ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপ্লবী রহিমউল্লাহর আখ্যান ‘অলিখিত উপাখ্যান’

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ জুন ২০১৬

বিপ্লবী রহিমউল্লাহর আখ্যান ‘অলিখিত উপাখ্যান’

মনোয়ার হোসেন ॥ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক অনালোচিত চরিত্র রহিমউল্লাহ। সুন্দরবনের মোরেলগঞ্জ নামল স্থানে অত্যাচারী বেনিয়াদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন প্রতিরোধ। চাষিদের দিয়ে জোর করে জঙ্গল কেটে আবাদ করানোর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল তাঁর কণ্ঠস্বর। সেই প্রতিবাদের পরিণতিতে প্রাণ হারাতে হয় সাহসী প্রাণ এই বিপ্লবীকে। কথাসাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরির পাতায় লেখা হয়েছিল তার বীরত্বাগাথার কথা। সেখানে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে রিজিয়া রহমান লিখেছিলেন অলিখিত উপাখ্যান নামের উপন্যাস। আর উপন্যাসটিকে আশ্রয় করে ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি নতুন নাটক। নাট্যদল বাতিঘর নিয়ে আসছে তাদের দ্বিতীয় প্রযোজনা। অলিখিত উপাখ্যান নামের নাটকটিতে উঠে এসেছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অজানা এক দৃশ্যপট। অলিখিত উপাখ্যান উপন্যাসকে গবেষণার ভিত্তিতে নাট্যরূপ দিয়েছেন মুক্তনীল। নাট্যরূপ দেয়ার পাশাপাশি নাটকটির নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। গত নবেম্বর থেকে চলছে নাটকটির মহড়া। গত কয়েকদিন ধরে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ৩ নম্বর মহড়া কক্ষে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মহড়া। সর্বশেষ বাতিঘরের দিলু রোডের কার্যালয়ে সোমবারও নাটকের কলাকুশলীরা অংশ নিয়েছেন অনুশীলনে। এভাবেই এগিয়ে চলছে নাটকটি মঞ্চে আনার চূড়ান্ত প্রস্তুতি। আগামী ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হবে নাটকটির কারিগরি প্রদর্শনী। নাটকটির নির্দেশনা প্রসঙ্গে নির্দেশক মুক্তনীল জনকণ্ঠকে বলেন, অলিখিত উপাখ্যান উপন্যাসটি পড়ার পর মনে হয়েছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি যেন ঢাকা পড়ে আছে অন্ধকারে। ব্রিটিশ বেনিয়াদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন রহিমউল্লাহ। অথচ এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি কোথাও উঠে আসেনি। রহিমউল্লাকে নিয়ে তেমনভাবে কোন কাজ হয়নি। শোষক ও শোষিতের মাঝের অবস্থানে অবহেলিত রয়ে গেলেন এই বিপ্লবী চাষী। নীল বিদ্রোহের পর ওই ঘটনার মধ্যেও ছিল স্বাধীনতার বার্তা। কিন্তু কোন এক কারণে অজানা রয়ে গেছে দ্রোহের আগুনমাখা অনালোচিত অধ্যায়টি। অজানা সেই বীরত্বগাথাকে তুলে ধরতেই নাটকটি নির্দেশনা দেয়ার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মে। সুন্দরবনঘেঁষা বাগেরহাটের একটি অঞ্চলের নাম হচ্ছে মোরেলগঞ্জ। একসময় স্থানটির নাম ছিল সরালিয়া। ব্রিটিশ শাসনামলে সুন্দরবনের এই অংশটি ইজারা নেয় মার্গারেট মোরেল নামের অত্যাচারী এক ব্রিটিশ শোষক। পরবর্তীতে নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে জায়গাটির নাম পরিবর্তন করে দেন এই ব্রিটিশ শোষক। স্থানীয় এলাকাবাসীকে কৌশলে মামলা দিয়ে গহীন জঙ্গল কেটে আবাদি ভূমিতে পরিণত করা হয় অঞ্চলটিকে। জঙ্গল কেটে চাষ করতে কেউ অনিচ্ছা প্রকাশ করলে চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। আবার ফসল ফলাতে গিয়ে বাঘের খাবারে পরিণত হতো চাষিদের কেউ কেউ। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন সাহসী চাষী রহিমউল্লাহ। পরিণতিতে হত্যা করা হয় ব্রিটিশবিরোধী এই বিপ্লবী চাষীকে। মৃত্যুর আগে এই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন রহিমউল্লাহ। মোরেলগঞ্জে মার্গারেট এবং তার দুই ছেলে রবার্ট ও হেনরির চালিয়ে যাওয়া নির্যাতনের কথা লেখার অনুরোধ জানান। তবে বঙ্কিমচন্দ্র সে সময় ব্রিটিশ রাজের অধীন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিধায় এ বিষয়ে কিছু লিখতে পারেননি। পরবর্তীতে রহিমউল্লাহর মৃত্যু অনুতপ্ত করে বঙ্কিমকে। সেই অন্তর্দহন থেকেই ঘটনাটি আপন ডায়েরিতে তুলে ধরেন। প্রযোজনাটিতে রহিমউল্লাহ চরিত্রে রূপ দেবেন স্মরণ বিশ্বাস। এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন তারানা তাবাসসুম চেরি, মনিরুজ্জামান ফিরোজ, সাফিন আহম্মেদ, সাদ্দাম রহমান, পান্থ আফজাল, খাদিয়া ইউসুফ রিতা, সঞ্জয়, শিশির প্রমুখ।
×