ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্যহাতে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর মেসির

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৮ জুন ২০১৬

শূন্যহাতে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর মেসির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্লাব দল বার্সিলোনার জার্সি গায়ে সব সময়ই রেকর্ডের মধ্যে বসবাস লিওনেল মেসির। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ালেই কেমন যেন মিয়ম্রাণ হয়ে যান ফুটবলের ক্ষুদে এই জাদুকর। তার সব কারিকুরিই যেন ক্লাব ফুটবলে কাতালানদের হয়ে। যার নমুনা আরও একবার দেখিয়েছেন সোমবার। শতবর্ষী কোপা আমেরিকার ফাইনালে সেই চিলির কাছে আরেকবার হেরেছে আর্জেন্টিনা। ফলে টানা তিন বছর তিন ফাইনালে হারের বেদনায় পুড়তে হয়েছে আলবেসেলিস্তোদের। তিন আসরেই তীরে এসে দলের তরী ডুবতে দেখেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। আপ্রাণ চেষ্টা করেও একবারও দেশকে জেতাতে পারেননি স্বপ্নের ট্রফি। ফলে আর্জেন্টিনাও ২৩ বছরের শিরোপা করা ঘোচাতে পারেনি। চিলির কাছে হারের পর তাই আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি মেসি। কান্নাভেজা কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছেন, আর কখনও খেলবেন না আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ফুটবলের পাঠ চুকিয়ে দিলেন ২৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। মেসির আকস্মিক এই সিদ্ধান্তে হতবিহ্বল গোটা ফুটবলবিশ্ব। তার কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকরা কিছুতেই মানতে পারছে না অবসরের বিষয়টি। এই সিদ্ধান্তের কারণে শূন্য হাতেই জাতীয় দল থেকে বিদায়ঘণ্টা বাজল মেসির। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টানা তিনটি আসরের ফাইনালে হারা ছাড়াও মেসি ২০০৭ সালের কোপা আসরের ফাইনালেও হারের স্বাদ পেয়েছিলেন। সবমিলিয়ে চারবার ফাইনালে যেয়েও দেশকে জেতাতে পারেননি ট্রফি। অবসরের ঘোষণা দিয়ে হতাশ মেসি বলেন, আমার জন্য জাতীয় দল আজ থেকে শেষ হয়ে গেছে। যা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল আমি সবকিছুই করেছি। চার ফাইনালে খেলেছি কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো একটিতেও জিততে পারিনি। এটা আমার ও পুরো দলের জন্য অত্যন্ত কঠিন একটি মুহূর্ত। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আর্জেন্টিনার হয়ে আমার যাত্রা এখানেই শেষ। বার্সিলোনার হয়ে ভুড়ি ভুড়ি সাফল্য পেলেও আর্জেন্টিনার হয়ে কিছুই জিততে পারেননি মেসি। যে কারণে নিজ দেশের জনগণের কাছে অনেকবারই দুয়ো শুনতে হয়েছে তাকে। এবারের ফাইনালের আগেই যেমন দিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ট্রফি জিততে না পারলে মেসিরা যেন দেশে না ফেরে। অবশেষে সেটাই হয়েছে, আবারও ফাইনালে হেরেছে মেসির দল। আচমকা এমন ঘোষণার পর অনেকেই মেসিকে স্বার্থপর হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, বার্সাকে আরও সাফল্য দেয়ার লক্ষ্যেই জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। বিদায়বেলায় অনেক রকম সমালোচনাই শুনতে হবে, এটা জানেন মেসি। তবে এসব নিয়ে ভাবছেন না তিনি। বরং অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন নিজের ব্যর্থতা। এ প্রসঙ্গে মেসি বলেন, আবারও আকাশসমান হারের বেদনায় জর্জরিত হয়েছি। আমি নিজে টাইব্রেকার মিস করেছি, যেটা দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর্জেন্টিনার হয়ে একটি শিরোপা জিততে আমার সবটুকু সামর্থ্যই উজাড় করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না। সাফল্যটা হাতে ধরা দিল না। কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন? মেসি নিজেও কূল কিনারা পাচ্ছেন না। বলেন, এসব নিয়ে বিশ্লেষণের সময় এটা নয়। ড্রেসিংরুমে বসে আমার মনে হলো জাতীয় দলের হয়ে আর নয়। জাতীয় দলের হয়ে সাফল্য, শিরোপা জয়, এসব আমার জন্য নয়। আর্জেন্টাইন কোচ জেরার্ডো মার্টিনো মেসির অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে অধিনায়কের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, বার বার ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গের পরে একজন ফুটবলারের যে ধরনের মানসিক অনুভূতি হওয়ার কথা মেসিরও তাই হয়েছে। আবারও সেই পরাজয় যেকোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেই সহায়ক হবে। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই ফুটবলের সম্ভব-অসম্ভব অনেক অর্জনই নিজের করে নিয়েছেন মেসি। ক্লাব বার্সিলোনার হয়ে তার সাফল্য যে কোন ফুটবলারের জন্যই ঈর্ষণীয়। ফিফার বর্ষসেরা খেতাব ব্যালন ডি’অর জিতেছেন পাঁচবার। কিন্তু দেশের হয়ে ২০০৬ সাল থেকে তার প্রাপ্তির ঘর শূন্যই। ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিকের ফুটবলে স্বর্ণপদক ছাড়া আর্জেন্টিনার আকাশি-নীল জার্সিতে কখনই শেষ হাসিটা হাসতে পারেননি। ২০০৬ থেকে খেলেছেন টানা তিন বিশ্বকাপ। প্রথম দুইবার দলকে বিদায় নিতে দেখেছিলেন শেষ আট থেকে। অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড নিয়ে ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুললেও শেষটা হয় কান্নাভেজা। ২০০৭ থেকে খেলেছেন চার কোপা আমেরিকা। এর মধ্যে তিন তিনবার ফাইনাল মঞ্চে খেলেছেন। কিন্তু প্রাপ্তির ঘরটা শূন্যই থেকেছে। ২০০৫ সালে অভিষেকের পর আর্জেন্টিনার হয়ে ১১৩ ম্যাচ খেলেছেন মেসি। ৫৫ গোল করে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। আর্জেন্টিনার পক্ষে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডে ছাড়িয়ে গেছেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে। কিন্তু দেশকে একবারও জেতাতে পারেননি ট্রফি। সেই বেদনা নিয়েই নিজেকে আড়াল করলেন মেসি।
×