ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেবাচিমের বাতিল টেন্ডারের ১০ কোটি টাকার বিল জমা

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২৭ জুন ২০১৬

শেবাচিমের বাতিল টেন্ডারের ১০ কোটি টাকার বিল জমা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ বাতিল হওয়া টেন্ডারের প্রায় ১০ কোটি টাকার ভারী ও আইসিইউ যন্ত্রপাতির বিল বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে জমা দিয়েছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডাঃ শারফুজ্জামান রুবেল ও পরিচালক ডাঃ এসএম সিরাজুল ইসলাম প্রায় ১ বছর ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকা ভারী ও আইসিইউ যন্ত্রপাতি কাগুজে সার্ভে করে বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে রবিবার দুপুরে বিলটি জমা দিয়েছেন। সার্ভে কার্যক্রমে আইসিইউ এবং টেকনিক্যাল বিভাগের কোনো বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকতে রাজী না হওয়ায় শেষপর্যন্ত পরিচালক ও সার্ভে কমিটির প্রধান মিলে কথিত সার্ভে করে বেঙ্গল সাইন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি ও মার্কেন্টাইল ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে বিল জমা দিয়েছেন। সূত্রটি অভিযোগ করে জানান, দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরিচালক ও সার্ভে কমিটির প্রধান মোটা অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে কথিত সার্ভে এবং বিল প্রস্তুত করেছেন। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক (ডিসিএ) মোঃ রেফায়েত উল্লাহ বলেন, ২৬ জুন ছিল চলতি অর্থ বছরের বিল জমা দেয়ার শেষদিন। ওইদিন যে কেউ বিল জমা দিতেই পারে। তবে যথাযথ কাগজপত্র যাচাই বাছাই ছাড়া যেন কোনো বিলের অর্থ ছাড় দেয়া না হয় সে মর্মে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫২ ধরনের ভারী এবং আইসিইউ যন্ত্রপাতি ক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। অনুমোদন পাওয়ার আগেই তৎকালীন পরিচালক ডাঃ কামরুল হাসান সেলিম ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টাকার ভারী যন্ত্রপাতি এবং ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৭০ টাকার আইসিইউ যন্ত্রপাতি ক্রয়ের পৃথক দুটি টেন্ডার আহবান করেন। এসব টেন্ডার প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। সূত্রমতে, পদাধিকার বলে পরিচালক সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকার টেন্ডার আহবানের ক্ষমতা রাখলেও ডাঃ সেলিম নিয়ম বহির্ভূতভাবে একটিতেই প্রায় ১৩১ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করেন। ওই ঘটনার পরপরই তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করা হয়। তার স্থলে পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়া অধ্যাপক ডাঃ নিজামউদ্দিন ফারুকের কার্যকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত বছরের ২০ আগস্ট ওই টেন্ডার দুটি বাতিলের নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নিজামউদ্দিন ফারুক গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আহবানকৃত ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৬’শ টাকার ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের টেন্ডার এবং ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৭০ টাকার আইসিইউ যন্ত্রপাতি ক্রয়ের টেন্ডার বাতিল করেন। টেন্ডার বাতিলের পরেও বেঙ্গল সাইন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি এবং মার্কেন্টাইল ইন্টারন্যাশনাল নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শের-ই বাংলা মেডিক্যালে একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, আইসিইউ বিভাগের জন্য দুটি অটোক্লেপ, ১০টি আইসিইউ বেড এবং ২টি কালার ডুপ্লেক্স আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ ৯ কোটিরও বেশী টাকার ভারী এবং আইসিইউ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। তৎকালীন পরিচালক ওই মালামাল গ্রহণ না করায় হাসপাতালের মাঝ ব্লকে ফেলে রাখে ঠিকাদার। সূত্রমতে, কয়েক মাস আগে হাসপাতালের নতুন পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে ডাঃ এসএম সিরাজুল ইসলাম ঠিকাদারের ফেলে রাখা যন্ত্রপাতিগুলোর বৈধতা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তিনি এসব ভারী ও আইসিইউ যন্ত্রপাতি জরুরী বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি প্রেরণ করেন। ওই চিঠির সূত্র ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর একটি চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় এসব ভারী ও যন্ত্রপাতি ওয়ার্ডে স্থাপনের নির্দেশ দেন। কিন্তু স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশে যে টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে সেই বাতিল টেন্ডারের মালামাল কীভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর স্থাপনের অনুমতি দেয় এনিয়েও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এসএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে টেন্ডার বাতিল হয়েছিলো সেটা তিনি কিংবা স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর জানতেন না। তিনি আরও বলেন, গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে টেন্ডারের অনুমোদন এবং ব্যয় মঞ্জুরী দিয়েছিলো হাসপাতালের আগের পরিচালক সেটি অসাবধানতাবশত বাতিল করেছিলেন। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ওইসব যন্ত্রপাতি সার্ভে করে বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক অফিসে বিল জমা দেয়া হয়েছে।
×