ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেরপুরে নির্মিত বাইপাস সড়ক উদ্বোধনের আগেই বেহাল দশা ॥ টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের

প্রকাশিত: ০১:৩৪, ২৭ জুন ২০১৬

শেরপুরে নির্মিত বাইপাস সড়ক উদ্বোধনের আগেই বেহাল দশা ॥ টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর-ময়মনসিংহ ন্যাশনাল হাইওয়ের নকলা বাইপাস সড়কটি উদ্বোধনের আগেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। সড়কটির প্রায় ১০-১২টি জায়গা দেবে গিয়ে পানি জমে পিচ ওঠে গেছে এবং বড় বড় গর্তে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের কোন উপকারে আসছে না ওই বাইপাস সড়কটি। অন্যদিকে উদ্বোধনের আগেই সড়কটির ওই বেহাল দশার পরও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। জানা যায়, শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ২০০৯ সালে হাতে নেওয়া প্রকল্পের আওতায় ৭টি পৃথক গ্রুপে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় নকলা উপজেলার পাইস্কা গ্রাম থেকে গড়েরগাঁও হয়ে শেরপুর সদর উপজেলার তারাকান্দা বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই বাইপাস সড়কটি। এছাড়া ওই বাইপাস সড়কের পাইস্কা-গড়েরগাঁও থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক যুক্ত করা হয় নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে ময়মনসিংহ-ঢাকা ন্যাশনাল হাইওয়ের সঙ্গে। আর ওই বৃহৎ প্রকল্পের নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স নবারুন ট্রেডার্স নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি কালভার্ট, কিছু জমি অধিগ্রহণ এবং পাইস্কা গ্রামে একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স আক্রাম এন্টারপ্রাইজ। দেড় বছর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ব্রিজ নির্মাণসহ পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হয় ওই বাইপাস সড়কের কাজ। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও নকলা শহরের ওপর দিয়ে চাপ কমাতে ওই ৩ কিলোমিটার সড়কটির ওপর দিয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর এবং নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ও বালুবাহী ভারি যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এতে নানা অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মিত ওই সড়কের কোথাও দেবে গেছে, কোথাও ফেটে গেছে এবং কোথাও বা বিশাল অংশের সড়ক দেবে মাটি বের হয়ে কাদা ছড়িয়ে পড়েছে। ওই বাইপাসের গড়েরগাঁও মোড় থেকে পাইস্কা মোড় পর্যন্ত এখন সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে থাকে, পূর্ব লাভা গ্রামের মোড়ে প্রায় ৩০-৩৫ ফুট পর্যন্ত জায়গায় কোন পিচ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বিট বালুর স্থলে ভূমির সাধারণ মাটি দিয়ে মূল রাস্তার গর্ত ভরা হয়েছে এবং নিম্নমানের কাজের জন্য বাইপাস সেতুর ৩০ ফুট পর্যন্ত সড়কে পিচ দিয়ে ন্যূনতম ৫ বার সংস্কার করা হলেও ফাটল রোধ করা যায়নি। যে কারণে পিচ ওঠে গড়েরগাঁও-পাইস্কা সড়কটিতে এখন মাঝে-মধ্যেই খানা-খন্দক হয়ে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ওই অবস্থা চলতে থাকলে সহসাই পিচ ওঠে গিয়ে ফাটল পুরো রাস্তায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর তাহলে ঈদে ঘরমুখি মানুষের যাতায়াত দূর্ভোগসহ উদ্বোধনের আগেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়বে এমন আশংকাই এলাকাবাসীসহ অনেকে। শেরপুর সদরের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, জেলা শহরের চাপ কমাতে প্রস্তাবিত অষ্টমীতলা-কানাসাখোলা বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাদ দিয়ে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে স্থানীয় দলীয় সূত্র জানিয়েছে, কদিন আগে এলাকার সংসদ সদস্য, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সরকারের চলমান উন্নয়ন কাজের আওতায় ওই বাইপাস সড়ক পরিদর্শনে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ওই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপরও নড়েচড়ে উঠেনি কর্তৃপক্ষ। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা। ওই বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ও ওই সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম জানান, সড়ক নির্মাণে কোন অনিয়ম হয়নি। ২ বছর আগে জেলা সড়ক হিসেবে অনুমোদন নিয়ে নির্মিত হয় ৪শ মিলি থিকনেসের বাইপাস সড়কটি। কিন্তু ওই সড়কের ওপর দিয়ে ১৫-২০ টন ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী হলেও তা দিয়ে নাকুগাঁও স্থলবন্দর-নালিতাবাড়ী-ময়মনসিংহ ন্যাশনাল হাইওয়ে সড়কের ৩০-৪০ টন ভারী পাথর ও বালু ভর্তি ট্রাক চলাচল শুরু করে। এতে সড়কটির কোথাও কোথায়ও ফাঁটল দেখা দিয়েছে। তবে বাইপাস সড়কটি ন্যাশনাল হাইওয়ের উপযোগী করে নির্মাণ করা হলে অর্থাৎ ৭শ মিলি থিকনেস ধরা হলে এমনটি হতো না। এছাড়া বর্তমানে ন্যাশনাল হাইওয়ের নকলা পৌর এলকায় সূবর্ণখালী খালের উপর নির্মাণাধীন ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেই ওই বাইপাস সড়কের ওপর চাপ কমে আসবে। একই কথা জানিয়ে ওই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুতমা চাকমা সোমবার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সড়কটি রক্ষায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। যেন ওই সড়কে আর কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে না পারে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের উন্নয়নে দ্রুত পরিকল্পনা প্রণয়নসহ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
×