের এসপি বাবুল আক্তার জড়িত কিনা সেই বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্রমেই রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। স্ত্রী খুনের বাদী স্বামী বাবুল আক্তারকে অনেকটাই আসামির মতো রাতের গভীরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পনেরো ঘণ্টা মোবাইল বন্ধ রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করার ঘটনার পর থেকেই নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। বাবুল আক্তার চাকরিতে আছেন কিনা কিংবা থাকলে কবে যোগদান করবেন, আর না থাকলে কেন চাকরিতে নেই তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রশ্ন দেখা দেয়, খুনের অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা তো পেশাদার খুনী, টাকা দিয়ে ভাড়া করে এনে খুন করানো হয়েছে। তাহলে খুন করানো হলো কেন, মটিভ কি ? খুনের নির্দেশদাতা কে? তদন্তে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দেয়ার কারণেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, পর্দার অন্তরালে প্রভাবশালী মহল থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে প্রকৃত সত্য ঘটনাকে আড়াল করা হচ্ছে কিনা? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাবুল আক্তারের অবস্থানস্থলে পুলিশ পাহারা নিয়ে তার পরিবার সন্দেহ প্রকাশ করলেও তিনি নজরদারিতে নেই। মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘নো (না)। সে আমাদের নজরদারিতে আছে বলে আমরা কখনও বলিনি। বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করেছে, বাবুলকে তাদের মুখোমুখি করা হয়েছিল। তিনি এদের চেনেন কি না বা হত্যার রহস্য কী, তা উদ্ঘাটনেই এই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে খুনীদের শনাক্ত করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ধৈর্য ধরেন। গোয়েন্দারা প্রতিবেদন দিক, তারপর আমরা সব বলতে পারব। আপনাদের কাছ থেকে একটু সময় নিচ্ছি আমরা।’ এসপি বাবুল কোন কথা বলছেন না : স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা- নিয়ে নানা গুঞ্জন চললেও টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত শনিবার মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে ফিরে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন এসপি বাবুল আক্তার। তার আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনরা জানান, কারও সঙ্গেই পারতপক্ষে কথা বলছেন না তিনি। কোন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতেও রাজি হচ্ছেন না। নানা গুঞ্জনের মধ্যেও কোন কথাই বলছেন না বাবুল, বের হচ্ছেন না ঘর থেকেও। স্বজনরাও তার মুখ থেকে কিছু জানতে পারেননি। ডিবি অফিস থেকে ফেরার পর বাবুল একদিনও বাসার বাইরে যাননি। একটি ঘরের মধ্যেই থাকছেন। তাকে খুব বিষণœœ দেখাচ্ছে। বাবুলকে নিয়ে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে : এসপি বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাবুলকে বলেছি, তোমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছে, অনেক ধরনের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। তুমি তোমার অবস্থান পরিষ্কার করছ না কেন ? কিন্তু সে কারও সঙ্গে কথা বলতে চায় না।’ বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর নানা গুজবের মধ্যে মোশাররফ বলেছিলেন, ‘আমি কোনদিন বিশ্বাস করি না, বাবুল মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করতে পারে। এটা একেবারেই অসম্ভব।’ সোমবার তিনি গণমাধ্যমকে এও বলেছেন, ‘আমি তো চাই, মেয়ের হত্যার বিচার হোক। আমার কাছে সেইটাই মেজর বিষয়।’ মঙ্গলবার তিনি বলেন, মিতু হত্যার তদন্তে যেই দোষী প্রমাণিত হোক তার বিচার দাবি করছি। এই হত্যাকে কেউ যেন ভিন্ন কোন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে এই দাবিও জানাচ্ছি। পুলিশ পাহারায় সন্দেহ প্রকাশ : স্ত্রী মিতু হত্যাকা-ের মামলার বাদী বাবুলকে গত শুক্রবার মধ্যরাতে নাটকীয়ভাবে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর নানা গুঞ্জনের মধ্যে তার পুলিশ পাহারা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা-ের পর দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বাবুল ঢাকার মেরাদিয়ায় শ্বশুরের বাসায় আছেন। সেখানে পুলিশ সবসময় পাহারায় থাকছে। কি কারণে মিতু খুন : চারজনকে গ্রেফতারের তথ্য দিলেও কী কারণে মিতুকে খুন করা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও কিছু স্পষ্ট করেনি পুলিশ। বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়েও চলছে রাখঢাক। বাবুল আক্তারকে নিয়ে রাখঢাকের মধ্যে নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। তাকে সন্দেহের কথা আসছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে, আবার আসছে পেশাগত বিরোধের বিষয়টিও। গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দেয়ার জন্য বের হলে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে। চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় জঙ্গী দমনে ভূমিকার জন্য আলোচিত ছিলেন বাবুল। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় বদলি হয়ে এলেও স্ত্রী ও দুই ছেলে সেখানেই ছিলেন। বাবুল বদলি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে স্ত্রী মিতু খুন হন। হত্যার ধরন এবং বাবুলের কার্যক্রমের কারণে শুরুতে জঙ্গীদেরই সন্দেহ করা হচ্ছিল। তবে গত দু’দিনে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ বলেছে, এরা পেশাদার খুনী। বাবুল কি চাকরিতে ফিরছেন : পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত এসপি বাবুল আর চাকরিতে ফিরছেন না বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বাবুল চাকরি ছেড়েছেন কি না- জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি এই নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’ ছায়া তদন্ত জমা : মিতু হত্যার মামলাটি ছায়া তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরাও। গুঞ্জন রয়েছে পিআইবির ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্র তৈরি করেন। এই বিষয়ে বনজ মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ছায়া তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমার প্রতিবেদনের কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে- এমন কিছু তো আমার জানা নেই।’ তদন্তে কী পেয়েছেন, তা জানতে চাওয়া হলে ডিআইজি বনজ তা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
×