ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে জোর লবিং

মাউশির ডিজি পদের জন্য শিক্ষা ক্যাডারে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৮ জুন ২০১৬

মাউশির ডিজি পদের জন্য শিক্ষা ক্যাডারে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৪ জুলাই। এ অবস্থায় শিক্ষা প্রশাসনের সর্বত্রই আলোচনা একটি, কে হচ্ছেন পরবর্তী মহারিচালক? বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ এ পদ পেতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চলছে নানামুখী তদ্বির। সরকারের প্রভাবশালীর কাছে ধরনা দিচ্ছেন বর্তমান মহাপরিচালকসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাবশালী অধ্যাপকরা। তাদের পক্ষে মন্ত্রী, এমপি ও সরকারদলীয় নেতাদের তদ্বিরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরগরম হয়ে উঠেছে। এদিকে বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সরকারের শীর্ষপর্যায় পর্যন্ত জোর লবিং করছেন। বসে নেই অন্য প্রার্থীরাও। মহাপরিচালক হতে আগ্রহী এ প্রার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও। আগ্রহীদের রাজনৈতিক আদর্শ, শিক্ষা ক্যাডারের গ্রহণযোগ্যতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরির বয়সসহ নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে সরকারের সংস্থাগুলো। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আনুকূল্য পেতে চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার। কেউ কেউ ছাত্রজীবনে রাজনীতির অভিজ্ঞতার প্রমাণ ও পারিবারিক সংশ্লিষ্টতাও তুলে ধরছেন সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে। মাউশির মহাপরিচালকের পদটি সচিব পদমর্যাদার এবং তা বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও পদটি খুবই আকর্ষণীয়। ওই পদে নিয়োগের জন্য সরকারপ্রধানের অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই পদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্য থেকে চাকরির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মহাপরিচালক নিয়োগের কথা থাকলেও ১৪-১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক বিবেচনায়ই ওই পদে নিয়োগ প্রাধান্য পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের চাকরির মেয়াদ আগামী ৪ জুলাই শেষ হচ্ছে। তবে ওই দিন সরকারী ছুটি ঘোষণা হওয়ায় আগামী ৩০ জুন বৃহস্পতিবারই সর্বশেষ কর্মদিবস। ইতোমধ্যেই বর্তমান মহাপরিচালক চাকরির মেয়াদপূর্তির বিষয়ে শিক্ষা সচিব বরাবর অবহিতপত্র পাঠিয়েছেন। মাউশির মহাপরিচালক পদের জন্য যারা তদ্বির করছেন তারা সকলেই শিক্ষা ক্যাডারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ও পরিচিত সদস্য। কেউ দেশের সর্ববৃহৎ কলেজের অধ্যক্ষ, কেউ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবার কেউ শিক্ষা প্রশাসনের অন্য কোন দফতরের মহাপরিচালক। যদিও শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের বহুদিনের দাবি, মহাপরিচালক পদে যেন বেসরকারী থেকে সরকারী হওয়া অর্থাৎ আত্মীকৃত শিক্ষকদের না দেয়া হয়। একই আপত্তি আছে ১০ শতাংশ কোটায় আসা অধ্যাপকদের বিষয়েও। এ অবস্থায় তদ্বির করলেও অনেক প্রভাবশালী প্রার্থী দৌড় থেকে ছিটকে পড়তে পারেন বলে বলছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, অনেকেই তদ্বির করছেন কিন্তু এখনও বলা যাচ্ছে না কে হচ্ছেন মহাপরিচালক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব সোমবার জনকণ্ঠকে বলছিলেন, বর্তমান মহাপরিচালকসহ অন্তত সাতজন অধ্যাপক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জোর লবিং করছেন। রাজনৈতিক আনুকূল্য পেতেও চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কিংবা অন্য মন্ত্রী বা অন্য প্রভাবশালীদের দিয়ে ফোন করাচ্ছেন অনেক প্রার্থী। কেউ কেউ ছাত্রজীবনে রাজনীতির অভিজ্ঞতার প্রমাণ ও পারিবারিক সংশ্লিষ্টতাও তুলে ধরছেন। জানা গেছে, মহাপরিচালক পদের অন্যতম দাবিদার দেশের সবচেয়ে বড় কলেজ রাজধানীর সরকারী তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু হায়দার আহমেদ নাছের। দীর্ঘ সাড়ে ১২ বছর ধরে কলেজের অধ্যক্ষ পদে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে মহাপরিচালকের পদের জন্য অন্যতম দাবিদার বলে বলা হচ্ছে এ অধ্যাপককে। দাবিদারদের মধ্যে আরেক প্রভাবশালী অধ্যাপক হচ্ছেন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক অধ্যাপক মোঃ হামিদুল হক। সরকারের শীর্ষপর্যায়ে তার ভাল সম্পর্ক ও আওয়্মাী লীগের রাজনীতির সঙ্গে পরিবারের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকায় তাকেও ভাবা হচ্ছে পরবর্তী মহাপরিচালক। এ তালিকায় আছেন দিনাজপুর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ হোসেন, রাজধানীর সরকারী বাংলা কলেজের অধ্যাপক মোঃ ইমাম হোসেন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোয়েজ্জম হোসেন মোল্লা। এদিকে এ পদের জন্য লবিং করছেন মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান। দীর্ঘদিন এ প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় তার সম্ভাবনার কথাও বলছেন অনেকেই। তবে কেউ কেউ ধারণা করছেন, শিক্ষা ক্যাডারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনকে আরও একবার ওই পদে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। কারণ তিনি যেমন প্রশাসনিকভাবে অভিজ্ঞ তেমনি আছে পারিবারিক রাজনৈতিক প্রভাব। তিনি খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস ও বর্তমান এমপি র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীর সহধর্মিণী। যদিও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পক্ষ থেকেই বহুবার মহাপরিচালক পদে নিয়মিত শিক্ষকের বাইরে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করা হয়েছে।
×