ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ২৯ জুন ২০১৬

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক নামে ব্যাংকিং খাতে যোগ হলো আরেকটি নতুন ব্যাংক। ব্যাংকটির পথচলা বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে নয়, দারিদ্র্য বিমোচনকে প্রাধান্য দিয়ে। ২০১৩ সালে বিশেষায়িত এই ব্যাংকটির প্রক্রিয়া শুরু হলেও অবশেষে আলোর মুখ দেখল বুধবার। এদিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ব্যাংকের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে গ্রামীণ মানুষকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে সরকার ব্যাংকটি স্থাপন করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া জনপ্রিয় প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ এখন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ জুন। ২০১৪ সালের ৮ জুলাই এই বিষয়ে একটি আইন সংসদে প্রণীত হয়। আইন অনুযায়ী একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বিলুপ্ত হওয়ার পর এর সকল পরিসম্পদ ও অধিকার ব্যাংকে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিলুপ্ত প্রকল্পের অনিষ্পন্ন কাজ এখন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বাস্তবায়ন করবে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে গ্রামীণ মানুষকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে সরকার ব্যাংকটি স্থাপন করেছে। ব্যাংকটি ৪৮৫টি শাখা নিয়ে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও প্রাথমিকভাবে ১০০ উপজেলায় নিজস্ব ভবনে শাখা চালু হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে স্থায়ী রূপ দেয়া হয়। জানা গেছে, ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। সরকার ও সদস্যরা এর শেয়ারহোল্ডার। সরকারের হাতে ব্যাংকটির ৫১ শতাংশ শেয়ার। এই শেয়ারের বিপরীতে ইতোমধ্যে ১০২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ৪৯ শতাংশ থাকবে প্রকল্পের আওতায় গঠিত ঋণ গ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সমিতিগুলোকে ১০০ টাকা মূল্যের ২৪০টি শেয়ার ক্রয় করবার নির্দেশ দিয়েছে। এভাবে প্রকল্প থেকে ব্যাংকে রূপান্তরের ঘটনা সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক। এখন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আসার পথ প্রশস্ত হলো। আগে গ্রামেগঞ্জে ও তৃণমূলে মোবাইল ব্যাংকিং সম্প্রসারিত হলেও সাধারণ ও প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থার সুযোগ এই প্রথম। এনজিওগুলো তৃণমূলে যে পদ্ধতিতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালনা করছে, সেক্ষেত্রে বহু সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আলোর পথ দেখাবে। গ্রাহকরা এখন তাদের সঞ্চয়ের বিপরীতে নির্ধারিত হারে সুদ পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবেন। তার মানে প্রচলিত ব্যাংকগুলো যে সুবিধা দিয়ে থাকে তার সবই তারা পাবে। যদিও ঋণ প্রদানের ব্যাপারটি অন্যান্য ব্যাংক থেকে ভিন্নতর। জানা গেছে, এই ব্যাংক থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা সহজ শর্তে মৌসুমী ঋণ সুবিধা পাবেন। এমনকি স্বল্প সুদে মৌসুম ও কাজভিত্তিক ঋণ দেয়া হবে, যার সুদের হার হবে মাত্র ৮ শতাংশ। ফসল ওঠা বা সংশ্লিষ্ট মৌসুমভিত্তিক কাজ শেষ করে একবারে ঋণ পরিশোধ করা যাবে। এটা যে নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী, উপকারী, কৃষি ও পল্লীবান্ধব সুবিধা তাতে সন্দেহ নেই। বর্তমানে ব্যাংকটির প্রধান সঙ্কট হবে জনবল। এ ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল জরুরী। জনবল নিয়োগে এবং পরিচালন পদ্ধতি তৈরিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই মনোযোগী হওয়া দরকার। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক উন্নতি লাভ করবে ও সম্প্রসারিত হবে এই আশা সবার। সরকার দরিদ্র মানুষের পুঁজি গঠন ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে এই বিশেষায়িত ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করছে। এটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য যেন বিচ্যুত না হয়। দেশবাসী ব্যাংকটির সার্বিক সাফল্য কামনা করে।
×