ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মহিলা পরিষদের আলোচনা

এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৮ জুন ২০১৬

এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির বিকল্প নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৬-১৭ বাজেটে শতাংশিক হিসেবে জেন্ডার বরাদ্দ কমেছে, একইসঙ্গে নারীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ৬টি মন্ত্রণালয়েও জেন্ডার বাজেটে বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে। এসডিজির পঞ্চম গোল অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলে বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যাবৃদ্ধি করতে হবে, একই সঙ্গে নারীর দক্ষতা বৃদ্ধিও প্রয়োজন। সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন : জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই আলোচনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, এবছর শতাংশিক হিসেবে বাজেটে জেন্ডার বরাদ্দ কমেছে। বরাদ্দ বাড়ানোর ক্ষেত্রে নারী আন্দোলনের ভূমিকা থাকতে পারে। তবে বাজেট বাড়লেই তা কতটা ফলপ্রসূ হবে তাও মূল্যায়ন করতে হবে। আবার নারীর উন্নয়নে যেসব ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানো হয়েছে সেখানে কিন্তু নারীরাই এর ফল ভোগ করবে। এক্ষেত্রে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের ৫ম গোলের দিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এ বিষয়টিও তাদের ভাবতে হবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানমের সভাপতিত্বে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মী। মূল বক্তব্যে অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, বাজেটে সামাজিক ক্ষেত্রগুলোতে এবছর একধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। জেন্ডার বাজেটের উদ্দেশ্য নারীর উন্নয়ন নয়, নারী-পুরুষ উভয়ের উন্নয়নই এর মূল লক্ষ্য। বিপরীতে নারীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ৬টি মন্ত্রণালয়ে এবার জেন্ডার বাজেট কমেছে। জেন্ডার বাজেট নিয়ে কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জেন্ডার বাজেট নিয়ে আমাদের আরও বেশি বেশি কাজ করা উচিত। এক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় বাজেটে নারীর কি অবস্থা তাও আলোচনায় উঠে আসতে হবে। মহিলা পরিষদের কাজী সুফিয়া আখ্তারের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা ও বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর উন্নয়ন, লিঙ্গ বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন অনেক বেশি। অর্থাৎ নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বরাদ্দ পর্যপ্ত নয় এমনটা উল্লেখ করে বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্দির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এসডিজির পঞ্চম গোল অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলে নারীর জন্য আরও বেশি বরাদ্দের প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, বাংলাদেশের যে প্রেক্ষিতে আমরা ৮ শতাংশ জিডিপি অর্জন করতে চাচ্ছি তার জন্য নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বাজেটে বয়স্ক ভাতা, ল্যাকটেটিং মাদার ভাতাসহ কিছু ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এই বরাদ্দ আরও বাড়ানো কথা বলেন তিনি। বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, লেবার ফোর্সে নারীর অংশগ্রহণ বর্তমানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে। তবে নারীর ভূমিকা পরিবর্তন এবং সচেতনতা বাড়ানো জন্য বাজেটে একটি বড় বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। সভাপতির বক্তব্যে আয়শা খানম বলেন, জাতীয় বাজেটে নারীর বিষয়ে কিছু চিন্তা ভাবনা বা কৌশল রয়েছে এগুলো নারীর জন্য আসলে কতটা ইতিবাচক সেই প্রশ্ন থেকে যায়। নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার ইকুয়ালিটির বিষয়ে জেন্ডার বাজেটে নারী কতটুকু উপকৃত হয়েছে তা ভাবতে হবে। নারী আন্দোলন মনে করে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যাবৃদ্ধি ও দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন। এজন্য জাতীয় বাজেটে উত্তরোত্তর বরাদ্দ বৃদ্ধি দরকার।
×