ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অংশীদারি সংলাপ শেষে ঢাকায় ফিরে জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ ঠেকাতে ঢাকার পদক্ষেপে সন্তুষ্ট ওয়াশিংটন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৭ জুন ২০১৬

সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ ঠেকাতে ঢাকার পদক্ষেপে সন্তুষ্ট ওয়াশিংটন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সহযোগিতা জোরদার করবে ঢাকা-ওয়াশিংটন। জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ঢাকার নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। এছাড়া মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, ঢাকায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ইত্যাদি ইস্যুতে ঢাকার জোরালো অবস্থান চেয়েছে ওয়াশিংটন। ঢাকা-ওয়াশিংটন অংশীদারি সংলাপে এসব বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। শুক্র ও শনিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুই দিনব্যাপী ঢাকা-ওয়াশিংটন পঞ্চম অংশীদারি সংলাপ শেষ হয়েছে। সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। আর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি টমাস শ্যানন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন। এবারের সংলাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) উত্থানের পরে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ঝুঁকির বিষয়ে প্রাধান্য দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের নেয়া এসব পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চেয়েছে ওয়াশিংটন। ঢাকার পক্ষ থেকে বিভিন্ন টার্গেট কিলিং তদন্তের অগ্রগতি অবহিত করা হয়েছে ওয়াশিংটনকে। সংলাপে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদার, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে উভয়পক্ষ। সংলাপে সার্ক, বিসিআইএম, বিমসটেক, আসেমসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নিজেদের নাগরিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া ইউএসএআইডির কর্মী জুলহাস মান্নান হত্যার তদন্ত ও বিচারের বিষয়ে জোর দিয়েছে ওয়াশিংটন। অংশীদারি সংলাপের বিষয়ে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা আমরা দীর্ঘ দিন ধরে জানিয়ে আসছি। পররাষ্ট্র দফতরে অনুষ্ঠিত সংলাপে এসব উদ্বেগ আরও পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে। সংলাপের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পরিণত হয়েছে। এটি সাহায্যনির্ভর সম্পর্ক থেকে কৌশলগত সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের মূল্যবোধকে সঙ্গে করে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চায় বলে উল্লেখ করেন শহীদুল হক। সংলাপ শেষে টমাস শ্যানন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চায় ওয়াশিংটন। সূত্র জানায়, প্রথম দিনের সংলাপে নিরাপত্তা সহযোগিতা, উন্নয়ন ও সুশাসন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে তিনটি ওয়ার্কিং গ্রুপে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দুই দেশ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা দমনে সহযোগিতা বাড়াতে ঐকমত্য পোষণ করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের তিন দশকের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের কৃষি, শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বিদ্যমান ও নতুন ক্ষেত্রগুলোয় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপর উভয়পক্ষ গুরুত্বারোপ করেছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের আরও উৎসাহিত করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছে উভয়পক্ষ। বাংলাদেশের আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সমুদ্র অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা দেয়ার আগ্রহের কথা জানায়। সংলাপ ছাড়াও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক মার্কিন সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান সি রিচার্ড, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাতসেবা ক্রোকার, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী টম ম্যালিসোস্কি, প্রেসিডেন্ট ওবামার বিশেষ সহকারী পিটার ল্যাভয় ও পররাষ্ট্র দফতরের চীফ অব স্টাফ জোনাথন ফিনার। অংশীদারি সংলাপ শেষে রবিবার ঢাকায় ফিরেছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। নিরাপত্তা সহযোগিতা, উন্নয়ন ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ বিশদ দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয়াদি আরও বিস্তৃত পরিসরে ও গভীরভাবে আলোচনার জন্য অংশীদারি সংলাপ দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এই ফোরামের মাধ্যমেই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত হচ্ছে। গত বছর ৩০ এপ্রিল ও পহেলা মে ঢাকায় চতুর্থ অংশীদারি সংলাপ হয়েছিল। এতে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান এবং সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় অংশীদারি সংলাপ ২০১৪ সালের ২৮-২৯ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ওই সংলাপে অংশ নেন। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় অংশীদারি সংলাপ ২০১৩ সালের ২৬ ও ২৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অংশ নেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সহকারী সচিব ওয়েন্ডি শারম্যান। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম সংলাপ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরে অংশীদারি সংলাপের বিষয়ে এক চুক্তি সই হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর একবার ঢাকা পরের বার ওয়াশিংটনে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। সে অনুযায়ী আগামী বছর ঢাকায় ষষ্ঠ অংশীদারি সংলাপ হবে।
×